বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট

বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ চা বোর্ডের অধীন একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর চা শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তির প্রাপ্যতা ছিল অত্যন্ত সীমিত। চায়ের আবাদ ও উৎপাদনে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান এবং উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত এই শিল্পকে সঠিক বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে পরিচালনার জন্য তৎকালীন পাকিস্তান চা বোর্ড ১৯৫২ সালে সম্পূর্ণ নিজস্ব একটি চা গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে শ্রীমঙ্গলের বর্তমান অবস্থানে ১৯৫৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান চা গবেষণা স্টেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতার পর গবেষণা স্টেশনটি ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট পর্যায়ে উন্নীত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট দেশের ১০টি জাতীয় কৃষি গবেষণা ব্যবস্থা-র অন্যতম প্রতিষ্ঠান। এটি শ্রীমঙ্গল শহর থেকে ৩.২ কিমি দূরে অবস্থিত এবং প্রতিষ্ঠানটির তিনটি সাবস্টেশনের একটি মৌলভীবাজারের কালিতিতে, একটি সিলেট শহরে এবং অন্যটি চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে অবস্থিত।

এই ইসস্টিটিউটের টেকনিক্যাল ও প্রশাসনিক প্রধান হলেন পরিচালক। প্রধান বা মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাগণ গবেষণা বিভাগগুলির প্রধান হিসেবে পরিচালককে গবেষণা কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়নে এবং চা বাগানগুলি পরিচালনায় প্রয়োজনীয় পরামর্শসেবা প্রদান করেন।

প্রতিষ্ঠানের তিনটি প্রধান গবেষণা অনুষদে রয়েছে ৬টি বিভাগ। রসায়ন অনুষদে আছে মৃত্তিকা রসায়ন ও প্রাণরসায়ন বিভাগ; শস্য উৎপাদন অনুষদে আছে উদ্ভিদবিদ্যা ও কৃষিতত্ত্ব এবং কীটতত্ত্ব ব্যবস্থাপনা অনুষদে আছে কীটতত্ত্ব ও উদ্ভিদরোগতত্ত্ব বিভাগ। প্রতিষ্ঠানের আরও দুটি গবেষণা বিভাগ হলো চা-প্রযুক্তি ও পরিসংখ্যান-অর্থনীতি। বিভিন্ন শাখায় বর্তমানে ২১ জন (৩৫টি অনুমোদিত পদের মধ্যে) বিজ্ঞানী গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। অন্যান্য কয়েকটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গেও এই ইনস্টিটিউটের সহযোগিতামূলক কার্যক্রম চালু রয়েছে।

ইনস্টিটিউট চা উৎপাদন-সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তিগত তথ্য ও উদ্ভাবন নিয়মিতভাবে নিজস্ব প্রকাশনা Tea Journal of Bangladesh, বার্ষিক প্রতিবেদন, বিজ্ঞপ্তি ও পুস্তিকার মাধ্যমে প্রচার করে। ব্যবস্থাপকমন্ডলীর জন্য বার্ষিক শিক্ষা কার্যক্রম, কর্মশালা, সেমিনার ও দলগতভাবে চা-পরীক্ষণ কার্যক্রম বছরের বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত হয়। ইনস্টিটিউটের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো চায়ের উচ্চফলনশীল ও উন্নতমানের ক্লোন উৎপাদন, দুই ও বহু ক্লোনাল Seedbank (বীজ সংগ্রহের জন্য চা গাছের সংগ্রহ) প্রতিষ্ঠা; এবং চায়ের জার্মপ্লাজম (germplasm) সংরক্ষণ, এবং বাণিজ্যিকভাবে সস্তা ও সহজলভ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে নার্সারিতে চায়ের কলম উৎপাদন।

বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের উল্লেখযোগ্য অবদানের মধ্যে রয়েছে চায়ের ১৩টি উচ্চফলনশীল ও মানসম্পন্ন ক্লোন BT1, BT2, BT3, BT4, BT5, BT6, BT7, BT8, BT9, BT10, BT11, BT12, BT13 উদ্ভাবন; ৩টি বাইক্লোনাল এবং একটি পোলিক্লোনাল বীজভান্ডার তৈরি; অধিক উৎপাদনের জন্য প্রতি ইউনিটে গাছসংখ্যা প্রমিতকরণ; উন্নতমানের চা প্রসেসিং কৃৎকৌশল; চায়ের গুণগতমান অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য চা পরীক্ষার পরিসর প্রমিতকরণ।

বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিলাসছড়ার পরীক্ষামূলক খামার (BEF) একটি আদর্শ চা বাগান হিসেবে দেশে প্রতি হেক্টরে সর্বোচ্চ পরিমাণ চা উৎপাদন করে। ১৯৯৮ সালে এই বাগানে হেক্টর প্রতি ২,৬৪৮ কেজি চা উৎপন্ন হয়েছে, যখন বাংলাদেশের গড় জাতীয় উৎপাদন ছিল প্রতি হেক্টরে ১,১৪৯ কেজি।  [এ.এফ.এম বদরুল আলম এবং মাইনউদ্দীন আহমেদ]