বসু, মানকুমারী

মানকুমারী বসু

বসু, মানকুমারী (১৮৬৩-১৯৪৩) কবি ও গল্পকার। ১৮৬৩ সালের ২৩ জানুয়ারি যশোর জেলার শ্রীধরপুর গ্রামে মাতুলালয়ে তাঁর জন্ম। আনন্দমোহন দত্ত তাঁর পিতা এবং  মাইকেল মধুসূদন দত্ত ছিলেন সম্পর্কে তাঁর পিতৃব্য। তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল যশোরের সাগরদাঁড়িতে। ১৮৭৩ সালে বিবুধশঙ্কর বসুর সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয় এবং মাত্র নয় বছর পরে ১৮৮২ সালে একমাত্র কন্যাসন্তান নিয়ে তিনি বিধবা হন।

মানকুমারী পারিবারিক ঐতিহ্যসূত্রেই সাহিত্যসাধনায় প্রয়াসী হন। অমিত্রাক্ষর ছন্দে রচিত ও সংবাদ প্রভাকরে প্রকাশিত তাঁর প্রথম কবিতা ‘পুরন্দরের প্রতি ইন্দুবালা’। এর বিষয় ও আঙ্গিকে মধুসূদনের স্পষ্ট প্রভাব রয়েছে। কাব্য কুসুমাঞ্জলি (১৮৯৩), কনকাঞ্জলি (১৮৯৬), বীরকুমারবধ কাব্য (১৯০৪) ইত্যাদি তাঁর কাব্যগ্রন্থ। প্রকৃতি, সমাজ, ইতিহাস ও জাতীয়তা তাঁর কবিতার উপজীব্য। প্রিয় প্রসঙ্গ বা হারানো প্রণয় (১৮৮৪) তাঁর স্বামীর মৃত্যুতে গদ্যেপদ্যে রচিত বিয়োগ-বেদনা ও করুণরসের একখানি উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ।

মানকুমারী গল্প ও প্রবন্ধ রচনাতেও সিদ্ধহস্ত ছিলেন। পুরাতন ছবি (১৯৩৬) তাঁর  ছোটগল্প এবং বাঙ্গালী রমণীদের গৃহধর্ম (১৮৯০) ও বিবাহিতা স্ত্রীলোকের কর্তব্য প্রবন্ধ-পুস্তক। স্ত্রীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা এবং সমাজের দুর্নীতি ও কুসংস্কার দূরীকরণের ওপর রচিত তাঁর বেশ কিছু প্রবন্ধ খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল।

মানকুমারী বামাবোধিনী পত্রিকার লেখিকা-শ্রেণিভুক্ত ছিলেন। তিনি ‘রাজলক্ষ্মী’, ‘অদৃষ্ট-চক্র’ এবং ‘শোভা’ গল্প লিখে ‘কুন্তলীন পুরস্কার’ পান এবং সামগ্রিক সাহিত্যকৃতির জন্য ভারত সরকারের বৃত্তি (১৯১৯) লাভ করেন।  কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ‘ভুবনমোহিনী স্বর্ণপদক’ (১৯৩৯) ও ‘জগত্তারিণী স্বর্ণপদক (১৯৪১) দ্বারা পুরস্কৃত করে। মানকুমারী ১৯৩৭ সালে চন্দননগরে অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মেলনের ‘কাব্যসাহিত্য’ শাখার সভানেত্রী ছিলেন। ১৯৪৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়।  [ওয়াকিল আহমদ]