ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি

ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) বাংলাদেশের শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতিনিধিত্বকারী শীর্ষ সংগঠন। ট্রেড অর্গানাইজেশন অর্ডিন্যান্স ১৯৬১ (১৯৯৪ সালে সংশোধিত) এবং কোম্পানি আইন ১৯১৩ (১৯৯৪ সালে সংশোধিত)-এর অধীনে ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত। ফেডারেশনের তিন ধরনের সদস্য রয়েছে ‘চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’ (এ ও বি শ্রেণীর চেম্বার), ‘শিল্প ও বণিক সমিতিসমূহ’ (এ ও বি শ্রেণীর সমিতি) এবং ‘যৌথ চেম্বার’ (বিদেশী কোম্পানিসমূহের সাথে গঠিত)। বর্তমানে এফবিসিসিআই-এর সদস্য সংখ্যা ৫০৮ এর মধ্যে ৮৬ জন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এ শ্রেণীর ৭২ বি শ্রেণীর ১৪), ৪০২ জন শিল্প ও বণিক সমিতিসমূহের (এ শ্রেণীর ৩৯৭ বি শ্রেণীর ৫) এবং অবশিষ্ট ২০ জন বিদেশী যৌথ চেম্বারের প্রতিনিধি। চেম্বার এবং সমিতিসমূহের সদস্যদের সরাসরি ভোটে ৭১ সদস্যবিশিষ্ট একটি নির্বাহী কমিটি বা পরিচালনা পর্ষদ ২ বৎসরের জন্য নির্বাচিত হয়। এই কমিটি/পর্ষদ এফবিসিসিআই-এর সকল কার্যক্রম পরিচালনা করে। দুই প্রক্রিয়ায় এফবিসিসিআই-এর নির্বাহী কমিটির নির্বাচন সম্পন্ন হয়। কমিটির ৭১ জন সদস্যের মধ্যে সভাপতি, সিনিয়র সহ সভাপতি, ৬ সহ-সভাপতি এবং ৩০ জন সদস্য নির্বাচিত হয় চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সদস্যগণের ভোটে। অপর ২৩ জন সদস্য নির্বাচিত হয় শিল্প ও বণিক সমিতিসমূহের সদস্যদের ভোটে। এফবিসিসিআইয়ের ৫৪টি স্ট্যান্ডিং কমিটি রয়েছে যেগুলি বিনিয়োগ ও শিল্প-বাণিজ্য বিষয়ে পরিচালনা পর্ষদকে পরামর্শ ও তথ্য প্রদান করে।

এফবিসিসিআই মনোগ্রাম

সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাসমূহে ১০৫টি স্থায়ী কমিটির মাধ্যমে এফবিসিসিআই বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিত্ব করে। সরকার গঠিত বিভিন্ন কমিটি এবং টাস্কফোর্স-এ এফবিসিসিআই প্রতিনিধি প্রেরণ করে। ফেডারেশন সরকারের বিভিন্ন উপদেষ্টা কমিটিতে অংশগ্রহণ করে দেশের বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ ও শিল্প-বাণিজ্যে সহায়তা করে। সরকারের বিভিন্ন নীতি নির্ধারণী ফোরামে গঠনমূূলক পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে এফবিসিসিআই জাতীয় অর্থনীতির অগ্রগতিতে অবদান রাখে। শিল্প-বাণিজ্য এবং বিপণন ব্যবস্থার উন্নয়নে টেকনিক্যাল স্টাডি ও গবেষণা কার্যক্রম গ্রহণ করে এবং বিভিন্ন প্রকার পারিসংখ্যানিক তথ্য সংগ্রহ করে এফবিসিসিআই। ফেডারেশন দেশের শিল্প ও বাণিজ্যে দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকার প্রশিক্ষণ কোর্স ও সেমিনার আয়োজন করে এবং শিল্প ও বাণিজ্যের সমস্যাবলি সমাধানে গঠনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

এফবিসিসিআই দেশব্যাপী চেম্বার ও সমিতিসমূহ গঠনে সহায়তা প্রদান করে এবং বাংলাদেশে বিনিয়োগ, শিল্প-বাণিজ্য, কৃষি, পর্যটন, মানবসম্পদ এবং যোগাযোগসহ অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভুমিকা পালন করে। ফেডারেশন অভিন্ন স্বার্থের প্রশ্নে দেশের শিল্প, বাণিজ্য ও বণিক সমিতিসমূহের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলে। এফবিসিসিআই শিল্প ও বাণিজ্য মেলা আয়োজনে দেশের বিভিন্ন বণিক সমিতির সঙ্গে কাজ করে।

এফবিসিসিআই আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ফোরামের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের শিল্প-বাণিজ্য বিষয়ক প্রতিষ্ঠানসমূহের সাথে বহির্বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপনে ভুমিকা পালন করে। বিদেশী বিনিয়োগ ও যৌথ বিনিয়োগ সহযোগী নির্বাচনে কাজ করে এফবিসিসিআই। দেশের শিল্প ও বাণিজ্য স্বার্থ সংরক্ষণে এফবিসিসিআই সদস্য হিসেবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনসমূহের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে। এই সকল আন্তর্জাতিক সংগঠন হলো এফবিসিসিআই ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি), ইসলামিক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (আইসিসিআই), কনফেডারেশন অব এশিয়া-প্যাসিফিক চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (সিএসিসিআই) এবং সার্ক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এসসিসিআই)। বর্তমানে এফ বিসিসিআই বিসিআই এম ( বাংলাদেশ চায়না ইন্ডিয়া মায়ানমার) বিজনেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান।

এফবিসিসিআই বিভিন্ন দেশের জাতীয় বাণিজ্য সংস্থাসমূহের সঙ্গে যৌথ চেম্বার/সহযোগিতা চুক্তি করেছে। এই দেশগুলি হলো অস্ট্রেলিয়া, বেলারুস, বেলজিয়াম, ভুটান, ব্রাজিল, কম্বোডিয়া, কানাডা, চায়না, চেক রিপাবলিক, ফিনল্যন্ড, ফ্রান্স, জর্জিয়া, জার্মানী, হংকং, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইতালি, জাপান, কাতার, কোরিয়া, কুয়েত , তুরস্ক, মালয়েশিয়া, মরক্কো, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, মিশর, নেপাল, নেদারল্যান্ডস, ওমান, পাকিস্তান, পেরু, ফিলিপিন্স, ভিয়েতনাম, রাশিয়া, রোমানিয়া, সৌদি আরব, সিংগাপুর, শ্রীলঙ্কা, সিরিয়া, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও উজবেকিস্তান। এছাড়া এফবিসিসিআই আরব দেশসমূহের জেনারেল ইউনিয়ন অব চেম্বার্স অব কমার্স, ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যান্ড এগ্রিকালচার এবং ৪৮টি দেশের জাতীয় চেম্বারের সঙ্গে ফেডারেশন-এর সহযোগিতা চুক্তি রয়েছে। কর্নাটক ও মিজোরাম চেম্বার আব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, চীনের কুনমিং চেম্বার ও সিংগাপুরস্থ চীনা চেম্বারের সাথে এফবিসিসিআই সম্পর্ক স্থাপন করেছে। ভারতের কেন্দ্রীয় চেম্বারের মধ্যস্থতায় বাংলাদেশ ভারত ব্যবসা সংসদ এবং অনুরূপভাবে বাংলাদেশ আমেরিকা ব্যবসা সংসদের সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে এফবিসিসিআই। [মোহাম্মদ আবদুল মজিদ]