ফুলগাজী উপজেলা

ফুলগাজী উপজেলা (ফেনী জেলা)  আয়তন: ১০২.১৯ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°০২´ থেকে ২৪°১০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°২৩´ থেকে ৯১°৩১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে পরশুরাম উপজেলা, দক্ষিণে ফেনী সদর ও ছাগলনাইয়া উপজেলা, পূর্ব ও পশ্চিমে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য।

জনসংখ্যা ১১৯৫৫৮; পুরুষ ৫৯৪৯৭, মহিলা ৬০০৬১। মুসলিম ১১০৩৫৬, হিন্দু ৯১৯৭, খ্রিস্টান ৪ এবং অন্যান্য ১।

জলাশয় প্রধান নদী: মুহুরী, সিলোনিয়া ও কহুয়া।

প্রশাসন থানা গঠিত হয় ১৯৭৫ সালে এবং ২০০২ সালের ২৭ মার্চ থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ৭৭ ৮৫ ৪৪৫৩ ১১৫১০৫ ১১৭০ ৫৬.৫ ৬০.১
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১.৯২ ৪৪৫৩ ২৩১৯ ৫৬.৫
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আনন্দপুর ২৭ ২৭৯২ ৬৪৬২ ৭১৩৩ ৫৭.৭
আমজাদহাট ১৩ ৫৯১৪ ৯৮৯৭ ১১৬১৪ ৫৪.১
জি এম হাট ৭৪ ৩০২৭ ৬০৭৪ ৬৫৯৬ ৬২.৭
দরবারপুর ৫৪ ২৭৭৪ ৯০৩৮ ৮৪০৯ ৬৩.৮
ফুলগাজী ৬৭ ৬৩৯৮ ১৬৪৭০ ১৫৫৭৫ ৬০.৩
মুন্সীরহাট ৮১ ৪৩৪৭ ১১৫৫৬ ১০৭৩৪ ৬১.৯

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ শ্রীপুর জামে মসজিদ, পূর্ণ রায় চৌধুরী মন্দির, গাইন বাড়ির মন্দির, দুর্গা মন্দির।

মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের সময় ফুলগাজী উপজেলা ২ নং সেক্টরের অধীন ছিল। ১৯৭১ সালের ১০ জুন বন্দুয়া সেতু পার হতে গিয়ে ৫০ জন পাকসেনা মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে নিহত হয়। ৬ ডিসেম্বর ফুলগাজী শত্রুমুক্ত হয়। উপজেলায় ১টি বধ্যভূমি এবং ৫টি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে।

বিস্তারিত দেখুন ফুলগাজী উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৬।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২৮৬, মন্দির ৭।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৬০.০%; পুরুষ ৬২.০%, মহিলা ৫৮.১%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: ফুলগাজী সরকারি কলেজ (১৯৭২), খালেদা জিয়া মহিলা কলেজ (১৯৯৫), মুন্সিরহাট আলী আজ্জম উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৬), জি এম হাট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৬), ফুলগাজী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৯), ফুলগাজী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৭২), আজমেরী বেগম উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় (১৯৭৯), দক্ষিণ বাসুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯০৪), ফুলগাজী আলিয়া মাদ্রাসা।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৬, ক্লাব ৩৭, সিনেমা হল ১, খেলার মাঠ ৮।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫৫.৪৭%, অকৃষি শ্রমিক ২.৯২%, শিল্প ২.২১%, ব্যবসা ১২.৭৪%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.০১%, চাকরি ১১.৩৯%, নির্মাণ ১.৬৭%, ধর্মীয় সেবা ০.২২%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ২.৫৫% এবং অন্যান্য ৭.৮২%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬৪.৭৯%, ভূমিহীন ৩৫.২১%। শহরে ৫৩% এবং গ্রামে ৬৫.৬৯% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, পাট, আলু, আখ, মরিচ, শাকসবজি।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, কলা, লিচু, পেঁপে।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার এ উপজেলায় মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৬১.৭৫ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১৭.১৯ কিমি, কাঁচারাস্তা ২৩১.৫৯ কিমি; রেলপথ ১৪ কিমি; নৌপথ ৫০ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়া ও গরুর গাড়ি।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, তাঁতশিল্প লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, দারুশিল্প, সেলাই কাজ, বাঁশের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১৪, মেলা ২। জি এম হাট, দরবারপুর কালীবাজার, মুন্সীরহাট, মুন্সীরহাট নতুন বাজার, ফুলগাজী বাজার, আনন্দপুর বাজার উল্লেখযোগ্য।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৭৭.৮% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৩.৮%, ট্যাপ ১.৯% এবং অন্যান্য ৪.৩%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৭৮.৩% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২০.৭% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১.০% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৩, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৪, কমিউনিটি ক্লিনিক ৯, পল্লিচিকিৎসা কেন্দ্র ৩, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৫, কমিউনিটি ক্লিনিক ৯।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৯৮ সালের বন্যায় এ উপজেলার ঘরবাড়ি, গবাদিপশু, ফসল ও অন্যান্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

এনজিও ব্র্যাক, আশা।  [দিলদার হোসেন]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; ফুলগাজী উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।