ফরিদগঞ্জ উপজেলা

ফরিদগঞ্জ উপজেলা (চাঁদপুর জেলা)  আয়তন: ২৩২.২২ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°০৩´ থেকে ২৩°১৪´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৪১´ থেকে ৯০°৫৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে চাঁদপুর সদর ও হাজীগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণে রায়পুর উপজেলা, পূর্বে রামগঞ্জ উপজেলা, পশ্চিমে হাইমচর ও চাঁদপুর সদর উপজেলা।

জনসংখ্যা ৩৯৬৬৮৩; পুরুষ ১৮২৩৬০, মহিলা ২১৪৩২৩। মুসলিম ৩৭৭৮৮৬, হিন্দু ১৮৬৩০, বৌদ্ধ ৫, খ্রিস্টান ৭৩ এবং অন্যান্য ৮৯।

জলাশয় ডাকাতিয়া নদী ও গোপ্তির বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন ফরিদগঞ্জ থানা গঠিত হয় ৭ অক্টোবর ১৯১৮ সালে। বর্তমানে এটি উপজেলা।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১৫ ১৬১ ১৬১ ৩৫০৯০ ৩৬১৫৯৩ ১৭০৮ ৬০.১ ৫৭.৯
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৯.৬৯ ২১ ৩৫০৯০ ১৭৮২ ৬০.১
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
উত্তর গোবিন্দপুর ৪১ ৩৮২৮ ১১১৬৯ ১৩৪১৭ ৫২.২
উত্তর পাইকপাড়া ৬৫ ৩৯৩৩ ১১৩২২ ১৪০২৯ ৬৪.৩
উত্তর রূপসা ৭৭ ৪০০৪ ১৩২৩৭ ১৫৬৩১ ৬০.৩
দক্ষিণ গোবিন্দপুর ৪৭ ২৮৯৪ ১১৯৩৬ ১৪২৬৯ ৫৩.২
দক্ষিণ পাইকপাড়া ৭১ ৩১১৫ ১১১৯৮ ১৩৪৫২ ৬১.০
দক্ষিণ ফরিদগঞ্জ ৩৫ ৩৯৮৬ ৯২৫৪ ১১০৫২ ৫৪.৭
দক্ষিণ রূপসা ৮৩ ২৮৫৮ ১০৩৪০ ১২১৮৩ ৬০.৭
পশ্চিম গুপ্তি ৫৯ ২৬৬৯ ৯৭১৯ ১১৫৯১ ৬৫.৫
পূর্ব গুপ্তি ৫৩ ৩৫৭১ ১০৪৫৭ ১২০৮৩ ৫৭.৮
পশ্চিম চরদুখিয়া ২৩ ২৭৭৮ ৯১৪৪ ১১৩৮৫ ৫১.৬
পূর্ব চরদুখিয়া ১৭ ৪০৪১ ১১২৯০ ১৩৭৩৪ ৫২.১
পশ্চিম বালুথুবা ১১ ৪১০৭ ১১৮৭৭ ১২৮১৬ ৫৪.৫
পূর্ব বালুথুবা ১৩ ৩৯৬৯ ১২৬৭৯ ১৫১০১ ৫৯.৭
পশ্চিম সুবিদপুর ৯৫ ৩৫৬০ ১১০৯১ ১২৪১৩ ৫৯.৯
পূর্ব সুবিদপুর ৮৯ ৩৯৬৫ ১১০২১ ১২৭০৩ ৬০.১

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ সাহেবগঞ্জের নীলকুঠি, লোহাগড়া মঠ, রূপসা জমিদার বাড়ি, রূপসা মসজিদ।

মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের সময় উপজেলার কামালপুর, বাদারা বাজারা, পাইকপাড়া, রূপসী বাজার, গাজীপুর প্রভৃতি স্থানে পাকবাহিনীর সাথে সংঘটিত খ-যুদ্ধে ৬৪ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং পাকবাহিনী স্থানীয় অনেক সাধারণ লোককে নির্মমভাবে হত্যা করে। ১৪ ডিসেম্বর ফরিদগঞ্জ শত্রুমুক্ত হয়। উপজেলায় ১টি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে ১টি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন ফরিদগঞ্জ উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৬।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৫৭৫, মন্দির ১১, গির্জা ১, মঠ ১।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫৮.১%; পুরুষ ৫৬.৬%, মহিলা ৫৯.৩%। কলেজ ৮, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪৭, প্রাথমিক বিদ্যালয় ২৫২, কমিউনিটি বিদ্যালয় ১৩, মাদ্রাসা ২৩৭। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: ফরিদগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ (১৯৭০), চান্দ্রা ইমাম আলী কলেজ (১৯৯৪), গল্লাক আদর্শ কলেজ (১৯৯৪), গৃহকালিন্দিয়া হাজেরা হাসমত ডিগ্রি কলেজ (১৯৯৫), বড়গাঁও উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৯), চান্দ্রা ইমাম আলী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৮), গৃহকালিন্দিয়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৬), পাইকপাড়া ইউ জি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৩), বাসারা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৬), রূপসা আহম্মদিয়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৩), কাওনিয়া শহীদ হাবিবউল্লা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৬), হাঁসা ফাজিল মাদ্রাসা (১৯০২)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী ফরিদগঞ্জ বার্তা, পল্লী কাহিনী।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান  লাইব্রেরি ৪, ক্লাব ৪৮, সিনেমা হল ১, মহিলা সংগঠন ১।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৪২.৯০%, অকৃষি শ্রমিক ২.৬৪%, শিল্প ০.৮৬%, ব্যবসা ১৫.২৪%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৬৩%, চাকরি ১৩.৮০%, নির্মাণ ৩.৫০%, ধর্মীয় সেবা ০.৪৩%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৫.৩৯% অন্যান্য ১২.৬১%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬০.৭৮%, ভূমিহীন ৩৯.২২%। শহরে ৩৩.৬৩% এবং গ্রামে ৬১.৩০% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, আলু, আখ, পান।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিল, তিসি, কাউন, সরিষা, খেসারি ডাল।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, নারিকেল, কলা, সুপারি।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ১৯, গবাদিপশু ৭১, হাঁস-মুরগি ১৩৪।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ২৬৩ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৩ কিমি, কাঁচারাস্তা ৮২২ কিমি; নৌপথ ৭০ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরু ও ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা ধানকল, বরফকল, আইসক্রিম ফ্যাক্টরি, ওয়েল্ডিং কারখানা।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, দারুশিল্প, সূচিশিল্প, বাঁশের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৪৫, মেলা ৬। রূপসা হাট, গল্লাক হাট, গৃদকালিন্দিয়া হাট, চান্দ্রা হাট এবং বৈশাখী মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  আখ, পান, আলু।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৪৯.৪% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয় জলের উৎস নলকূপ ৯৪.২%, ট্যাপ ০.৭% এবং অন্যান্য ৫.১%। এ উপজেলার অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৮১.৮% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ১৬.৫% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১.৭% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ১১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ১, মাতৃমঙ্গল কেন্দ্র ১।

এনজিও আশা, প্রশিকা, ব্র্যাক, বিআরডিবি, মহিলা উন্নয়ন সংস্থা।  [মোসাম্মৎ রহিমা বেগম]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; ফরিদগঞ্জ উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।