প্রশাসন সমন্বয়
প্রশাসন সমন্বয় সরকারের এক বা একাধিক সংস্থার বিভিন্ন অংশের মধ্যে সংযোগ ও সমন্বয় সাধন। সমন্বয় হতে পারে একই সংস্থার অভ্যন্তরে অথবা আন্তঃসংস্থা ভিত্তিক। একই সংস্থা ভিত্তিক সমন্বয় হলো একই সাধারণ লক্ষ অর্জনের জন্য একই সংস্থার বিভিন্ন অংশের সংযোগ, আর অন্যদিকে আন্তঃসংস্থাভিত্তিক সমন্বয় হলো দুই বা তদোধিক সংস্থার মধ্যকার সংযোগ। বাংলাদেশে লোক প্রশাসন প্রথাগতভাবে সচিবালয় ও মাঠ প্রশাসন এ দু’ভাগে বিভক্ত। একজন মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রণালয় ও বিভাগ নিয়ে সচিবালয় গঠিত। আবার একটি মন্ত্রণালয় এক বা একাধিক বিভাগ নিয়েও গঠিত হতে পারে। প্রধান দলিল হিসেবেকার্যবিধি দ্বারা বিভিন্ন পন্থায় সচিবালয়ে সমন্বয় কার্যকর করা হয়।
অনেক ইস্যু প্রসঙ্গে আন্তঃমন্ত্রণালয় ভিত্তিক পরামর্শ প্রক্রিয়া কার্যবিধিতে দেয়া থাকে যাতে মন্ত্রিসভা বা প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন প্রয়োজন। বিশেষায়িত বিষয় প্রসঙ্গে কিছুসংখ্যক কেবিনেট কমিটি রয়েছে যার মাধ্যমে সমন্বয় নিশ্চিত করা হয়। বস্ত্তত রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সমন্বয় কেবিনেটের মাধ্যমে কার্যকর করা হয়; তাতে আন্তঃমন্ত্রণালয় ভিত্তিক সমন্বয় ব্যতীত কোন প্রস্তাব উত্থাপন করা হয় না। অর্থনৈতিক বিষয়বস্ত্ত সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন প্রকল্প ও ইস্যু প্রসঙ্গে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ এবং জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ নির্বাহী কমিটি রয়েছে। এ দুটি কমিটির প্রধান হলেন প্রধানমন্ত্রী।
তাছাড়া, কার্য পরিচালনা বিধির ১ নং তপসিলে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জন্য আলাদাভাবে কর্মবণ্টন স্পষ্ট করে দেখানো হয়েছে। সমন্বয় নিশ্চিত করা এবং একই কাজের পুনরাবৃত্তি এড়ানোর জন্য এটা করা হয়। মন্ত্রণালয়/বিভাগের মধ্যকার বিরোধপূর্ণ মতামতের ক্ষেত্রে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এবং যদি তা না হয় তবে কেবিনেটই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য প্রত্যেক মন্ত্রণালয় এবং/বা বিভাগের মধ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় ভিত্তিক সমন্বয় নিশ্চিত করতে উপরোক্ত বিস্তৃত প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয় এবং এটি মাসিক/বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি পর্যালোচনা সভার মাধ্যমে কার্যকর করা হয়। সাধারণত এসব সভায় দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী সভাপতিত্ব করেন। অধিকন্তু, আন্তঃএজেন্সি সমন্বয়ও কার্যকর হয় প্রত্যেক মন্ত্রণালয়/বিভাগে অনুষ্ঠিত মাসিক সমন্বয় সভার মাধ্যমে। সাধারণত সচিবের সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রথাগতভাবে, মাঠ প্রশাসনে সমন্বয় সাধন জেলা পর্যায়ে ডেপুটি কমিশনারের এবং উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দায়িত্বে সম্পাদিত হয়। সুনির্দিষ্ট বিষয়ে কিছুসংখ্যক কমিটি নিয়োগের মাধ্যমে এটি করা হয়। তাছাড়া প্রত্যেক জেলায় ডেপুটি কমিশনারের সভাপতিত্বে উন্নয়ন সমন্বয় কমিটি রয়েছে। অবশ্য মাঠ পর্যায়ের সমন্বয়মূলক প্রক্রিয়া বেশ কিছু কারণে দুর্বল, যেমন কার্য -এলাকা সংক্রান্ত বিরোধ এবং বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে মতবিরোধ। বনবিভাগ এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের কার্য-এলাকা একই জেলায় সীমাবদ্ধ থাকে না। এ এলাকা একাধিক জেলায় বিস্তৃত হতে পারে। বিদ্যুৎ ও পানি সম্পদ ক্ষেত্রে আধা রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের কাজের বেলায়ও একই ধরনের সমস্যা। তাছাড়া চাকুরি কাঠামোর ক্ষেত্রে এলিট ক্যাডার ধারণার বিলুপ্তির পর সাধারণ বিশেষজ্ঞদের মতবিরোধ চরম রূপ ধারণ করেছে। এসবই মাঠ পর্যায়ে সমন্বয় প্রক্রিয়াতে বাধা সৃষ্টি করে। ১৯৭২ সাল থেকে জেলা পর্যায়ে কোন নির্বাচিত কাউন্সিল না থাকায় ডেপুটি কমিশনারের মাধ্যমেই এখনও সমন্বয় সাধনের কাজটি সম্পন্ন হয়। [এ.এম.এম শওকত আলী]
উৎস Cabinet Division, Government of Bangladesh.