পোলিও

পোলিও  Polio নামক ভাইরাস জীবাণু ঘটিত সংক্রামক ব্যাধি পোলিওমাইলাইটিস (Poliomyelitis) এর সচরাচর ব্যবহূত সংক্ষিপ্ত নাম। পোলিও ভাইরাস আন্ত্রিক ভাইরাস দলেরই অন্তর্গত, কারণ এটি শরীরের অন্ত্রপথেই দেহে প্রবেশ করে থাকে। দূষিত খাদ্য ও পানির সাথে প্রবেশ করার পর পোলিও ভাইরাস রক্তকোষের মধ্যে দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে রক্তে সংক্রমণ ঘটায়। পরবর্তীতে ভাইরাস প্রান্তীয় স্নায়ু নিউরনের মাইয়েলিনসমূহকে ধ্বংস করে ফেলে। এই মাইয়েলিনের প্রদাহ থেকেই মায়েলাইটিস কথাটি এসেছে। এর ফলে আক্রান্ত স্থানে যে পরিণতি পরিলক্ষিত হয় সেটাই হচ্ছে শিথিল (Flaccid) পক্ষাঘাত বা পোলিও।

পোলিও রোগীর সংখ্যা বাংলাদেশে আশিরদশকেও যথেষ্ট পরিমাণে ছিল। ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশে প্রতি এক লক্ষ পাঁচ বছরের নিচের বয়সের শিশুদের মধ্যে পোলিও রোগাক্রান্তের ঘটনা ছিল ৫২ জন। কিন্তু পোলিও নির্মূল অভিযানের অংশ হিসেবে মুখে খাবার পোলিও টিকা ব্যবহারের ফলে চিত্রটি দ্রুত পরিবর্তিত হয়েছে। এই মুখে খাবার টিকা তৈরি করা হয় জীবন্ত ভাইরাসকে নিস্তেজকৃত (attenuated) করণের মাধ্যমে। এই টিকা মুখে ফোঁটা ফেলে খাবার টিকা হিসেবে, প্রতি বছর উদযাপিত জাতীয় টিকাদান দিবসের কর্মসূচি হিসেবে, লক্ষ লক্ষ টিকাদান যোগ্য শিশুদের যাদের বয়স পাঁচ বছরের নিচে তাদেরকে মুখে খাওয়ানো হয়।

বাংলাদেশে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে পরিচালিত সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচিতে (ইপিআই) ছয় রকমের টিকা দেয়া হয়ে থাকে। এগুলি হচ্ছে ডিপথেরিয়া, হুপিংকফ, টিটেনাসের ত্রয়ী টিকা (ডিপিটি), ওরাল পোলিও টিকা (ওপিটি), হাম এবং বি.সি.জি। ১৯৮০ সালের মাঝামাঝি এই কর্মসূচি শুরু করার পর থেকে পোলিও রোগের ঘটনা দ্রুত হ্রাস পেতে থাকে। ১৯৮৮ সালে পাঁচ বছরের নিচের প্রতি এক লক্ষ শিশুর মধ্যে ১৪টি পোলিও রোগের ঘটনা দেখা গেছে। ১৯৯৯ সালে মোট ২৬টি ভয়ংকর রকমের পোলিও রোগের ঘটনা নির্ণিত হয়েছিল ৬৪টি জেলার মধ্যে ১৭টিতে। শীগ্রই বাংলাদেশ পোলিও রোগমুক্ত দেশ হিসেবে গণ্য হবার সম্ভাবনা রয়েছে।  [জিয়া উদ্দিন আহমেদ]

আরও দেখুন জাতীয় টিকা দিবস; টিকাদান; সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি; হাম