পেকুয়া উপজেলা

পেকুয়া উপজেলা (কক্সবাজার জেলা)  আয়তন: ১৩৯.৬১ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২১°৪৩´ থেকে  ২১°৫৪´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°৫৩´ থেকে ৯২°০২´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে বাঁশখালী উপজেলা, দক্ষিণে মহেশখালী ও চকোরিয়া উপজেলা, পূর্বে চকোরিয়া উপজেলা, পশ্চিমে কুতুবদিয়া চ্যানেল।

জনসংখ্যা ১৭১৫৩৮; পুরুষ ৮৬৩১০; মহিলা ৮৫২২৮। মুসলিম ১৭০০০৫, হিন্দু ১৩৮৩, বৌদ্ধ ১৪২ , খ্রিস্টান ৬ এবং অন্যান্য ২। এ উপজেলায় মগ, রোয়াই প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় কুতুবদিয়া চ্যানেল ও মাতামুহুরী নদী উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন ২০০২ সালের ২৩ এপ্রিল চকোরিয়া উপজেলার ৭ টি ইউনিয়ন (উজানটিয়া, পেকুয়া, টৈটং, মগনামা, রাজাখালী, বড়বাকিয়া, শিলখালী) নিয়ে পেকুয়া উপজেলা গঠিত হয়।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ১২ ১২৫ ২৯১৮২ ১৪২৩৫৬ ১২২৯ ৩৯.০ ৩৪.৫
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৮.৬৪ ২৯১৮২ ১৫৬৬ ৩৯.০
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন(একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
উজানটিয়া ৭৮ ৭০৭৩ ৭৩৪৪ ৭০৫০ ১৯.১
পেকুয়া ৮৩ ৭২৬৬ ২২৭১২ ২২৫৮১ ৩৭.৭
টৈটং ৯৬ ৫০৫৬ ১৪৮২৭ ১৪৪৪১ ২৭.৬
বড় বাকিয়া ১১ ৩৪৬৯ ৯১৪৬ ৯২৮৪ ৪১.৪
মগনামা ৭৮ ৫৩০২ ১১০৫১ ১১০৩৭ ৩২.১
রাজাখালী ৮৯ ৪৩৭৭ ১৩১১২ ১২৭৭১ ৩৭.৬
শিলখালী ৯৩ ১৯৭৫ ৮১১৮ ৮০৬৪ ৫০.১

সূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

মুক্তিযুদ্ধ পেকুয়ায় পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের মুখোমুখি সংঘর্ষের কোনো ঘটনা ঘটেনি। পেকুয়ার মুক্তিযোদ্ধারা দেশের অন্যত্র পাকবাহিনীর মোকাবেলা করেছেন। পেকুয়ার মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল চট্টগ্রামের দোহাজারীর জামিজুরি এলাকায় যুদ্ধ করে ১৩ জন পাকিস্তানি হানাদারকে হত্যা করে। এ যুদ্ধে ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।

বিস্তারিত দেখুন পেকুয়া উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৬।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২৫৩, মন্দির ৯, কেয়াং ১।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৫.৩%; পুরুষ ৩৫.৬%, মহিলা ৩৫.০%। কলেজ ১, কারিগরি কলেজ ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১১, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৪০, স্যাটেলাইট স্কুল ৭, কমিউনিটি স্কুল ৪, এতিমখানা ১৩, মাদ্রাসা ২৬৯। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: পেকুয়া জি.এম.সি ইনস্টিটিউশন (১৯৩৮), শিলখালী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৮), পেকুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯১৮)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান  লাইব্রেরি ১, ক্লাব ৭৮, মহিলা সমিতি ৫৫, খেলার মাঠ ১।

গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এ উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্ররয়েছে।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬২.০১%, অকৃষি শ্রমিক ৭.৪২%, শিল্প ০.৬৬%, ব্যবসা ১০.১৮%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.১৬%, চাকরি ৪.২৭%, নির্মাণ ০.৪৩%, ধর্মীয় সেবা ০.২১%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১.৭৪% এবং অন্যান্য ১১.৯২%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৩৭.৮১%, ভূমিহীন ৬২.১৯%।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, আলু, সরিষা, মরিচ, আখ, গম, চীনাবাদাম, পান, শাকসবজি।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, পেঁপে, আনারস, পেয়ারা, লেবু।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ১৫, গবাদিপশু ৩, হাঁস-মুরগি ১৫।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৫০ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১২৪ কিমি, কাঁচারাস্তা ১৪৫ কিমি; ব্রিজ ৩৭, কালভার্ট ১০৮।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা ধানকল, করাতকল, লবণ শিল্প, মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প, ছাপাখানা, বেকারি।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, কাঠের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১৭। রাজাখালী আলেক শাহ বাজার ও পেকুয়া হাট উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য চিংড়ি, লবণ, চীনাবাদাম, মাছ, পান, শাকসবজি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৮.৭% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৮৬.৫% এবং অন্যান্য ১৩.৫%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৭১.৫% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২২.৪% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৬.১% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৩, হাসপাতাল ২।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল ঘূর্ণিঝড় ও সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে উপজেলার বহু লোকের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে এবং গবাদিপশু ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ১৯৯৭ সালের ১৯ মে প্রলয়ংকরী ঘুর্ণিঝড়ে এ এলাকার সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

এনজিও ব্র্যাক, আশা।  [নিলুফার ইয়াসমিন]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১; পেকুয়া উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।