পানছড়ি উপজেলা

পানছড়ি উপজেলা (খাগড়াছড়ি জেলা)  আয়তন: ৩৩৪.১০ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°১২´ থেকে ২৩°২৮´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°৫০´ থেকে ৯২°০০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, দক্ষিণে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা, পূর্বে দীঘিনালা উপজেলা, পশ্চিমে মাটিরাঙ্গা উপজেলা।

জনসংখ্যা ৬২১৯৮; পুরুষ ৩১৩৫২, মহিলা ৩০৮৪৬। মুসলিম ১৮৮১৬, হিন্দু ১২৩৬৪, বৌদ্ধ ৩০২৯৪, খ্রিস্টান ২৮৬ এবং অন্যান্য ৪৩৮। এ উপজেলায় চাকমা, ত্রিপুরা, মারমা প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় প্রধান নদী: চেঙ্গী।

প্রশাসন পানছড়ি থানা গঠিত হয় ১৯৭৬ সালের ১ অক্টোবর এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৪ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ২২০ ২২৭০৬ ৩৯৪৯২ ১৮৬ ৪৯.৬ ৩৮.০
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৮২.৮৮ ২২৭০৬ ২৭৪ ৪৯.৬
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
উল্টাছড়ি ৮৯ ১০২৪০ ৫৭১০ ৫৭৭০ ৩৭.২
চেঙ্গী ১৯ ১৪৭২০ ৪০৩৭ ৩৯৯২ ৩৭.১
পানছড়ি ৭৬ ২০৪৮০ ১১৫২৭ ১১১৭৯ ৪৯.৬
লতিবন ৩৮ ২৭৫২০ ৪২৪১ ৪১০৮ ৩৬.৯
লোগাং ৫৭ ১৯৮৪০ ৫৮৩৭ ৫৭৯৭ ৪০.২

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

thumb

ঐতিহাসিক ঘটনাবলি ১৯৮৬ সালের জুন মাসে পানছড়ি উপজেলার দমদম, কালানাল ও ছনটিলায় শান্তিবাহিনীর সদস্যরা ১০৫ জন লোককে হত্যা করে। এ উপজেলার লোগাং ইউনিয়নের দুদুকছড়াতে ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি অনুযায়ী শান্তিবাহিনীর সশস্ত্র সদস্যরা ১৯৯৮ সালের ৫ মার্চ অস্ত্রসমর্পণ করে। এখানেই শান্তিবাহিনী বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধ উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম দলটি স্থানীয়ভাবে তেল্লেমুড়ার অম্পিনগরে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে এবং আরও ভালো প্রশিক্ষণের জন্য ভারতের শিলাছড়ি ক্যাম্পে গমন করে। তাদের সঙ্গে স্থানীয় অনেক মুক্তিযোদ্ধা সংযুক্ত হয় এবং তারা পাঁচটি কোম্পানী গঠন করে উপজেলা ও তৎসংলগ্ন অন্যান্য এলাকায় অপারেশন পরিচালনা করেন। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি যুদ্ধের ঘটনা ছিল পানছড়ি ক্যাম্প আক্রমণ।

বিস্তারিত দেখুন পানছড়ি উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৫।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪২.৩%; পুরুষ ৪৮.৭%, মহিলা ৩৫.৭%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: পানছড়ি কলেজ (১৯৯০), পানছড়ি হাইস্কুল ও কলেজ (১৯৮১)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান  ক্লাব ১৭, নাট্যদল ১, সিনেমা হল ১, খেলার মাঠ ৭।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৪.৮৪%, অকৃষি শ্রমিক ৯.৫৬%, শিল্প ০.২৭%, ব্যবসা ৮.৫৬%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ০.৭৪%, চাকরি ৫.৮৬%, নির্মাণ ০.৫৭%, ধর্মীয় সেবা ০.২২%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৩২% এবং অন্যান্য ৯.০৬%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪২.৪৬%, ভূমিহীন ৫৭.৫৪%। শহরে ৩৮.৭৬% এবং গ্রামে ৪৪.৪৯% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, আলু, ভুট্টা, সরিষা, তিল, আদা, হলুদ, বাঁশ, শাকসবজি।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, পেঁপে, আনারস, আখ।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার হাঁস-মুরগি ৩।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৪৩ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৪৮ কিমি, কাঁচারাস্তা ২৬৯ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা আইস ফ্যাক্টরি।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, তাঁতশিল্প, মৃৎশিল্প, কাঠের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৩, মেলা ১। লোগাং বাজার, পুইজগাং বাজার, উল্টাছড়ি বাজার এবং বিজয় মেলা (পানছড়ি সদরে) উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  কাঠ, বাঁশ, আদা, হলুদ, তিল, সরিষা, কলা, কাঁঠাল, আনারস।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ২৮.৮% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৬৯.৮%, ট্যাপ ০.৭% এবং অন্যান্য ২৯.৫%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলায় ১৫.৩% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৭৮.২% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৬.৫% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৩, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ৩।

এনজিও  ব্র্যাক, ইউনিসেফ।  [সঞ্জয় কিশোর দাস]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; পানছড়ি উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।