পাঁচবিবি উপজেলা

পাঁচবিবি উপজেলা (জয়পুরহাট জেলা)  আয়তন: ৩১১.৭৭ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৫°০৮´ থেকে ২৫°১৭´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৫৬´ থেকে ৮৯°১৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে হাকিমপুর ও ঘোড়াঘাট উপজেলা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য, দক্ষিণে জয়পুরহাট সদর উপজেলা, পূর্বে গোবিন্দগঞ্জ ও কালাই উপজেলা, পশ্চিমে জয়পুরহাট সদর উপজেলা ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য।

জনসংখ্যা ২৩৫৫৬৮; পুরুষ ১১৮৭৮১, মহিলা ১১৬৭৮৭। মুসলিম ২০০৯২৫, হিন্দু ২৬৯২১, বৌদ্ধ ১২২, খ্রিস্টান ৩৭১৮ এবং অন্যান্য ৩৮৮২। এ উপজেলায় সাঁওতাল, মুন্ডা, ওরাওঁ প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় ছোট যমুনা, তুলসীগঙ্গা ও হরবতী নদী।

প্রশাসন পাঁচবিবি থানা গঠিত হয় ১৮৬৮ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৫ ডিসেম্বর ১৯৮২ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
২১০ ২৪৭ ২২৪৭৫ ২১৩০৯৩ ৭৫৬ ৬৯.৪ ৫৩.০
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৯.৬৩ ১৪ ২২৪৭৫ ২৩৩৪ ৬৯.৪
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আওলাই ১০ ১০৫৩০ ১৫৪৫৬ ১৫৩৮৫ ৪৬.৮
আতাপুর ২১ ৯৪৩৩ ১২৫৪০ ১২৪৩৪ ৫৯.৪
আয়মা রসুলপুর ৩১ ৬৬১৯ ১৩৯৩১ ১৩৬১৭ ৫২.২
কুসুম্ব ৭৩ ১১৬২৯ ১৫০৭৭ ১৪৪৮৯ ৪৭.৪
ধরঞ্জি ৬৩ ৬৮৬৩ ১৪৬৫৭ ১৪৩৩৩ ৫২.৩
বাগজানা ৪২ ৬২৪১ ১১৮৩৯ ১১৬৩১ ৫৯.১
বালিঘাটা ৫২ ৬২৪১ ১১৬২০ ১১৪৪২ ৬২.২
মোহাম্মদপুর ৮৪ ৯৫৩১ ১২৩৭৮ ১২২৬৪ ৪৭.৮

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ (আতাপুর ইউনিয়ন), হজরত আবু জাফর মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন বলখির মাযার।

ঐতিহাসিক ঘটনা ১৯৩০ সালে পাঁচবিবি উপজেলার হিলিতে আব্দুল কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বে বিলাতিদ্রব্য বর্জন আন্দোলন এবং ১৯৪৬ সালে তেভাগা আন্দোলন সংঘটিত হয়। ১৯৩৪ সালের ২৭ অক্টোবর ডাঃ আব্দুল কাদের চৌধুরী ও প্রাণকৃষ্ণ চক্রবর্তীর নেতৃত্বে অনুশীলন সমিতির সদস্যরা হিলি রেলস্টেশনে মেইল ট্রেনের ডাক লুট করে। ১৯৪২ সালে পাঁচবিবিতে কংগ্রেস ও কমিউনিস্ট পার্টি একযোগে মহাত্মা গান্ধীর ডাকে ভারত ছাড় আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ভাষা আন্দোলনের মিছিলে পুলিশের গুলি ও ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে ২৪ ফেব্রুয়ারি পাঁচবিবিতে সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। ১৯৬৭ সালের ১১ ডিসেম্বর মওলানা ভাসানীর উদ্যোগে মহীপুরে শিক্ষা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে পাঁচবিবি উপজেলার পাঁচবিবি লাল বিহারী উচ্চ বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিচালনা করে। এছাড়াও ভারত সীমান্তবর্তী ফাঁড়ি হতে ৫০/৬০ জন ইপিআরকে এনে ছাত্র-যুবকদের সশস্ত্র ট্রেনিং দেওয়া হয়। ১৯৭১ সালের ২০ এপ্রিল পাকবাহিনী পাঁচবিবি বাজার আক্রমণ করে অনেক লোককে হত্যাসহ ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। মুক্তিযুদ্ধের সময় আয়মা রসুলপুর ইউনিয়নে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকবাহিনীর লড়াইয়ে ২৪ জন পাকসেনা নিহত হয়। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে হাজীপুর গ্রামে পাকবাহিনীর টহলরত দলের ওপর মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা অতর্কিত হামলা চালিয়ে ৯ জন পাকসেনাকে হত্যা করে। উপজেলার ৩টি স্থানে (গোপালপুর, দমদমা ও বালিঘাটা) গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে।

বিস্তারিত দেখুন পাঁচবিবি উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৫।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২৯৮, মন্দির ৮, গির্জা ১, মাযার ৩, তীর্থস্থান ১। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: পাথরঘাটা বাজার মসজিদ, পাকুড়িয়া মন্দির, বরন মন্দির, ছাতিনালী মন্দির।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫৪.৬%; পুরুষ ৫৮.১%, মহিলা ৫১.০%। কলেজ ৬, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪৯, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৯৬, কারিগরি স্কুল ৬, মাদ্রাসা ৪৬। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: পাঁচবিবি ডিগ্রি কলেজ (১৯৯৪), মহীপুর হাজী মোহসিন সরকারি কলেজ (১৯৭৬), সরকারি এল.এল.বি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৪), উচাই জেরকা এস.সি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৫), পাঁচবিবি লাল বিহারী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪০), পিয়ারা ছাতিনালী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬২), কোতোয়ালীবাগ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৪), পাঁচবিবি নছির মন্ডল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৪), বাগজানা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৬), মহীপুর মওলানা ভাসানী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৮০), শালাইপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৮৮), পাঁচবিবি মহববতপুর আমিনিয়া কামিল মাদ্রাসা (১৯৪৮), বালিঘাটা আলিম মাদ্রাসা (১৯৭৬)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী সাপ্তাহিক: বাংলাদেশ পত্রিকা, বালিঘাটা, পাঁচমাথা, ভোরের আলো; মাসিক: আজকের মহুয়া; বার্ষিকী: প্রবাহ।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান  লাইব্রেরি ১৮, প্রেসক্লাব ১, ক্লাব ১৭, সিনেমা হল ৫, নাট্যমঞ্চ ১, নাট্যদল ১, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র ১।

দর্শনীয় স্থান পাথরঘাটা (তুলসীগঙ্গা নদীর তীরে ইসলাম, হিন্দু ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদেরর মিলনস্থল); লকমা চৌধুরী বাড়ি (কড়িয়া)।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭২.৩৪%, অকৃষি শ্রমিক ২.৩২%, শিল্প ০.৮৮%, ব্যবসা ১০.৬৪%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.২৩%, চাকরি ৩.৮৭%, নির্মাণ ১.০১%, ধর্মীয় সেবা ০.১৫%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.০৯% এবং অন্যান্য ৫.৪৭%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৭.২৯%, ভূমিহীন ৪২.৭১%। শহরে ৪২.৭৪% এবং গ্রামে ৫৮.৬৮% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, গম, আলু, অাঁখ, সরিষা, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তুলা।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, কলা, জাম, আনারস, পেয়ারা, লিচু।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ১, গবাদিপশু ২২, হাঁস-মুরগি ৫০, হ্যাচারি ৩।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১০৩ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৭ কিমি, কাঁচারাস্তা ২৯০ কিমি; রেলপথ ১৪ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা ফ্লাওয়ার মিল, আইস ফ্যাক্টরি।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, বুনন শিল্প, বেতের কাজ, বাuঁশর কাজ, কাঠের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২১, মেলা ১১। পাঁচবিবি হাট, মালপাড়া হাট, শিরট্রি হাট, ধরঞ্জি হাট, বাগজানা হাট, বারকান্দি হাট, ছাতিনালী হাট এবং বারুণি স্নানের মেলা, পাঁচবিবি মেলা, মহীপুর মেলা, বাগজানা মেলা ও মহিষমর্দন মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানি দ্রব্য  পাট ও চামড়া।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৪১.৭% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৪.৮%, ট্যাপ ১.৬% এবং অন্যান্য ৩.৬%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৫৭.৭% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২৬.৬% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। তবে ১৫.৭% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতাল ১, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ৮, দাতব্য চিকিৎসালয় ১।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৯৫ সালে এ উপজেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। এ বন্যায় প্রাণহানির ঘটনাসহ ঘরবাড়ি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

এনজিও  ব্র্যাক, আশা, ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ, প্রশিকা, স্বনির্ভর বাংলাদেশ, সোসাল ডেভলপমেন্ট সার্ভিস। [শাহনাজ পারভীন]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; পাঁচবিবি উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।