নিখিলবঙ্গ নমঃশূদ্র সমিতি

নিখিলবঙ্গ নমঃশূদ্র সমিতি ১৯২৬ সালে বেঙ্গল ডিপ্রেসড ক্লাসেস অ্যাসোসিয়েশন উত্তরসূরী সংগঠন। পূর্ববঙ্গের নমঃশূদ্র সম্প্রদায়কে সংগঠিত করার কাজে নিখিলবঙ্গ নমঃশূদ্র সমিতি ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিল। বেঙ্গল ডিপ্রেসড ক্লাসেস অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা ছিলেন প্রধানত নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের। তাঁরা তাদের আন্দোলনকে অল ইন্ডিয়া ডিপ্রেসড ক্লাসেস আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে চেয়েছিলেন। পৃথক নির্বাচকমন্ডলীর জন্য ড. আম্বেদকরের দাবির প্রতি তাঁরা সমর্থন জানান।

১৯৩২ সালে ম্যাকডোনাল্ড কর্তৃক সাম্প্রদায়িক রোয়েদাদ (Communial Award) ঘোষণার পর বেঙ্গল ডিপ্রেসড ক্লাসেস অ্যাসোসিয়েশন ও নিখিলবঙ্গ নমঃশূদ্র সমিতি উভয়েই সমাজের অস্পৃশ্য সম্প্রদায়গুলির জন্য স্বতন্ত্র রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বের দাবি জোরালোভাবে সমর্থন করে। বস্ত্তত, উভয় সংগঠনের পক্ষ থেকেই যৌথ নির্বাচক মন্ডলীর জন্য জাতীয়তাবাদী দাবির কড়া সমালোচনা করা হয়। সরকারকে দেওয়া স্মারকপত্রে নিখিলবঙ্গ নমঃশূদ্র সমিতি অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় জানায় যে, স্বতন্ত্র নির্বাচকমন্ডলীর সৃষ্টি বাংলার অনুন্নত শ্রেণিগুলিকে প্রভূত পরিমাণ রাজনৈতিক সুবিধা এনে দেবে। অন্যকথায় সমিতি মনে করে যে, অধিকতর রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জনের মাধ্যমে অনুন্নত শ্রেণিগুলি তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অক্ষমতা থেকে মুক্ত হতে পারবে। নিখিলবঙ্গ নমঃশূদ্র সমিতি ১৯৩২-এর সেপ্টেম্বরে আম্বেদকর কর্তৃক ‘পুনা চুক্তি’-সই করার সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করে এবং স্বতন্ত্র নির্বাচকমন্ডলী ও সংখ্যার অনুপাতে তফসিলি সম্প্রদায়এর জন্য আসন সংরক্ষণের দাবি জানাতে থাকে। সমিতির দৃষ্টিতে আম্বেদকরের সিদ্ধান্ত ছিল আত্মঘাতী। কারণ এতে ভারতীয় সমাজের লক্ষ লক্ষ অস্পৃশ্য মানুষের স্বার্থ জলাঞ্জলি দেওয়া হয়। পুনা চুক্তি বাতিল করা সম্ভব নয় বলে নিখিলবঙ্গ নমঃশূদ্র সমিতি পরবর্তীকালে অনিচ্ছা সত্ত্বেও চুক্তিটিকে গ্রহণ করতে বাধ্য হয়।  [রাজশেখর বসু]

গ্রন্থপঞ্জি  Sekhar Bandyopadhyay, Caste, Politics and the Raj: Bengal 1872-1937, Calcutta, 1990; Masayuki Usuda, ‘Pushed towards the Partition: Jogendranath Mondal and the Constrained Namasudra Movement’ in H Kotani (ed), Caste system, Untouchability and the Depressed, Japanese Studies on south Asia, 1, Delhi, 1997.