দৌলতখান উপজেলা

দৌলতখান উপজেলা (ভোলা জেলা) আয়তন: ৩১৬.৯৯ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°৩২´ থেকে ২২°৪৮´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৪০´ থেকে ৯০°৫৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ভোলা সদর ও লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা, দক্ষিণে বোরহানউদ্দিন ও তজুমদ্দিন উপজেলা, পূর্বে রামগতি উপজেলা, পশ্চিমে ভোলা সদর উপজেলা।

জনসংখ্যা ১৬৮৫৬৭; পুরুষ ৮৩৩৬৯, মহিলা ৮৫১৯৮ (২০১১)। মুসলিম ১৬৮৮২৩, হিন্দু ৪৪০১ এবং অন্যান্য ২৯ (২০০১)।

জলাশয় প্রধান নদী: মেঘনা।

প্রশাসন থানা গঠিত হয় ১৮৭২ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১ আগস্ট ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
২৫ ২৫ ১৬৭২৮ ১৫১৮৩৯ ৫৩২ ৪৮.১ ৪০.৯
পৌরসভা
আয়তন  (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব  (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
২.৪৯ ১৬৭২৮ ৬৭১৮ ৪৮.১
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৭.৪৯ ১৬১৩৯ ২১৫৫ ৩৫.৫০
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন(একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার(%)
পুরুষ মহিলা
উত্তর জয়নগর ৭৬ ৭৩৫৪ ১২৭৬০ ১৩৮৩৫ ৫২.৬
চর খলিফা ১৯ ৪৩৫৩ ১৬৩৪১ ১৬৬৭৮ ৪০.৬
চরপাতা ২৮ ৫৬৪১ ১২৯৪১ ১৩২৬১ ৩৯.৮
দক্ষিণ জয়নগর ৮৫ ৫০৭৩ ৯২৮৫ ১০৪৭২ ৪৩.৬
ভবানীপুর ১৬ ২৬১০ ২৯৭০ ২৯৩০ ৩৩.৪
মদনপুর ৪৭ ৭৮০৭ ২৩৯৭ ২২৭৩ ১২.৫
মেদুয়া ৫৭ ২৮৯৩ ২৬০৯ ২৪৬১ ২৯.৬
সৈয়দপুর ৯৫ ৬৪৬৭ ১৪২৪০ ১৩৯৪৫ ৩৮.৭
হাজিপুর ৩৮ ২২৩ ১২৯১ ১১৫০ ২৩.৬

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ চরপাতা দায়রা জামে মসজিদ (অষ্টাদশ শতাব্দী)।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে পাকবাহিনী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক লুন্ঠন, গণহত্যা ও অগ্নিসংযোগ চালায়। পাকবাহিনী তৎকালীন সার্কেল অফিসার আবদুল হামিদ ও তাঁর স্ত্রীকে তাদের সন্তানদের সামনে নৃশংসভাবে হত্যা করে। উপজেলায় পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যেসব যুদ্ধ হয় সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে দৌলতখান থানা যুদ্ধ, ঘুইংগার হাটের যুদ্ধ এবং বাংলাবাজার যুদ্ধ।

বিস্তারিত দেখুন দৌলতখান উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৪।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৩১১, মন্দির ১০।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান  গড় হার ৪১.৬%; পুরুষ ৪১.৭%, মহিলা ৪১.৬%। কলেজ ২, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২১, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৯৯, কিন্ডার গার্টেন ৩, মাদ্রাসা ২৮। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: দৌলতখান আবু আবদুল্লা কলেজ (১৯৮৩), হালিমা খাতুন গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ (১৯৯৩), দৌলতখান সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৬), দৌলতখান সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৮), হাজিপুর সিনিয়র মাদ্রাসা (১৯১২)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী  মাসিক: শ্যামলী (অবলুপ্ত)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১২, ক্লাব ৪১, সিনেমা হল ৪, সাংস্কৃতিক সংগঠন ৪, নাট্যদল ১, খেলার মাঠ ৫০।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫৬.৪৩%, অকৃষি শ্রমিক ৪.৯১%, শিল্প ০.৬৭%, ব্যবসা ১৬.৮২%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.৩৩%, চাকরি ৬.৫৮%, নির্মাণ ২.৭২%, ধর্মীয় সেবা ০.৩১%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৬০% এবং অন্যান্য ৭.৬৩%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪৪.৭৭%, ভূমিহীন ৫৫.২৩%। শহরে ২১.৩৫% এবং গ্রামে ৪৯.৫৭% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পান, গম, মিষ্টি আলু, ডাল, সরিষা, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিল, তিসি।

প্রধান ফল-ফলাদি  আম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে, তাল, নারিকেল, সুপারি, তরমুজ।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৪৭, গবাদিপশু ৫৫, হাঁস-মুরগি ৭১।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৩৬.৭৯ কিমি, কাঁচারাস্তা ২০১.৪ কিমি; নৌপথ ১৩০ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা বরফকল, ওয়েল্ডিং কারখানা।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, মৃৎশিল্প, লৌহশিল্প, তাঁতশিল্প, কাঠের কাজ, বাঁশের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা দৌলতখান হাট, খায়ের হাট, বাংলা বাজার, চালতাতলীর হাট, মিয়ার হাট, হাওলাদারের হাট, কাজীর হাট উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  মাছ, পান, সুপারি, নারিকেল, শাকসবজি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৩৬.৫% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৭.৬%, ট্যাপ ০.১% এবং অন্যান্য ২.৩%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৬২.৫% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩২.৫% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৫.০% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ১, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৯, কমিউনিটি ক্লিনিক ১৭।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, প্রশিকা, স্বনির্ভর বাংলাদেশ, হীড বাংলাদেশ।  [সৈয়দ মুজতবা আহমদ খান]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; দৌলতখান উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।