দেওয়ানি কার্যবিধি

দেওয়ানি কার্যবিধি  কোনো ব্যক্তির কাজ বা হুমকির ফলে অন্য ব্যক্তির সম্পত্তির অধিকার বা মর্যাদা ক্ষতিগ্রস্ত হলে তৎকর্তৃক  দেওয়ানি আদালতে অভিযোগ পেশ ও ডিক্রি লাভের মাধ্যমে তা মীমাংসা করা এবং কখনো বিপক্ষ তা মান্য না করলে আদালতের সাহায্যে ডিক্রি কার্যকর করা। এক্ষেত্রে দেওয়ানি আদালত মামলা গ্রহণ ও বিবেচনার সময় ১৯০৮ সালের দেওয়ানি কার্যবিধি অনুসরণ করবে। ১৫৫ ধারার নিয়মাবলি ছাড়াও কার্যবিধিতে দেওয়ানি আদালতের এখতিয়ারে রয়েছে মোকদ্দমা স্থগিতকরণ, দোবারাদোষ (res judicatta), মোকদ্দমা রুজুর স্থান, মামলা দায়ের, বিবাদী ও সাক্ষীদের সমন, রায় ও ডিক্রি, স্বার্থ, খরচপত্র, ক্ষতিপূরণের ব্যয়, ডিক্রি ও হুকুম কার্যকরকরণ, ডিক্রি কার্যকরকরণের সময়সীমা, বিবাদী বা ডিক্রির দেনাদার গ্রেপ্তার ও দেওয়ানি কারাগারে আটক, সম্পত্তি ক্রোক ও বিক্রয়, দস্ত্তরি, সরকার বা সরকারি কর্মকর্তা কর্তৃক পদবলে মোকদ্দমা রুজু অথবা সরকার বা সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা, কোনো বিদেশি বা বিদেশি রাষ্ট্র কর্তৃক মামলা, বিদেশি শাসক, রাষ্ট্রদূত, বিশেষ দূত কর্তৃক মামলা বা তাদের বিরুদ্ধে মামলা, ইন্টারপ্লিডার মামলা, যেসব বিশেষ মামলায় আদালতের মতামত প্রয়োজন, গণ-উৎপাত ও বদান্যতা বিষয়ক মামলা, ডিক্রি বা আদেশ থেকে সম্পূরক মামলা রুজুর আপীল, হাইকোর্ট বিভাগের মতার্থে প্রেরণ, ডিক্রি বা আদেশ পর্যালোচনা, হাইকোর্ট বিভাগের অভিমত, হাইকোর্ট বিভাগ সম্পর্কিত বিশেষ ব্যবস্থা, প্রথম তফসিলের নিয়মাবলি এবং নিয়ম প্রণয়নের ক্ষেত্রে অন্যান্য ব্যবস্থা, এবং ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি, গ্রেপ্তার, অধস্তন আদালতের ভাষা, বিচারের রায় ডিক্রি বা নির্দেশ সংশোধন, সময় বাড়ানো, বিবিধ কার্যক্রম, আদালতের অন্তর্নিহিত ক্ষমতা ইত্যাদি নানা বিষয়।

দেওয়ানি কার্যবিধির প্রথম তফসিলের বিধিসমূহে রয়েছে মামলার পক্ষসমূহ, মামলা গঠন, স্বীকৃত এজেন্ট ও অ্যাডভোকেট, মামলা রুজু, সমন জারি ও প্রদান, আরজি-জবাব, আরজি, লিখিত বিবৃতি ও পারস্পরিক দায়শোধ, পক্ষসমূহের হাজিরা ও গরহাজির থাকার ফলাফল, আদালত কর্তৃক পক্ষসমূহ পরীক্ষা, সূত্র উদ্ধার ও পরিদর্শন, স্বীকারোক্তি, দলিলাদি গ্রহণ ও ফেরত, বিচার্য বিষয় গঠন, আইনগত বিষয় বা সম্মত বিষয় অনুযায়ী মামলা নির্ধারণ, প্রথম শুনানিতে মামলা নিষ্পত্তি, সমন, সাক্ষীদের হাজিরা, স্থগিতকরণ, মামলার শুনানি, সাক্ষীদের জেরা, হলফনামা, রায় ও ডিক্রি, ডিক্রি কার্যকরকরণ, সম্পত্তি অর্পণ আদেশ, সম্পত্তি ক্রোক ও বিক্রয় এবং অন্যান্য কর্মপদ্ধতি, মৃত্যু, বিবাহ, পক্ষসমূহের অস্বচ্ছলতা ও কায়মোকাম, মামলা প্রত্যাহার ও সামঞ্জস্য বিধান, আদালতে অর্থ জমা, খরচের জন্য জামানত, সাক্ষীদের জেরা ও স্থানীয় তদন্ত, হিসাব পরীক্ষা, বাটোয়ারা, সরকার বা সরকারি কর্মকর্তা কর্তৃক নিজ পদবলে মামলা দায়ের বা সরকার ও সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের, স্থল নৌ ও বিমান বাহিনীর লোকের দ্বারা বা তাদের বিরুদ্ধে মামলা, করপোরেশনের দ্বারা বা তার বিরুদ্ধে মামলা, কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও নিজ নাম ব্যতীত অন্য নামে ব্যবসারতদের দ্বারা বা তাদের বিরুদ্ধে মামলা, ট্রাস্টি, নির্বাহী ও প্রশাসক কর্তৃক বা তাদের বিরুদ্ধে মামলা, নাবালক ও অপ্রকৃতিস্থ ব্যক্তি কর্তৃক বা তাদের বিরুদ্ধে মামলা, নিঃস্ব ব্যক্তির দ্বারা মামলা, স্থাবর সম্পত্তি বন্ধক সংক্রান্ত মামলা, ইন্টারপ্লিডার মামলা, বিশেষ ধরনের মামলা, হস্তান্তরযোগ্য দলিল সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত কার্যপ্রণালী, গ্রেপ্তার ও বিচারের আগেই ক্রোক, অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা ও অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ, তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ, ডিক্রি থেকে আপীল, আদেশ থেকে আপীল, নিঃস্ব ব্যক্তির আপীল, অভিমতগ্রহণ, পুনর্বিবেচনা, বিবিধ বিধান এবং হাইকোর্ট বিভাগ ও ছোট আদালত সংক্রান্ত বিধান।

উপরিউক্ত দেওয়ানি কার্যবিধির বিভিন্ন ধারা এবং সাক্ষ্য আইন ও তামাদি আইনের বিভিন্ন ধারা অনুযায়ী একটি মামলা বা কার্যপ্রণালী নিয়ন্ত্রিত হয়। ঐসব আইনকানুন সম্পর্কে অভিজ্ঞ না হলে একজন আইনজীবী সাফল্যের সঙ্গে কোনো দেওয়ানি মামলা রুজু করতে, চালাতে বা মক্কেলের পক্ষে যুক্তি দাঁড় করাতে পারেন না, তেমনি একজন বিচারকও সঠিকভাবে মামলার বিচার করতে সক্ষম হন না। কোনো সাধারণ লোকের পক্ষে দেওয়ানি মামলা ও কার্যপ্রণালী শুরু করা ও পরিচালনা করা সম্ভব নয়, কেননা দেওয়ানি মামলার কার্যপ্রণালী বিধি খুবই জটিল, যেজন্য মামলার কার্যপ্রণালী সম্পর্কে যথাযথ ওয়াকিবহাল একজন বিজ্ঞ আইনজীবী নিয়োগ আবশ্যক।  [কাজী এবাদুল হক]