দুর্গাপুর উপজেলা (রাজশাহী)

দুর্গাপুর উপজেলা (রাজশাহী জেলা)  আয়তন: ১৯৭.৮৯ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°২৩´ থেকে ২৪°৩২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৪০´ থেকে ৮৮°৫২´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে বাগমারা এবং মোহনপুর উপজেলা, দক্ষিণ ও পূর্বে পুঠিয়া উপজেলা, পশ্চিমে পবা উপজেলা।

জনসংখ্যা ১৮৫৮৪৫; পুরুষ ৯৩৫৫১, মহিলা ৯২২৯৪। মুসলিম ১৮০৭৮৬, হিন্দু ৪০৭৩, খ্রিস্টান ৬৪৪ এবং অন্যান্য ৩৪২। এ উপজেলায় ওরাওঁ, সাঁওতাল প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় হোজা ও বারনাই নদী এবং আংরার বিল, কয়ামজমপুর বিল, আনুলিয়া বিল, ডাহার বিল, কলিয়ার পদ্ম বিল, খলিয়ার বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন দুর্গাপুর থানা গঠিত হয় ১৯০৯ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৪ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
৯৮ ১০৭ ২৮১১৯ ১৫৭৭২৬ ৯৩৯ ৫৫.৬ (২০০১) ৪৭.২
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
- ১৯ ২৬৬৭১ - ৫৫.০
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৫.৬৯ (২০০১) ১৪৪৮ ১২০৮ (২০০১) ৪০.৯
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
কিসমত গানকায়ির ৫৯ ৫৯৭৩ ১০৬৭০ ১০৩৪৪ ৪৫.৫
জয়নগর ৪৭ ৭৩৫৮ ১৩৮৫৭ ১৩৭৭৮ ৪৭.৯
ঝালুকা ৩৫ ৫৯৫৮ ১২১০২ ১১৫৮৬ ৪৩.২
দেলুয়াবাড়ী ১১ ৬৭৯৭ ১২৩৭৩ ১২৩০২ ৪৬.৮
ধর্মপুর (পানানগর) ২৩ ৫২৬১ ৮৯১৯ ৯০৩৯ ৫১.৫
নোয়াপাড়া ৮৩ ৭৪৩৬ ১৩৯২৩ ১৩৭২৭ ৪৭.৪
মারিয়া ৭১ ৩৮৮৫ ৮৩৭০ ৮১৮৪ ৪৮.৫

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ কিসমত মসজিদ (মাড়িয়া, অষ্টাদশ শতাব্দী), রুইপাড়া জামে মসজিদ (ষোড়শ শতাব্দী), পাঁচুবাড়ী পাঁচগম্বুজ জামে মসজিদ, কালী মন্দির (কালীদহ), নীলকুঠির ধ্বংসাবশেষ (পাননগর ও বখতিয়ারপুর)।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে পবা ও দুর্গাপুর উপজেলা সীমান্তে অবস্থিত কাবাসমূল নামক স্থানে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে একজন পাকিস্তানি মেজর নিহত হলে বিক্ষুব্ধ পাকসেনারা গাগনবাড়ীয়া ও পালসা গ্রামের ৪৪ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা করে। ১২ এপ্রিল তারিখে ঝলমলিয়া ব্রিজে পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। ১৪ই অক্টোবর হাট গোদাগাড়িতে অপর একটি যুদ্ধে ৩০ পাকসেনা নিহত হয়।

বিস্তারিত দেখুন দুর্গাপুর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৪।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৩৩৮, মন্দির ১৪, গির্জা ১, তীর্থস্থান ১। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: কিসমত মসজিদ (মাড়িয়া), রুইপাড়া জামে মসজিদ, পাঁচুবাড়ী পাঁচগম্বুজ জামে মসজিদ ও কালী মন্দির (কালীদহ)।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৮.২%; পুরুষ ৫২.২%, মহিলা ৪৪.৩%। কলেজ ৯, কারিগরি কলেজ ৩, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪৩, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৭৭, মাদ্রাসা ১৯। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: দুর্গাপুর পাইলট হাই স্কুল (১৯৪৬), দাউকান্দি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৬), শ্রীধর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৫৭), সিংগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯২৩)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১, ক্লাব ২৫, থিয়েটার প্রুপ ১, সিনেমা হল ১, মহিলা সংগঠন ১, খেলার মাঠ ২৫।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭৯.৮৫%, অকৃষি শ্রমিক ২.১৪%, শিল্প ০.২৪%, ব্যবসা ৭.৯২%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৮১%, চাকরি ৩%, নির্মাণ ০.৪৫%, ধর্মীয় সেবা ০.০৯%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.০৯% এবং অন্যান্য ৩.৪১%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬৮.৭৭%, ভূমিহীন ৩১.২৩%। শহরে ৬০.২৭% এবং গ্রামে ৬৯.১১% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, আলু, পান, তুত, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিল, সরিষা, মিষ্টি আলু, কাউন, তিসি, অড়হর।

প্রধান ফল-ফলাদি  আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, পেঁপে, খেজুর।

মৎস্য, গবাদি পশু ও  হাঁস-মুরগির খামার  মৎস্য ৫০, হাঁস-মুরগি ২০, হ্যাচারি ২৫।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ২০১ কিমি, আধাপাকা রাস্তা ৯ কিমি, কাঁচা রাস্তা ৪২৮ কিমি। বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়া ও গরুর গাড়ি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়া ও গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা আটাকল, ধানকল, করাতকল, বরফকল, ছাপাখানা, ওয়েল্ডিং কারখানা, বিড়ি কারখানা।

কুটিরশিল্প লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, তাঁতশিল্প, বাঁশের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১৬, মেলা ৩। দুর্গাপুর বাজার, দাউকান্দি বাজার, পানানগর বাজার, কানপাড়া হাট এবং বারুনী স্নান মেলা (কালীদহ), তেবিলা মহররম মেলা (পানানগর) ও লক্ষীপুর ঘোড়াদহ মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য পান, কলা, পেঁপে, খেজুর গুড়, ময়দা, লিচু, শাকসবজি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৫৪.৫% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয় জলের উৎস নলকূপ ৯২.৩%, ট্যাপ ৪.০% এবং অন্যান্য ৩.৭%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৫৬.০% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩৯.১% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৪.৯% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, স্বাস্থ্য কেন্দ্র ৭, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৭, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ২, ক্লিনিক ২।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, কারিতাস, ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ।  [মো. কায়সারুজ্জামান]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; দুর্গাপুর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।