দুঃখ

দুঃখ  ভারতীয় ধর্ম ও দর্শনে দুঃখ একটি মৌলিক ধারণা। শাব্দিক অর্থে সুখের অভাবই হলো দুঃখ। দুঃখ শব্দটি বহুল অর্থে ব্যবহূত হয়; যেমন, বেদনা, ক্লেশ, কষ্ট, সন্তাপ, মনঃক্ষোভ, যন্ত্রণা, দুর্দশা, দুরাবস্থা, সংকট, ব্যাধি, মনঃপীড়া, অপ্রীতিকর ইত্যাদি।

উপনিষদ মতে মানব জীবনে দুঃখ একটি অপরিহার্য বাস্তবতা। শ্বেতাশ্বতর উপনিষদে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে, এ জগৎ দুঃখময়। জৈনধর্মের দুঃখ-বেদনা ও হতাশাকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এ ধর্মের অন্যতম প্রধান গ্রন্থ উত্তরাধ্যয়ণ সূত্রে মানব জীবনের দুঃখের করুণ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। ‘সর্বত্রই ভয়, বেদনা আর দুঃখের আশঙ্কার কল্পনা। সর্বত্রই আমি অনুভব করেছি দুঃখ ও যাতনা। এক মুহূর্তের জন্যও রক্ষা পাওয়া যায় না এই অবিরাম দুঃখের হাত থেকে।’ বৌদ্ধ ধর্মদর্শনে দুঃখের করুণ চিত্র বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে। বৌদ্ধ ধর্ম ও দর্শনের সূচনাই হয়েছে মানুষের দুঃখকে নিয়ে। দীঘনিকায়ে বলা হয়েছে: জন্ম দুঃখ, জ্বরা দুঃখ, যা চাই অথচ পাই না তা-ই দুঃখ। বৌদ্ধ মতে আমরা সবাই দুঃখের সাগরে ভাসছি। দুঃখকে কেন্দ্র করেই বৌদ্ধ ধর্ম ও দর্শনের চারটি আর্যসত্য নিয়াতিত হয়েছে, যেমন, (ক) দুঃখ আছে, (খ) দুঃখের কারণ আছে, (গ) দুঃখের কবল থেকে মুক্তি আছে এবং (ঘ) দুঃখ থেকে মুক্তি লাভের উপায় আছে। গৌতমবুদ্ধের মতে যা কিছু পরিবর্তনশীল তা-ই দুঃখময়। জগতের সব কিছু পরিবর্তনশীল; অতএব, জগতের সব কিছু দুঃখময়। অজ্ঞতার কারণে আমরা তা বুঝতে পারি না বলেই সীমাহীন দুঃখের শিকার হই। বৌদ্ধ মতে, কামনা বাসনা যত বাড়বে দুঃখও তত বাড়বে। কামনা বাসনার অন্ত নেই; তাই দুঃখেরও কোনো অন্ত নেই। অজ্ঞানতার হাত থেকে মুক্তি পেলেই আমাদের পক্ষে চিরমুক্তি বা নির্বাণ লাভ সম্ভব।  [আজিজুন্নাহার ইসলাম]