দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক মুক্তবাণিজ্য চুক্তি

দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (সাফটা) সার্কভুক্ত দেশসমূহের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক নিবিড়তর করার লক্ষ্যে প্রণীত একটি চুক্তি। এর ইংরেজি সংক্ষেপিত নাম সাফটা (SAFTA)। ২০০৪ সালের জানুয়ারি মাসে ইসলামাবাদে এ চুক্তির একটি কাঠামো বা ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষরিত হয়। জানুয়ারি ২০০৬ সালে সাফটা চুক্তি কার্যকর হয়। ৭টি সার্কভুক্ত দেশ নিয়ে যাত্রা করলেও ২০১১ সালে আফগানিস্তানের অন্তর্ভুক্তির ফলে বর্তমানে সাফটার অন্তর্ভুক্ত সদস্য সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮। স্মরণযোগ্য যে, ১৯৮৫ সালে স্বাক্ষরিত সার্ক চুক্তির উপক্রমণিকায় আঞ্চলিক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে নিবিড়তর করার ওপর সমধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।

সাফটা চুক্তির পূর্বে বাণিজ্য সংক্রান্ত আরেকটি চুক্তি ১৯৯৩ সালে ঢাকায় স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এ চুক্তিটি ইংরেজিতে SAARC Preferential Trading Arrangement বা সংক্ষেপে সাফটা (SAFTA) নামে অভিহিত। সাফ্্টার আওতায় চুক্তিবদ্ধ ৭টি দেশের মধ্যে বাণিজ্য উদারীকরণের উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করার বিধান রাখা হয়েছিল। এগুলির মধ্যে ছিল: (ক) পজিটিভ লিস্টে (ইতিবাচক তালিকা) অন্তর্ভুক্ত কিছু নির্দিষ্ট পণ্যের ক্ষেত্রে পরস্পরকে বাজার সুবিধা প্রদান (শূন্য শুল্ক বা হ্রাসকৃত শুল্ক); (খ) স্বল্পোন্নত দেশসমূহের জন্য বিশেষ সুবিধার ব্যবস্থা (মূলত তুলনামূলকভাবে বেশী পণ্যের জন্য ও অধিকতর শুল্ক ছাড়); (গ) রুলস অব্ অরিজিন সহজতর করা; এবং (ঘ) ক্রমান্বয়ে পরস্পরের মধ্যে বাণিজ্য উদারীকরণ আরো গভীরতর করার মাধ্যমে একটি মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল প্রতিষ্ঠা। সাফ্্টার মূল উদ্দেশ্য ছিল দক্ষিণ এশীয় দেশগুলির মধ্যে প্রত্যক্ষ ও অপ্রত্যক্ষ পদক্ষেপের মাধ্যমে অন্ত:আঞ্চলিক বাণিজ্য বৃদ্ধি করা। অন্যদিকে, সাফটাতে দেশীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় প্রতিরক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছিল।

সাফ্্টার আওতায় সর্বমোট চার দফায় পারস্পরিক বাণিজ্য সুবিধা আদান-প্রদান করা হয়। প্রথম দফায় ২২৬টি পণ্যের ক্ষেত্রে সুবিধাদি আদান-প্রদান করা হয়; দ্বিতীয় দফায় তা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়ে ১৮৭১টি পণ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়। এর মধ্যে স্বল্পোন্নত ৩টি দেশের (বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান) জন্য শুল্কহার দ্রুততর হারে হ্রাসসহ শুল্কবহির্ভূত বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা দুরীকরণের লক্ষ্যে ব্যবস্থা গ্রহণও অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরবর্তীতে তৃতীয় দফায় পজেটিভ লিস্টে পণ্যের তালিকা আরো বৃদ্ধি করা হয় ও স্বল্পোন্নত দেশগুলির জন্য নির্ধারিত তালিকায় আরো বেশ কিছু পণ্য সংযোগ করা হয়। ২০০২ সালে চতুর্থ দফায় বাংলাদেশকে ২৫৮টি পণ্যের জন্য বিশেষ বিশেষ সুবিধা প্রদান করা হয়। সাফ্্টা কাঠামোর বাইরে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির আওতায় ভারত বাংলাদেশকে বিশেষ ব্যবস্থায় ৭৯টি পণ্যের জন্য শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা প্রদান করে। সংখ্যাভিত্তিক কোটাসহ পাকিস্তানও কাঁচাপাট ও চা রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে বাজার সুবিধা প্রদানে সম্মত হয়।

তবে এ কথা স্বীকৃত যে সাফ্্টা অন্ত:আঞ্চলিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে তেমন কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয় নি। সাফ্্টার অভিজ্ঞতার আলোকে শিক্ষণীয় বিষয়গুলো ছিল: (ক) পণ্যভিত্তিক সুবিধা প্রদানের সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়া বেশ সময়সাপেক্ষ ও জটিল; (খ) পজেটিভ লিস্টের স্থলে নেগেটিভ লিস্ট (নেতিবাচক পণ্য) তালিকা প্রবর্তন প্রয়োজন যা হবে সংক্ষিপ্ত; (গ) উল্লেখযোগ্য হারে শুল্কহ্রাস ব্যতিরেকে অবাধ বাণিজ্যের সম্প্রসারণ সম্ভব নয়; (ঘ) আঞ্চলিক বাণিজ্য প্রসারের লক্ষ্যে শুল্কবহির্ভূত প্রতিবন্ধকতার সম্পূর্ণ বিলুপ্তি প্রয়োজন; (ঙ) চুক্তিভুক্ত দেশসমূহের বাণিজ্য সংক্রান্ত প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করা না হলে আমদানি-রপ্তানি পণ্যের নির্দিষ্ট মান সঠিকভাবে বজায় রাখা সম্ভব হয় না; (চ) পণ্য সংক্রান্ত রুলস অব অরিজিনকে এমনভাবে বিন্যাস করা প্রয়োজন যার ফলে সদস্যভুক্ত দেশগুলি প্রদেয় বাজার সুবিধা গ্রহণ করতে সক্ষম হয়; (ছ) আন্তঃআঞ্চলিক বিনিয়োগে সুবিধা প্রদান করার মাধ্যমে পণ্য সরবরাহ ও রপ্তানি সক্ষমতা বৃদ্ধি করা না গেলে বাণিজ্য সম্প্রসারণ সীমিত থেকে যাবে; (জ) বাণিজ্য সহজীকরণ ও পণ্য চলাচল ব্যবস্থা সহজ না করলে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধি সম্ভব নয়।

সাফটার অভিজ্ঞতাসমূহকে বিবেচনায় রেখে ২০০৬ সালের পহেলা জানুয়ারি সাফটা চুক্তি কার্যকর করা হয় ও সার্ক সচিবালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এ চুক্তির মাধ্যমে সাফটা চুক্তি বাতিল হয়ে যায়। বিনিয়োগ ও উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বাণিজ্যের সম্প্রসারণ, প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধি ও কারিগরি সহযোগিতার সুবাদে সার্কদেশভুক্ত দেশসমূহের অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি, ও সাধারণভাবে এ অঞ্চলের প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে অবদান রাখাই ছিল সাফটা চুক্তির প্রধান উদ্দেশ্য। সাফটা চুক্তির ভূমিকায় সদস্যভুক্ত দেশসমুহের মধ্যে আন্তঃদেশীয় পণ্য আদান প্রদানের বিভিন্ন অসুবিধা দূরীকরণের মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে একটি দক্ষিণ এশীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের অভিষ্ট ব্যক্ত করা হয়।

২৫টি অনুচ্ছেদ সম্বলিত সাফটা চুক্তিতে নিম্নোক্ত চারটি সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য চিহ্নিত করা হয়েছে:

এক. চুক্তিভুক্ত সদস্যদেশসমূহের বাণিজ্য সংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতা দুরীকরণ ও আন্তঃদেশীয় পণ্য আদান-প্রদানের প্রবাহকে সার্বিক সহায়তা প্রদান;

দুই. এ সকল দেশের নিজস্ব অর্থনৈতিক অবস্থার আলোকে মুক্তবাণিজ্য এলাকাভুক্ত অঞ্চলে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বাণিজ্য সম্প্রসারণ;

তিন. সাফটা চুক্তির বাস্তবায়নের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং যৌথ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তি;

চার. আঞ্চলিক সহযোগিতার অধিকতর সম্প্রসারণের লক্ষ্যে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তোলা;

সাফটা চুক্তিতে ছয়টি মূলনীতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। (ক) চুক্তিটি বাস্তবায়িত হবে এর বিভিন্ন ধারা এবং চুক্তিবদ্ধ দেশসমূহের সম্মতিক্রমে গৃহীত বিধিবিধান, সিদ্ধান্ত, সমঝোতা ও স্বাক্ষরিত প্রোটোকলের মাধ্যমে;

(খ) বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার মারাকেশ চুক্তির এবং চুক্তিবদ্ধ দেশসমূহ কর্তৃক স্বাক্ষরিত অন্যান্য চুক্তির আওতাভুক্ত অধিকার ও দায়দায়িত্ব সদস্যভুক্ত দেশসমূহের জন্য অক্ষুন্ন থাকবে;

(গ) চুক্তিবদ্ধ দেশসমূহের নিজস্ব অর্থনৈতিক ও শিল্প উন্নয়নের পর্যায় ও বৈদেশিক বাণিজ্যের কাঠামোকে বিবেচনায় রেখে এবং শুল্ক নীতির নিরীখে এবং পারস্পরিক ন্যায়বিচারপূর্ণ সুবিধা প্রদান নিশ্চিত করার মাধ্যমে সাফটা চুক্তি বাস্তবায়ন করা হবে;

(ঘ) সাফটার আওতাভুক্ত দেশসমূহের মধ্যে অবাধে পণ্য চলাচল নিশ্চিত করা হবে, যা বাস্তবায়িত হবে বিভিন্ন অশুল্ক ও বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা নিরসনের মাধ্যমে;

(ঙ) চুক্তিভুক্ত দেশসমূহ বাণিজ্যের প্রসারে সহায়ক ও প্রাসঙ্গিক অন্যান্য পদক্ষেপ গ্রহণ করবে যার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট আইনি কাঠামোকে পর্যায়ক্রমে সমতুল্য করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে;

(চ) পারস্পরিকভাবে প্রদেয় সুবিধার বাইরে চুক্তিভুক্ত অঞ্চলের স্বল্পোন্নত দেশের জন্য বিশেষ এবং কার্যকরী বাণিজ্য সুবিধাদি প্রদান করা হবে;

সাফটাকে ক্রমান্বয়ে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে উন্নীত করাই এই চুক্তির অভীষ্ঠ হিসাবে উল্লেখ করা হয়। এ প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যসমূহ ছিল নিম্নরূপ: (ক) বাণিজ্য উদারীকরণ পরিকল্পনা (TLP)-র আওতায় উন্নয়নশীল দেশের ক্ষেত্রে ২০১৩ ও স্বল্পোন্নত দেশের ক্ষেত্রে ২০১৬ সালের মধ্যে শুল্ক হার ক্রমান্বয়ে ০-৫% এ নিয়ে আসা হবে; (খ) নেগেটিভ পণ্যের তালিকা ক্রমান্বয়ে হ্রাস করা হবে; (গ) পণ্যের রুলস অব অরিজিন (RoO) সহজতর করা হবে; (ঘ) রাজস্ব ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা রাখা হবে (যদিও এটা কখনও বাস্তবে প্রয়োগ করা হয়নি); (ঙ) গুরুত্বপূর্ণ দেশজ শিল্পকে সুরক্ষা দেয়া হবে; (চ) তৃতীয় দেশে (সাফটার বাইরে) সাফটার শুল্ক সুবিধা নিয়ে বাণিজ্যের প্রবাহ রোধে ব্যবস্থা নেয়া হবে; (ছ) ভোক্তার স্বার্থ সংরক্ষণ করা হবে।

নেগেটিভ লিস্ট তালিকাভুক্ত পণ্যের জন্য শুল্ক সুবিধা দেয়া হয় না। এ তালিকা দীর্ঘ হলে তা মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্যকেই ব্যাহত করবে। সাফটার সীমিত কার্যকারিতার একটি বড় কারণ হল নেগেটিভ লিস্টের পণ্যের তালিকা যা এখনও বেশ দীর্ঘ, যদিও ক্রমান্বয়ে এ তালিকা হ্রাস করা হচ্ছে। বিশ্লেষণ ধর্মী বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, শেষ পর্যন্ত সাফটা চুক্তির ফলে চুক্তিভুক্ত দেশসমূহের মধ্যে অন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্যের তেমন প্রসার ঘটেনি। এ চুক্তির বাস্তবায়ন বাণিজ্য উদারীকরণ পরিকল্পনার মধ্যেই মূলত: সীমিত থেকে গেছে। এর ফলে বাণিজ্যের পরিধি ও পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়নি।

মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চলের সুফল পেতে হলে কয়েকটি পরিপূরক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সহযোগিতা, অশুল্ক সকল বাধার বিলুপ্তি, বাণিজ্য ও শুল্ক সম্পর্কিত সুবিধাদি বাস্তবে প্রদান এবং বাণিজ্য সহায়ক সামর্থ্য বৃদ্ধি। ইতিবাচক দিক হল, ২০১১ সালে ভারত সাফটার চার স্বল্পোন্নত দেশকে (বাংলাদেশ, ভুটান, নেপাল, আফগানিস্তান) সব পণ্যের জন্য স্ব-উদ্যোগে কোটামুক্ত ও শুল্কমূক্ত সুবিধা প্রদানের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয় (মাত্র ২৫টি পণ্য ব্যতিরেকে, যার মধ্যে আছে অস্ত্র, ড্রাগস ইত্যাদি)। স্বল্পোন্নত দেশসমূহ এই সুবিধা গ্রহণ করে ভারতে তাদের রপ্তানি কিছুটা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে। ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি বর্তমানে ১.২৫ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। যদিও ভারত থেকে আমদানিও বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ভারতের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি বর্তমানে প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।

বাস্তবতা হল, আন্ত:আঞ্চলিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে সাফটা-র কার্যকারিতা সীমিতই থেকে গেছে। সার্ক দেশসমূহের বৈশ্বিক বাণিজ্যের ৬ শতাংশ মাত্র সংগঠিত হয় অন্ত:আঞ্চলিক বাণিজ্যের মাধ্যমে। পাকিস্তান ও ভারত এখন পর্যন্ত সাফটার চুক্তির সব শর্ত পালন করে বাণিজ্য পরিচালনা করতে পারেনি। আন্তঃআঞ্চলিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে আঞ্চলিক ভেল্যু-চেইন ও উৎপাদন নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠাপূর্বক সরবরাহ সক্ষমতা বৃদ্ধি করে ও সাফটার শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা গ্রহণ করার সুবাদে বাণিজ্য সম্প্রসারণ করার মাধ্যমেই সাফটার অভীষ্ট ও লক্ষ্যসমূহের বাস্তবায়ন সম্ভব। উপ-আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক গভীরতর করার মধ্য দিয়ে ও বিবিআইএম মোটর ভেহিকেল চুক্তির মতো যোগাযোগ ব্যবস্থা নিবিড়করণের মতো উদ্যোগসমূহের সক্রিয় ভুমিকার সহায়তা নিয়ে সাফটার লক্ষ্যকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবার একটি সুযোগ বর্তমানে সৃষ্টি হচ্ছে। বাণিজ্য-বিনিয়োগ যোগাযোগের ত্রিমাত্রিক সংশ্লেষের মাধ্যমে সাফটার ঘোষিত উদ্দেশ্যসমূহকে ক্রমান্বয়ে বাস্তবায়িত করতে হবে। এখানে উল্লেখ্য যে, ১৯৯৭ সালে মালদ্বীপের রাজধানী মালেতে অনুষ্ঠিত নবম সার্ক সম্মেলনে সরকার প্রধানদের উদ্যোগে সার্ক-এর রূপকল্প প্রনয়নের জন্য একটি গ্রুপ অব এমিনেন্ট পার্সনস (জি.ই.পি) গঠন করা হয়েছিল। জি.ই.পি-র ওপর দায়িত্ব দেয়া হয় সার্ক-এর অর্থনৈতিক অভীষ্ট প্রণয়নের। ১৯৯৯ সালে জি.ই.পি তার প্রতিবেদন পেশ করে। এই প্রতিবেদনে ২০২০ সালের মধ্যে সার্ক অন্তর্ভুক্ত দেশসমূহকে নিয়ে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইউরোপীয় ইউনিয়নের আদলে) গঠনের রূপরেখা দেয়া হয়। ২০২১ সালে দাঁড়িয়ে বাস্তবতা হল সে লক্ষ্য অর্জিত হয়নি; প্রকৃত বিচারে বর্তমানে সার্ক সে লক্ষ্য থেকে অনেক দূরে। জি.ই.পি-র প্রতিবেদনে উল্লেখিত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার সম্ভাব্যতা নির্ভর করবে মূলত সার্ক অঞ্চলের দেশসমূহের নেতৃবৃন্দের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ও রাজনৈতিক অর্থনীতির ওপর, যদিও সাফটার উদ্দেশ্যসমূহ বাস্তবায়িত করতে পারলে নিকট ভবিষ্যতে ক্রমান্বয়ে সে ধরণের একটি অঞ্চল প্রতিষ্ঠার দিকে অগ্রসর হওয়া সম্ভবপর হবে। [এ.এম.এম শওকত আলী]

গ্রন্থপঞ্জি Ahmed, S. (2021), Promoting Bangladesh Development Through Regional Cooperation in Bangladesh Foreign Policypaedia Volume titled Bangladesh Economy in an Evolving Regional and Global Context. Professor Mustafizur Rahman (ed.): Dhaka, FES Bangladesh Office and CGS, University of Dhaka. [Forthcoming]; Raihan, S. (2021). Sustaining South Asia’s Regional Integration Process in Bangladesh Foreign Policypaedia Volume titled Bangladesh Economy in an Evolving Regional and Global Context. Professor Mustafizur Rahman (ed.): Dhaka, FES Bangladesh Office and CGS, University of Dhaka. [Forthcoming].