তেঁতুলিয়া উপজেলা

তেঁতুলিয়া উপজেলা (পঞ্চগড় জেলা)  আয়তন: ১৮৯.১০ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৬°২৪´ থেকে ২৬°৩৮´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°২১´ থেকে ৮৮°৩৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, পূর্বে পঞ্চগড় সদর উপজেলা। বাংলাদেশের সর্ব উত্তর সীমান্তে তেঁতুলিয়া উপজেলা অবস্থিত।

জনসংখ্যা ১২৫৪৫৪; পুরুষ ৬৩৪৬৩, মহিলা ৬১৯৯১। মুসলিম ১২২৮২১, হিন্দু ২৩৩৫, বৌদ্ধ ১০, খ্রিস্টান ২০৬ এবং অন্যান্য ৮২। এ উপজেলায়  সাঁওতাল, রাজবংশী প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় ডাহুক, করতোয়া ও মহানন্দা নদী।

প্রশাসন ১৯১৭ সালের ২৬ জুন তেঁতুলিয়া থানা গঠিত হয় এবং ১৯৯৩ সালের ১৬ মার্চ থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ৩৩ ২৪৬ ৫৫০৬ ১১৯৯৪৮ ৬৬৩ ৬৪.০ ৪৬.৫
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৪.২৩ ৫৫০৬ ১৩০২ ৬৪.০
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার(%)
পুরুষ মহিলা
তিরনাই হাট ৯৪ ৭৪৯৩ ৮৯৬০ ৮৮৪৯ ৪৬.০
তেঁতুলিয়া ৮১ ৬৩০৯ ১০১৫১ ১০০৫৪ ৪৯.৩
বাংলাবান্ধা ১৩ ৫১৯৪ ৭৬৬০ ৭২৯৩ ৪৮.২
বুড়াবুড়ি ৫৪ ৬২৮০ ৫৮৫৯ ৫৮০০ ৪৫.৭
দেবনগর ৪০ ৮২৩৩ ১১৭৭১ ১১৪০২ ৪৫.০
ভজনপুর ২৭ ৫৫৮৯ ৮৫৬৬ ৮১৩৮ ৪৬.৭
শালবাহান ৬৭ ৭৬৩২ ১০৪৯৬ ১০৪৫৫ ৪৯.৮

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ ভদ্রেশ্বর মন্দির, শিবমন্দির, গ্রিক ভাস্কর্য রীতিতে নির্মিত সমাধিস্তম্ভ, তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো।

মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের সময় তেঁতুলিয়া ৬ নম্বর সেক্টরের একটি সাব-সেক্টর ছিল। উপজেলায় পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো যুদ্ধ হয়নি, তবে উপজেলার মাগুরমারী, দেবনগর, ময়নাকুড়ি প্রভৃতি এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধারা পার্শ্ববর্তী জগদল অমরখান, মীরগড় প্রভৃতি এলাকায় পাকবাহিনীর অবস্থানের উপর হামলা পরিচালনা করে।

বিস্তারিত দেখুন তেঁতুলিয়া উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৪।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ১২০, মন্দির ২।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৭.৩%; পুরুষ ৪৯.৯%, মহিলা ৪৪.৭%। কলেজ ৪, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৭, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৬৭, কিন্ডার গার্টেন ৩, মাদ্রাসা ১১। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: কাজী শাহাবুদ্দিন গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ (১৯৬৫), তেঁতুলিয়া মহাবিদ্যালয় (১৯৮৬), ভজনপুর ডিগ্রি কলেজ (১৯৮৭), তেঁতুলিয়া কারিগরি মহাবিদ্যালয় (২০০৪), বোদা ময়নাগুড়ি দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৭), ভজনপুর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫৬), শালবাহান দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬২), তেঁতুলিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫৯), মাঝিপাড়া দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৭৩), হারাদীঘি দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৯), কালন্দিগঞ্জ সিনিয়র মাদ্রাসা (১৯৭৬), বেগম ফখরুননেছা ফাজিল মাদ্রাসা (১৯৭৮)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ১৬, লাইব্রেরি ১, সঙ্গীত নিকেতন ১, সিনেমা হল ১, নাট্যগোষ্ঠী ১।

বিনোদনকেন্দ্র তেঁতুলিয়া পিকনিক কর্ণার, ডাহুক বনভোজন কেন্দ্র, রৌশনপুর আনন্দধারা ও চা বাগান, বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট ও স্থলবন্দর।।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬১.৭২%, অকৃষি শ্রমিক ১৬.০১%, ব্যবসা ৮.৮৪%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৩৩%, চাকরি ৪.৩৮%, নির্মাণ ০.৪৬%, ধর্মীয় সেবা ০.০৯%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.০৯% এবং অন্যান্য ৬.০৮%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৪.৭৫%, ভূমিহীন ৪৫.২৫%। শহরে ৩৯.৪৫% এবং গ্রামে ৫৫.৫১% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসলাদি  ধান, পাট, গম, আখ, আলু, রসুন, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি কাউন, যব, সরিষা, মিষ্টি আলু, অড়হর, তিসি।

প্রধান ফল-ফলাদি  আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, তরমুজ, পেঁপে, আনারস, কমলা।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১০১ কিমি, কাঁচারাস্তা ৩৬৪.৫ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়া ও গরুর গাড়ি।

কুটিরশিল্প মৃৎশিল্প, তাঁতশিল্প, পাটশিল্প, বাঁশের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১৪। তেঁতুলিয়া বাজার, শালবাহান হাট, ভজনপুর হাট, সিপাইপাড়া হাট, তিরনাই হাট, বুড়াবুড়ি হাট, মহুরীর হাট উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য   তরমুজ, আনারস, কাঁঠাল, পেঁপে, রসুন, পাথর।

বিদ্যুৎ ব্যবহার উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ২২.৩% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৩.১%, ট্যাপ ০.৪% এবং অন্যান্য উৎস ৬.৫%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা উপজেলার ৭২.৪% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ১৫.৬% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১২.০% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৬, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৩।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৪২ সালের ভূমিকম্প ও ১৯৬৮ সালের বন্যায় এ উপজেলার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

এনজিও আরডিআরএস, ব্র্যাক। [শহীদুল ইসলাম শহীদ]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; তেঁতুলিয়া উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।