তারিখ-ই-রশিদী

তারিখ-ই-রশিদী  মির্জা হায়দার দুগলত রচিত মুগল ও মধ্য এশিয়ার তুর্কিদের ওপর গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান ইতিহাস গ্রন্থ। মির্জা হায়দার ছিলেন বাবুরের চাচাত ভাই। তিনি ৯০৫ হিজরি/ ১৪৯৯-১৫০০ খ্রিস্টাব্দে তাসখন্দে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা সেখানকার গভর্নর ছিলেন। পিতার মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল মাত্র নয় বছর। বাবুর তাকে লালনপালন করেন। একজন সম্মানিত জেনারেল হিসেবে তিনি কনৌজের যুদ্ধে উপস্থিত ছিলেন। কাশ্মীরের কয়েকজন প্রধান ব্যক্তির আমন্ত্রণে মির্জা হায়দার ১৫৪০ খ্রিস্টাব্দে কাশ্মীর উপত্যকা জয় করেন এবং সেখানে শান্তি স্থাপন করেন। ১৫৫১ খ্রিস্টাব্দে ভিরবলে (কাশ্মীর) শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য গমন করলে সেখানকার স্থানীয় অধিবাসীরা তাঁকে হত্যা করে।

তারিখ-ই-রশিদী দুটি পর্বে রচিত। প্রথম পর্ব লেখা হয় ৯৫১ ও ৯৫২ হিজরিতে (১৫৪৪-১৫৪৫ খ্রি.) এবং দ্বিতীয় পর্ব লেখা হয় ৯৪৮ হিজরিতে (১৫৪১ খ্রি.)। প্রকৃতপক্ষে, সময়ের হিসেবে দ্বিতীয় পর্বটি আগে লেখা হয় এবং এতে লেখকের সংক্ষিপ্ত জীবন-বৃত্তান্ত রয়েছে। তারিখ-ই-রশিদী লেখা শেষ হলে এটি কাশগড়ের আবদুল ফতেহ সুলতান সায়ীদ-এর পুত্র আব্দুর রশিদ খানের নামে উৎসর্গ করা হয়।

তারিখ-ই-রশিদী মুগল খাকান তুগলক তিমারের বিবরণ দিয়ে শুরু হয়। এ তুগলক তিমার প্রথম ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর গ্রন্থের বেশ বড় অংশ জুড়ে রয়েছে মধ্য এশিয়ার রাজনৈতিক আলোচনা। বাবুরহুমায়ুন-এর ইতিহাস তাঁর গ্রন্থে আলোচিত হয়েছে। তিনি বাবুরের বিশাল ব্যক্তিত্ব ও চারিত্রিক দৃঢ়তার প্রশংসা এবং বাবুরের প্রতি তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি ভারতে হুমায়ুনের কার্যাবলীর বিশদ বিবরণ দেন। তিনি সবসময় হুমায়ুনের প্রতি অনুগত ছিলেন। কনৌজের যুদ্ধে কেন্দ্রীয় সৈন্যবাহিনীর একটি দল তিনি পরিচালনা করেন। কাজেই তাঁর যুদ্ধের বিবরণ ছিল একজন প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ। প্রকৃতপক্ষে, তারিখ-ই-রশিদী গ্রন্থে যেভাবে বিবরণ দেওয়া হয়েছে সেভাবে বিস্তারিত বিবরণ আর কোনো লেখকই দেন নি। তারিখ-ই-রশিদী গ্রন্থটি ইংরেজি ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং তা এ হিস্টরি অব দি মুগলস অব সেন্ট্রাল এশিয়া নামে ইলিয়স এবং রস কর্তৃক প্রকাশিত হয়েছে।  [আবদুল করিম]

গ্রন্থপঞ্জি  Elias and Ross, A History of the Moguls of Central Asia, London , 1893; Ishwari Prasad, Life and Times of Humayan, Calcutta , 1955.