তাজুল মাসীর

তাজুল মাসীর রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে রচিত দিল্লি সালতানাতের প্রথম ইতিহাস গ্রন্থ। সদরুদ্দীন হাসান নিজামী গ্রন্থটি রচনা করেন। ফারসি ভাষায় লিখিত দিল্লির ইতিহাস সাহিত্যের মধ্যে এটি সর্বপ্রথম। হাসান নিজামীর জীবন ও কর্মকান্ড সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায় না। এক বর্ণনা অনুসারে তিনি ছিলেন ‘চাহার মাকালা’র রচয়িতা নিজামী আরুজী সমরখন্দীর ছেলে। এ পরিবার ঘোরের অধিবাসী ছিল এবং তাঁরা ঘোরী সুলতানদের প্রতি সদভাবাপন্ন ছিলেন।

হাসান নিজামী সমসাময়িক সুলতান কুতুবউদ্দীন আইবক কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে ইতিহাস রচনা আরম্ভ করেন। উপমহাদেশের ইতিহাসে যুগান্তকারী ঘটনা তরাইনের যুদ্ধের (১১৯১) বর্ণনা দিয়ে তাঁর ইতিহাসের শুরু। ১২২৯ খ্রিস্টাব্দে বাগদাদের খলিফার নিকট হতে শামসুদ্দীন ইলতুৎমিশ এর সনদ প্রাপ্তি পর্যন্ত ঘটনাবলি এতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। গ্রন্থকার দিল্লি সালতানাতের সূচনালগ্নের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করেছেন। সালতানাতের অস্থিতিশীল দুর্বল পর্যায় ছাড়িয়ে স্থিতিশীল শক্তিশালী কেন্দ্রীয় রাজতন্ত্রে রূপান্তরিত হওয়ার সময় পর্যন্ত ঘটনাসমূহ বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি মুইজদ্দীন মুহম্মদ বিন সাম ও কুতুবউদ্দীন আইবকের বিজয়সমূহের ইতিহাস বর্ণনার পরিকল্পনা নেন। কিন্তু কুতুবউদ্দীনের আকস্মিক মৃত্যুতে তিনি সিদ্ধান্ত বদলান এবং ইলতুৎমিশ কর্তৃক সালতানাত সুদৃঢ়ীকরণ পর্যন্ত তাঁর বিবরণ এগিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু কুতুবউদ্দীনের জীবদ্দশায় ঘটনাটি ঘটলেও হাসান নিজামী বখতিয়ার খলজীর বাংলা বিজয়ের কথা উল্লেখ করেন নি।

তাজুল মাসীর প্রথম নজরে আসে হেমার পারগস্টলের। তিনি তাঁর Gemaldesaal der Lebensheschreibungen grosser Moslemischer Herrscher গ্রন্থে কুতুবউদ্দীন আইবকের ইতিহাস পুনর্গঠন করতে গিয়ে এটি ব্যবহার করেন। ডব্লিউ. ন্যাসান লিস Materials for the History of India শিরোনামে রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটির জার্নালের ১৮৬৮ সালে এক প্রবন্ধে এ গ্রন্থের বর্ণনা দেন এবং ইলিয়ট তাঁর History of India as Told by its Own Historians গ্রন্থের দ্বিতীয় খন্ডে বইটির অংশ বিশেষ ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। প্রফেসর ডব্লিউ.এইচ.এ সাদানি ১৯৩৬ সালে Proceedings of the Idara-i-Maarif-i-Islamia-তে প্রকাশিত এক দীর্ঘ প্রবন্ধে এবং প্রফেসর হাসান আসকারি পাটনা ইউনিভার্সিটি জার্নালে এক নিবন্ধে গ্রন্থটির মূল্যায়ন করেন।  [আবদুল করিম]

গ্রন্থপঞ্জি  Elliot & Dowson, History of India as told by its Own Historians, II; IH Qureshi, Administration of the Sultanate of Delhi, Lahore 1944; KA Nizami, On History and Historians of Medieval India, New Delhi, 1983.