ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল

ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৩৬ সালের একটি প্রস্তাবের ভিত্তিতে ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত। সরকারি আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হতে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষার দরুন প্রতিষ্ঠানটি শুরু করতে প্রায় দশ বছর লেগে যায়। বঙ্গভঙ্গের কারণে নবগঠিত বাংলা ও আসাম প্রদেশের সচিবালয়ের জন্য ১৯০৪ সালে নির্মিত ভবনটি ১৯২১ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল এবং এ ভবনের একাংশে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র, আরেকটি অংশে ডরমিটরি এবং অবশিষ্টাংশে কলা অনুষদের শিক্ষা ভবন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সম্পূর্ণ ভবনটি আমেরিকান বেস হাসপাতালরূপে ব্যবহূত হয় এবং যুদ্ধ শেষে আমেরিকানরা চলে গেলে ওখানে একটি একশ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরে এভবনটিতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল (Dhaka Medical College and Hospital/DMCH) চালু হয়। প্রথম অবস্থায় এ হাসপাতালে মাত্র চারটি বিভাগ ছিল, যেমন: মেডিকেল, সার্জারি, স্ত্রীরোগবিদ্যা (গাইনিকলজি) এবং ইএনটি (নাক, কান, গলা)। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের জন্য কোনো হোস্টেল বা আবাসিক ব্যবস্থা ছিল না। ছাত্রদেরকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলসমূহে থাকার অনুমতি দেওয়া হতো কিন্তু ছাত্রীদের নিজ নিজ বাসা থেকে এসে ক্লাস করতে হতো।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল

১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের পর কলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে এক বিরাট সংখ্যক ছাত্র চলে এসে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়। একইভাবে অনেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছেড়ে কলকাতা মেডিকেল কলেজে চলে যায়। কলেজ ও হাসপাতাল চত্বরে সাময়িক ছাউনি বানিয়ে সেগুলির কয়েকটিতে হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও কয়েকটিতে ছাত্রদের হোস্টেল খোলা হয়। অতঃপর পর্যায়ক্রমে ছাত্রাবাস, কলেজ ও হাসপাতালের জন্য নতুন নতুন ভবন নির্মিত হতে থাকে। ১৯৫২ সালে ছাত্রীনিবাস, ১৯৫৪-৫৫ সালে ছাত্রাবাস, ১৯৫৫ সালে অনেকগুলি শিক্ষাভবন, ১৯৭৪-৭৫ সালে ইন্টার্নি ডাক্তারদের হোস্টেল নির্মাণ করা হয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত একই প্রশাসনের আওতায় থাকার পর দুটিকে বিভক্ত করে কলেজের প্রধান হিসেবে একজন প্রিন্সিপাল এবং হাসপাতালের প্রধান প্রশাসক হিসেবে একজন পরিচালক নিয়োগ করা হয়। যদিও দুটি প্রতিষ্ঠানই পরস্পরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করছে। মেডিকেল কলেজসহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিভিন্ন ভবন ও সংস্থা এখন প্রায় ২৫ একর জমির উপর ছড়িয়ে আছে।

পাঁচ বৎসর মেয়াদী শিক্ষা কার্যক্রম সাফল্যজনকভাবে শেষ করে ছাত্ররা চিকিৎসাশাস্ত্রে এম.বি.বি.এস স্নাতক ডিক্রি প্রাপ্ত হয়। চিকিৎসকরূপে জনগনের চিকিৎসা দেয়ার অধিকার অর্জন করতে সবাইকে  এম.বি.বি.এস  ডিক্রি  প্রাপ্তির পর হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে এক বৎসর মেয়াদী  বাস্তব  অভিজ্ঞতা অর্জন  করে  বাংলাদেশ  মেডিকেল  কাউন্সিল  হতে  লাইসেন্সপ্রাপ্ত  হতে হয়। একলেজে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে বিভিন্ন কোর্স রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে একটি নার্সিং ইনস্টিটিউট। দেশের একমাত্র বার্ণ ইউনিট এহাসপাতালেই অবস্থিত। [এস.এম মনোয়ারুল ইসলাম]