ডুমুরিয়া উপজেলা

ডুমুরিয়া উপজেলা (খুলনা জেলা) আয়তন: ৪৫৪.২৩ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°৩৯´ থেকে ২২°৫৬´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°১৫´ থেকে ৮৯°৩২´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে মনিরামপুর, অভয়নগর এবং ফুলতলা উপজেলা, দক্ষিণে বটিয়াঘাটা ও পাইকগাছা উপজেলা, পূর্বে খানজাহান আলী, খালিশপুর এবং সোনাডাঙ্গা থানা ও বটিয়াঘাটা উপজেলা, পশ্চিমে তালা ও কেশবপুর উপজেলা।

জনসংখ্যা ৩০৫৬৭৫; পুরুষ ১৫৩১১১, মহিলা ১৫২৫৬৪। মুসলিম ১৮৮৬১৯, হিন্দু ১১৬৪৫১, খিস্টান ৩৩৯, বৌদ্ধ ৯ এবং অন্যান্য ২৫৭।

জলাশয় প্রধান নদী: শিবসা ও সিংড়াইল। প্রধান বিল: বিল ডাকাতিয়া।

প্রশাসন থানা গঠিত হয় ২৫ মার্চ ১৯১৮ এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ১৪ ২০৫ ২৪১ ১৯৮২৮ ২৮৫৮৪৭ ৬৭৩ ৫৩.৮ ৫২.৫
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৬.৯২ ১৯৮২৮ ২৮৬৫ ৫৩.৮
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার(%)
পুরুষ মহিলা
আটলিয়া ০৬ ৯২২০ ১৬৪৬৯ ১৫৭৬৭ ৫৫.৩
খর্ণিয়া ৪০ ৫১৬০ ১০৩১৪ ১০২৭১ ৫২.৭
গুটুদিয়া ৩৩ ১৪১২০ ১৩৩২৪ ১২৮১৯ ৫১.৩
ডুমুরিয়া ২৭ ৪৬২৪ ১৪৭২৮ ১৪৫১৪ ৫৪.৭
ধামালিয়া ২০ ৫৭৫৩ ১০৯৯৩ ১১২৪৭ ৪৭.০
ভাণ্ডারপাড়া ১৩ ৮৭২৬ ৮৩৯৭ ৮৩৫২ ৫১.৪
মাগুরখালী ৪৭ ৯৯১১ ৬৮৮০ ৭০১১ ৫৮.৬
মাগুরঘোনা ৫৪ ৪৮৯১ ১১৬২২ ১১৪৯৩ ৪৫.৯
রংপুর ৬৭ ৮৯৬০ ৯১০৪ ৮৯৪৯ ৫৮.৪
রঘুনাথপুর ৬১ ৮৭৬৪ ১২৭৯১ ১৩০২৬ ৫৮.২
রুদাঘরা ৭৪ ৭১০০ ১১৪৯০ ১১৬৫৮ ৫২.৭
শরাফপুর ৮৮ ৫৬১৫ ৭৯৩৬ ৮১৬৫ ৪৯.৬
শোভনা ৯৪ ১০৯৭২ ৯৭৮৩ ৯৯২৫ ৫২.৭
সাহস ৮১ ৬১৭২ ৯২৮০ ৯৩৬৭ ৪৬.১

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।


প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ চেঁচুরি নীলকুঠি, চুকনগর নীলকুঠি, মধুগ্রাম ডাকবাংলো।

ঐতিহাসিক ঘটনা ১৯৪৮ সালে উপজেলার শোভনা, ধানিবুনিয়া, কানাইডাঙ্গা, ওড়াবুনিয়া ও বকুলতলা গ্রামসহ এতদঞ্চলে তেভাগা আন্দোলন সংঘটিত হয়।

মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে কালীতলাপাড়ায় পাকবাহিনীর আক্রমণে প্রফুল্ল কুমার বিশ্বাস, ইন্দুভূষণ, লালচাঁদ, অমূল্য, মহেন্দ্র, রায়চরণ, নীহার ও রতন সহ অনেক বাঙালি শহীদ হন। এছাড়া শলুয়া বাজারে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সম্মুখযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর ১৪ জন সৈন্য নিহত হয়। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকে পাকবাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ ভারতগামী বাঙালি শরণার্থীরা চুকনগর গ্রামকে ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করে। ১৯৭১ সালের ২০ মে চুকনগরে সমবেত বহুসংখ্যাক শরণার্থীকে পাকবাহিনী নির্বিচারে হত্যা করে। প্রতিবছর এ দিনটি ‘চুকনগর গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। ডুমুরিয়ায় পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে পলুয়া বাজার যুদ্ধ এবং শোভনার গাবতলা যুদ্ধ।

বিস্তারিত দেখুন ডুমুরিয়া উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৪।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২৩৭, মন্দির ১৩২, গির্জা ৪। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: আরশনগর মসজিদ, ডুমুরিয়া কালী মন্দির, দেলভিটা দুর্গা মন্দির, তালতলা মঠ, প্রহ্লাদ আশ্রম।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫২.৬%; পুরুষ ৫৭.৪%, মহিলা ৪৭.৭%। কলেজ ৮, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৫০, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৯৯, মাদ্রাসা ২৮। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: শাহপুর মধুগ্রাম কলেজ (১৯৬৯), অনুকূলচন্দ্র সংস্কৃত কলেজ (১৯৭৬), ডুমুরিয়া মহাবিদ্যালয় (১৯৮৩), রঘুনাথপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৮৮০), মধুগ্রাম সিনিয়র মাদ্রাসা (১৯২৮)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকি পুরুষোত্তমদ্যুতি, পদাতিক, সবুজপত্র (১৯৬৫), সংবর্তক (১৯৭১), শতাব্দীর ডাক (১৯৭২)।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৫.৪৩%, অকৃষি শ্রমিক ৩.০৮%, ব্যবসা ১৪.০৫%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৫.৫১%, চাকরি ৫.৫৪%, নির্মাণ ০.৮৮%, ধর্মীয় সেবা ০.১৬%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.১০% এবং অন্যান্য ৫.২৫%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬৯.৩৬%, ভূমিহীন ৩০.৬৪%। শহরে ৪২.১৪% এবং গ্রামে ৭১.০০% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিল।

প্রধান ফল-ফলাদি  আম, কাঁঠাল, নারিকেল, সুপারি।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১২৯ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ২০৭ কিমি, কাঁচারাস্তা ৭৩১ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়া ও গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা ধানকল, আটাকল, তেলকল, ডালকল, বরফকল।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, তাঁতশিল্প, মৃৎশিল্প, লৌহশিল্প, বাঁশের কাজ, কাঠের কাজ, বিড়ি ফ্যাক্টরি উল্লেখযোগ্য।

হাটবাজার ও মেলা ডুমুরিয়া, শাহপুর, চুকনগর, খর্নিয়া, আঠারোমাইল ও মাদারতলা হাট এবং বৈশাখী, চৈত্র সংক্রান্তি ও বলাই সাধুর মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য ধান, চাল, সুপারি, গুড়, আম, কাঁঠাল ও শাকসবজি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ থানার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৬৯.৮% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৯.৯% এবং ট্যাপ ০.১%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৮১.৮% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ১৩.৬% পরিবার অস্বাস্থাকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৪.৬% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, হাসপাতাল, ক্লিনিক, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, প্রশিকা।  [সন্দ্বীপক মল্লিক]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; ডুমুরিয়া উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।