ডিমলা উপজেলা

ডিমলা উপজেলা (নীলফামারী জেলা)  আয়তন: ৩২৬.৭৪ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৬°০৫´ থেকে ২৬°১৭´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৫২´ থেকে ৮৯°০৬´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, দক্ষিণে জলঢাকা উপজেলা, পূর্বে হাতীবান্ধা উপজেলা, পশ্চিমে ডোমার উপজেলা।

জনসংখ্যা ২৮৩৪৩৮; পুরুষ ১৪২৪১২, মহিলা ১৪১০২৬। মুসলিম ২৫১৮৭৭, হিন্দু ৩১৪৩২, বৌদ্ধ ১, খ্রিস্টান ২৭ এবং অন্যান্য ১০১।

জলাশয় প্রধান নদী: বুড়ি তিস্তা, তিস্তা ও নওতারা।

প্রশাসন ডিমলা থানা গঠিত হয় ১৮৫৭ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১ জুলাই ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ১০ ৫৩ ৫৩ ১৯৭১৯ ২৬৩৭১৯ ৮৬৭ ৫৫.৪ ৪১.২
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৬.১৪ ১৯৭১৯ ১২২২ ৫৫.৪
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার(%)
পুরুষ মহিলা
খোগাখড়িবাড়ি ৫৭ ৫৮১০ ১০৭৬৭ ১০৭০৭ ৪৭.২
খালিশা চাপানী ৪৭ ১০৪৪৬ ১৬৯৯৪ ১৬৭১৫ ৪২.০
গয়াবাড়ি ২৮ ৫২২৭ ১১৫৭৫ ১১৫৭৪ ৪১.৪
ঝুনাগাছ চাপানী ৩৮ ১১১৯৯ ১৭২৭৭ ১৭৩৯৯ ৩৮.৩
টেপাখড়িবাড়ি ৯৫ ৭৮৩৬ ৯২৭১ ৯০১৩ ৩৪.০
ডিমলা ১৯ ১০৬১৯ ২২৯১৪ ২২৬৬০ ৪৯.০
নওতারা ৬৬ ৮৭০৭ ১৮০২৮ ১৭৭৬৮ ৩৬.৭
পশ্চিম ছাতনাই ৭৬ ৬৭০২ ১১৫২৭ ১১২৮৭ ৪৩.৯
পূর্ব ছাতনাই ৮৫ ৪৪৭২ ৭১৫৮ ৭৩২৪ ৪২.৯
বালাপাড়া ১৩ ৯৭২২ ১৬৯০১ ১৬৫৭৯ ৪৩.১

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ ডিমলা রাজবাড়ি, ডিমলা শিবমন্দির।

ঐতিহাসিক ঘটনা তেভাগা আন্দোলনের (১৯৪৬-৪৭) সময় স্থানীয় ভূ-স্বামী মশিউর রহমান যাদু মিয়ার খামার বাড়িতে সংঘটিত এক সংঘর্ষে আন্দোলনের নেতা তৎনারায়ণ বর্মণ প্রাণ হারান। ১৯৫২ সালে ডিমলা অঞ্চলে ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য জামশেদ আলী চাটিকে গ্রেফতার করে রাজশাহী জেলে প্রেরণ করা হয়। তেভাগা আন্দোলনে নিহত তৎনারায়ণের স্মরণে ডিমলা বাজারে ‘তৎনারায়ণ স্মৃতিস্তম্ভ’ স্থাপিত হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে এ উপজেলার শটিবাড়ি, ঠাকুরগঞ্জ, খগা ও পশ্চিম খড়িবাড়িতে পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াই হয়। উপজেলার ৪টি স্থানে গণকবর রয়েছে; ডিমলা সদরে ‘স্মৃতি অম্লান’ নামে একটি স্মৃতিসৌধ স্থাপিত হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন ডিমলা উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৪।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৩৭১, মন্দির ২৫।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪২.২%; পুরুষ ৪৪.৭%, মহিলা ৩৯.৭%।কলেজ ৬, কারিগরি কলেজ ৩, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪৮, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৩৫২, মাদ্রাসা ১০২, বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্র ১৬। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান:  ডিমলা ইসলামী ডিগ্রি কলেজ (১৯৮৩), ডিমলা মহিলা বিদ্যালয় (১৯৯৮), খোগা খড়িবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৬), খোগা বড়বাড়ি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৭), নওতারা আবেউননেছা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১১), ডিমলা রাণী বৃন্দারাণী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৭), হাজী জহরতুল্যাহ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৭২), ডিমলা সরকারি বালিকা বিদ্যালয় (১৯৭৩), ডিমলা নিজপাড়া ফাজিল মাদ্রাসা (১৯৬২)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান সিনেমা হল ২, নাট্যদল ২, সংগীত একাডেমি ৫, মহিলা সংগঠন ১।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭৫.৩৬%, অকৃষি শ্রমিক ৪.৯২%, শিল্প ০.২১%, ব্যবসা ৮.২৭%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.৫১%, চাকরি ৩.০৫%, নির্মাণ ০.৪৬%, ধর্মীয় সেবা ০.২১%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.০৮% এবং অন্যান্য ৫.৯৩%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৭.৩৭%, ভূমিহীন ৪২.৬৩%। শহরে ৪৯.৭৪% এবং গ্রামে ৫৭.৯৭% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, ভুট্টা, আলু, তামাক, পিঁয়াজ, মরিচ, বিভিন্ন প্রকার সবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি কাউন, তিল, পাট।

প্রধান ফল-ফলাদি  আম, জাম, কাঁঠাল, পেয়ারা।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার গবাদিপশু ৩৪, হাঁস-মুরগি ১৭। এছাড়া এ উপজেলায় ৩১৪৬ টি পুকুর ও ১ টি খালে মাছের চাষ হয়।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৩৯.০০ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১০.০০ কিমি, কাঁচারাস্তা ৬৫৬.১২ কিমি; নৌপথ ৪০.১৫ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা স’মিল, রাইসমিল, ফ্লাওয়ার মিল।

কুটিরশিল্প লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, বিড়ি শিল্প, তাঁত, বাঁশ ও কাঠের কাজ, সেলাই কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২৩। ডিমলা বাবুরহাট, শঠিবাড়ি হাট, ঠাকুরগঞ্জ হাট, ডাঙ্গার হাট, শালহাটির হাট উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  ধান, তামাক, মরিচ, পিঁয়াজ।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ২৪.৯% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

প্রাকৃতিক সম্পদ ভূগর্ভস্থ পাথর ও বালি।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৬.০%, ট্যাপ ০.২% এবং অন্যান্য ৩.৮%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা ২৭.৭% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৬০.৫% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১১.৮% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ২, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১০, কুষ্ঠ চিকিৎসা কেন্দ্র ১, ক্লিনিক ১।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, কেয়ার, আহসানিয়া মিশন, আরডিআরএস।  [আব্দুস সাত্তার]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; ডিমলা উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।