জৈনুদ্দীন আহমদ খান
জৈনুদ্দীন আহমদ খান আলীবর্দী খানের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা, হাজী আহমদের সর্বকনিষ্ঠ পুত্র এবং নবাব সিরাজউদ্দৌলার পিতা। তাঁর প্রকৃত নাম ছিল মির্জা মুহম্মদ হাশিম। নওয়াব সুজাউদ্দীন খান-এর আমলে তিনি খান উপাধিতে ভূষিত হন। ভাই নওয়াজিস মুহম্মদ খান ওসৈয়দ আহমদ খান এর মতো তিনি প্রশাসনকে শক্তিশালীকরণ ও তাতে দক্ষতা আনয়নে যথেষ্ট অবদান রাখেন এবং আলীবর্দী খানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে কাজ করেন। জৈনুদ্দীন আলীবর্দীর কনিষ্ঠা কন্যা আমেনা বেগমকে (সিরাজউদ্দৌলার মাতা) বিয়ে করেছিলেন। আলীবর্দী খান বাংলার নওয়াব পদে অভিষিক্ত হওয়ার পর জৈনুদ্দীন বিহারের নায়েব সুবাহদার নিযুক্ত হন এবং তাকে হায়বত জঙ্গ উপাধি প্রদান করা হয়।
নওয়াব আলীবর্দী খানের শাসনামলে মারাঠাগণ বারবার হামলা করে বাংলা ও বিহারের বিশাল অঞ্চলে লুটতরাজ ও ধ্বংসসাধন করে। নওয়াবের সেনাবাহিনীতে বহুসংখ্যক আফগান কর্মরত ছিল। ১৭৪৪ সালে ভাস্কর পন্ডিতের নেতৃত্বে মারাঠাগণ বাংলা আক্রমণ করলে আলীবর্দী খান বাংলা বাহিনীর আফগান সেনাপতি মুস্তফা খানের যোগসাজশে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ভাস্কর পন্ডিতকে তাঁর অধিকাংশ অনুচরসহ হত্যা করেন। অবশিষ্ট মারাঠা সৈন্যরা পালিয়ে যায়। এরপর মুস্তফা খান আশা করেছিলেন যে, নওয়াব তাঁর বীরত্বের জন্য তাকে বিহারের সুবাহদারি পদ প্রদান করে পুরস্কৃত করবেন। এ থেকে বঞ্চিত হলে তিনি বিদ্রোহ করেন এবং একটি সশস্ত্র সংঘর্ষ অত্যাসন্ন হয়ে ওঠে। বিদ্রোহী সেনাপতি মুঙ্গের দখল করেন এবং পরে পাটনা আক্রমণ করেন। প্রাথমিক পর্যায়ে জৈনুদ্দীন এ আক্রমণ প্রতিহত করে রাজধানী রক্ষা করেন এবং বিদ্রোহ দমন করেন। অতঃপর নওয়াব আলীবর্দী খান এক বিশাল বাহিনী নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন এবং বিদ্রোহীদের বিহার থেকে বিতাড়ন করেন।
মুস্তফা খান পুনরায় বিহার আক্রমণ করেন এবং রঘুজী ভোঁসলেকে বাংলা আক্রমণে প্ররোচিত করেন। জৈনুদ্দীন ক্ষিপ্রতার সঙ্গে আফগান আক্রমণ প্রতিহত করেন। মুস্তফা খান গুলিতে নিহত হন। এরপর রঘুজী বর্ধমানে প্রবেশ করেন এবং বীরভূম অতিক্রম করে অগ্রসর হতে থাকেন। তাঁর সৈন্যবাহিনী চলার পথে ব্যাপক লুটতরাজ চালায়। রঘুজীকে বিতাড়ন করা হলেও তাঁর অনুসারী মীর হাবিব মুর্শিদাবাদে প্রবেশের সুযোগ পান এবং সেখানে তাদের লুণ্ঠন অব্যাহত থাকে। শেষ পর্যন্ত আলীবর্দী খান তাদের বিতাড়ন করতে সক্ষম হন।
আহমদ শাহ দুররানীর উপমহাদেশ আক্রমণের অব্যবহিত পরে ১৭৪৮ সালে আফগানগণ আলীবর্দী খানকে উৎখাত করে পূর্বাঞ্চলে তাদের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে অনুপ্রাণিত হয়। প্রাক্তন আফগান সৈনিকগণ বিদ্রোহী হয়ে পাটনা শহর দখল করে নেয় এবং ১৭৪৮ সালে এর সুবাহদার জৈনুদ্দীনকে হত্যা করে। এ হূদয়বিদারক সংবাদ পেয়ে আলীবর্দী খান তাদের বিরুদ্ধে অগ্রসর হয়ে বিদ্রোহীদের দমন করেন এবং দুই ছেলেসহ জৈনুদ্দীনের বিধবা পত্নী আমেনা বেগমকে উদ্ধার করেন। [কে.এম করিম]