জেলে

জেলে  মৎস্যজীবী সম্প্রদায়। বাংলাদেশের খাদ্য, পুষ্টি, কর্মসংস্থান এবং রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে মৎস্যসম্পদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের প্রায় ৫% এ খাত থেকে অর্জিত হয় এবং প্রায় ১.৪ মিলিয়ন লোক সার্বক্ষণিকভাবে মৎস্য আহরণের সাথে জড়িত। এছাড়া ২০০৬-০৭ অর্থবছরের পরিসংখ্যান অনুসারে দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৪.৯% এসেছে মৎস্য সম্পদ রপ্তানি থেকে।

বস্ত্তত আবহমানকাল থেকেই এদেশের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক লোক জীবনধারণের জন্য প্রধানত মৎস্য আহরণ ও তৎসম্পর্কিত পেশার ওপর নির্ভর করে আসছে। গ্রামীণ বাংলাদেশে জেলেরা সাধারণত নদীতীরবর্তী অঞ্চলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গোষ্ঠীবদ্ধভাবে কোনো সুনির্দিষ্ট পাড়া বা গ্রামে অথবা বিভিন্ন গ্রামে, বংশপরম্পরায় বসবাস করে থাকে। মৎস্য আহরণ বা বিপণন ছাড়াও সমাজজীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে একে অপরের সাথে সহযোগিতাপূর্ণ জীবন-যাপনই জেলেদের চিরায়ত ঐতিহ্যের এক অনুপম বৈশিষ্ট্য। জেলেদের যেমন ইতিহাস রয়েছে তেমনি রয়েছে বৈচিত্রময় ঐতিহ্য এবং প্রাকৃত ধাঁচের দৈনন্দিন জীবনধারা।

জেলে, নৌকা, জাল ও মাঝি-মাল্লা

ঐহিত্যগতভাবে বাংলাদেশের জেলেরা হিন্দুধর্মের অনুসারী। ডব্লিউ. ডব্লিউ হান্টার ১৮৭২ সালের শুমারি প্রতিবেদন পর্যালোচনার মাধ্যমে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলেন যে, হিন্দুদের চেয়ে এ দেশের মুসলমানগণই ভূমির সাথে বেশি ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিল; এমনকি কৃষিতে কর্মহীন অবস্থায়ও তারা অতিরিক্ত আয়ের জন্য মাছ ধরা, নৌকা চালানো এবং ঘর তৈরির মতো কাজে অংশগ্রহণ করত না। হিন্দুদের ক্ষেত্রে মাছ ধরার পেশা জাতিভেদ প্রথার সাথে সম্পর্কিত বিধায় তা জন্মসূত্রে নির্ধারিত এবং অপরিবর্তনীয়। এ জন্য জেলেরা জাতিভেদ প্রথার ধর্মভিত্তিক বিন্যাসে অন্যান্য পেশাজীবীদের তুলনায় নীচু অবস্থানের হওয়া সত্ত্বেও দায়িত্ব এবং কর্তব্যের অমোঘ বিধানের কারণে নিজেদের পেশাকে পবিত্র জ্ঞান করে থাকে। বর্তমান কালে মুসলমান জনগণের মধ্যেও এ পেশা গ্রহণের প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিন্তু, হিন্দুদের ন্যায় মুসলমানদের পেশা জন্মসূত্রে আরোপিত বা পবিত্র নয়, বরং এদের সকলের জন্য পেশার পরিবর্তন উন্মুক্ত। এদেশের হিন্দু এবং মুসলমান জেলেদের মধ্যে পেশাগত ব্যাপারে ধর্মীয় আদর্শগত পার্থক্য থাকলেও তাদের মধ্যে কতিপয় সাধারণ বৈশিষ্ট্যের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। তারা উভয়েই জাল, নৌকা, নদী, মৎস্য আহরণ ও বিপণন ইত্যাকার বিষয়কে কেন্দ্র করে গড়ে তুলেছে এক অনন্যসাধারণ সংস্কৃতি।

বাংলাদেশে মৎস্য আহরণ অথবা তৎসম্পর্কিত পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গকে বিভিন্নভাবে শ্রেণিবদ্ধ করার প্রয়াস লক্ষণীয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু জেলেরা ভিন্ন ভিন্ন সুস্পষ্ট জাতিবর্ণ পরিচয়ে পরিচিত। কিরণচন্দ্র দে পূর্ববাংলা এবং আসামে হিন্দু মৎস্যজীবীদের মধ্যে ২৩টি ভিন্ন জাতিবর্ণের উপস্থিতি উল্লেখ করেছেন। এগুলি হচ্ছে: কৈবর্ত, কিওয়াট, কারিতা, তিওয়ার অথবা রাজবংশী, দাস, শিকারি, মালো অথবা ঝালো, নমশূদ্র অথবা চন্ডাল, বেরুয়া, জিয়ানি, কারাল, পোদ, বিন্দ বা বিন্দু, বাগদি, পাটনি, নদিয়াল, মালি, হারি, গনরি, বনপার, গংগটা, মুরারী, সুরাহিয়া এবং লোহাইত। এদেশের মুসলমানদের মাঝে মাছ ধরাকে পেশা হিসেবে গ্রহণের ক্ষেত্রে এক ধরনের সাধারণ অনীহা থাকলেও বিশ শতকের গোড়ার দিকে তাদের মধ্যে মৎস্য বিপণন কর্মে সম্পৃক্ত হওয়ার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। যে সকল মুসলমান মৎস্য আহরণ ও তৎসম্পর্কিত পেশায় অংশগ্রহণ করত তাদেরকে সমাজের অন্যান্য পেশায় নিয়োজিতদের সাথে আলাদা গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করার ব্যতিক্রমধর্মী প্রয়াসও লক্ষণীয়। মৎস্য পেশার সাথে সম্পর্কযুক্ত এ সকল জনগোষ্ঠীকে শুধু আলাদাভাবেই চিহ্নিত করা হয় নি, তাদেরকে হিন্দু ধর্মের বর্ণপ্রথার মতোই বর্ণে বিভাজিত করা হয়েছে, অথচ মুসলমানরা জাতি-বর্ণ প্রথায় বিশ্বাসী নয়। মৎস্য আহরণ বা তৎসম্পর্কিত পেশায় নিয়োজিত মুসলমানদের ক্ষেত্রেও দেশের ভিন্ন ভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন সামাজিক পরিচিতি লক্ষণীয়। এগুলি হচ্ছে মহিফারোশ অথবা মহিমল (ফারসি শব্দ মহি অর্থ মাছ, এবং ফারোশ অর্থ বিক্রেতা), দালাইট্যা, নিকারি, গুটিয়া, জেলে, জিয়ানি, ধাওয়া, আবদাল এবং বেবাজিয়া।

প্রাচীনকাল থেকেই বাংলাদেশের জেলে সম্প্রদায় জীবিকা নির্বাহের জন্য যৌথভাবে মাছ ধরা এবং চাষাবাদের উপর নির্ভরশীল। অধিকাংশ জেলে পরিবার মূলত মৎস্য আহরণের ওপর নির্ভরশীল হলেও তারা কৃষিকাজও করে থাকে। তাদের উৎপাদন কৌশল সেকেলে ধরনের। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই, অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে মৎস্য শিকারিগণ যন্ত্রবিহীন দেশিয় নৌকা এবং প্রচলিত জাল ব্যবহার করে থাকে। তবে সমুদ্রগামী জেলেরা যন্ত্রচালিত নৌকা এবং আধুনিক জালের ব্যবহার করে।

মৎস্য আহরণের উপকরণসমূহের মালিকানা সমষ্টিগত নয়, একান্তই ব্যক্তিগত। তবে, মাছধরার ক্ষেত্রে তারা ব্যক্তিগত এবং যৌথ উভয়বিধ উদ্যোগের উপরই নির্ভরশীল। মালিকগণ তাদের উপকরণসমূহকে নিজস্ব উদ্যোগে অথবা অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে অন্যদের সাথে যৌথভাবে ব্যবহার করে থাকে। সাধারণত যৌথ পরিচালনার ক্ষেত্রে অংশীদার হিসেবে নিকট আত্মীয়দেরই প্রাধান্য দেওয়া হয়। তবে নিকট আত্মীয়দের অভাব হলে প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব এবং গ্রামের অন্যান্য সদস্যদেরও দলে নেওয়া হয়। হিন্দু জেলেরা কোনোক্রমেই তাদের সম্প্রদায়ের বাইরের লোকদেরকে দলগত আহরণ প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে অংশীদার করে না।

মাছ ধরার কৌশলগত ধরন এবং ঋতুভেদে জেলেদের আয়ের পরিমাণ ভিন্ন হয়ে থাকে। শুকনো মৌসুমের তুলনায় ভরা মৌসুমে মাছের উৎপাদন বেশি হয় বলে জেলেদের আয়ও বেড়ে যায়। আবার একই ঋতুতে মৎস্য আহরণ ও আয় ভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। আয় অসমতার এ ধরনের বাস্তবতা প্রতিফলিত করে যে, তারা সাধারণত সমআয়গোষ্ঠীর নয়। বস্ত্তত, তাদের মধ্যে নিজস্ব অবস্থা উন্নয়নের সামর্থ্য ও সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

মাছ বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে জেলেদের মাঝে বিনিময় প্রথার চেয়ে নগদ বিক্রয় প্রবণতাই বেশি। দৈনন্দিন আহরণ সরাসরি অথবা স্থানীয়ভাবে পরিচিত নিকারি এবং আড়তদারদের মাধ্যমে বাজারজাত করা হয়। তবে এ বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়ায় তারা নিকারি অথবা আড়তদারদের সাথে এমন এক ধরনের সুদমুক্ত ঋণ-সম্পর্ক জালে আবদ্ধ হয় যেখানে এ সকল মধ্যস্বত্বভোগীরা ওজনের অথবা বাজারমূল্যের হেরফের ঘটিয়ে জেলেদেরকে ঠকিয়ে থাকে।

মাছ ধরার পাশাপাশি জেলেরা কৃষি, দিনমজুরি, জাল এবং মাদুর তৈরির মতো কতিপয় মৎস্য বহির্ভূত অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করে থাকে, যা থেকে তারা অতিরিক্ত কিছু আয়ের বন্দোবস্ত করতে পারে।

জেলে জীবনে নদী, নৌকা, জাল, মাঝি-মাল্লা, মৎস্য আহরণ ও বিপণন ইত্যাকার বিষয়কে কেন্দ্র করে এমন এক অনন্য সংস্কৃতির উদ্ভব ঘটে যা একান্তই তাদের নিজস্ব। তারা তাদের সংস্কৃতিক ঐক্য এবং স্বাতন্ত্র্য সম্পর্কে খুবই সচেতন। জীবন নির্বাহের নিজস্ব বিধি-বিধানের ওপর তারা যেমন অত্যন্ত আস্থাশীল, তেমনি দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ মূল্যবোধসমূহের যথার্থতা সম্পর্কেও তাদের রয়েছে অগাধ বিশ্বাস। সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারা জ্ঞাতিসম্পর্ককে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। সমাজজীবনের সুখ-দুঃখ ও সংকটে জ্ঞাতিগোষ্ঠীই তাদের অন্যতম ভরসা। এমনকি নদীতে কাজ করার সময়ও অন্যান্যদের তুলনায় জ্ঞাতিগোষ্ঠীর সদস্যরা যেকোনো ধরনের অনিশ্চয়তার ক্ষেত্রে অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য।

জেলেদের সুদীর্ঘ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মাঝে এমন কিছু প্রচলিত বিশ্বাস ও মূল্যবোধ রয়েছে যা তাদের জীবন নির্বাহের বিভিন্ন ক্ষেত্রে, বিশেষ করে আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব আয়োজনের সাথে একাত্ম হয়ে আছে। যেহেতু তাদের ওপর হিন্দু জনগণকে সেবা করার পবিত্র দায়িত্ব অর্পিত হয়, তাই তাদের পেশা থেকে কোনোরকম বিচ্যুতি এক ধরনের অধর্ম ও পাপ। তাই এ ধরনের ধর্মীয় বিশ্বাসকে কেন্দ্র করে তাদের মাঝে বিভিন্ন ধরনের আচার অনুষ্ঠানের ঐতিহ্য গড়ে উঠেছে। মৎস্য আহরণ বৃদ্ধি এবং বিপদমুক্তভাবে নদীতে কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য তারা গঙ্গা পূজা করে থাকে। অন্যদিকে মুসলমান জেলেরা মাছ ধরাকে ধর্মীয় দিক থেকে বিবেচনা না করলেও বিভিন্ন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনের মাধ্যমে পেশাগত জীবনে নিশ্চয়তা এবং সাফল্য অর্জনে প্রবৃত্ত হয়। বিশেষ করে নদীতে নৌকা ভাসানো এবং মাছ ধরা অথবা বিপণন কর্মকান্ডে সাফল্য অর্জনের জন্য ধর্মীয় প্রার্থনা, মিলাদ মাহ্ফিল আয়োজন, দরগায় শির্নি অথবা মানত বা দান করে থাকে।

সামাজিক এবং অর্থনৈতিক কর্মপরিবেশের সাথে সামঞ্জস্য রেখে জেলেদের মাঝে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ধরনের গল্প ও কাহিনী, লোকাচার ও লোকগীতি, ধাঁধা ও কৌতুক, যাত্রা ও পালাগান, যা তাদের একান্তই নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের নান্দনিক সৌন্দর্যকে তুলে ধরে। বিভিন্ন ধরনের  লোকসঙ্গীত যেমন পল্লীগীতি, বাউল, ভাটিয়ালি, জারি, সারি গান গেয়ে তারা দৈনন্দিন কাজের মধ্যে যেমন মানসিক তৃপ্তি লাভ করে তেমনি অর্জন করে নতুন কর্মোদ্দীপনা। এসব লোকসঙ্গীতের যেমনি আছে তাল ও লয়, তেমনি এগুলির মাঝে রয়েছে এমন এক ধরনের লোকজ রচনারীতি যার উপজীব্য বিষয়সমূহ সংগৃহীত হয় দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন বিষয় থেকে। বস্ত্তত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এ সকল উপাদানগুলি তাদের ঐক্য ও সংহতিকে এমনভাবে দৃঢ় করেছে যা তাদেরকে অন্যদের তুলনায় আলাদা সত্তা হিসেবে প্রতীকায়িত করে।

সামাজিক মর্যাদার বিন্যাসে বাংলাদেশের জেলেরা আবহমানকাল থেকেই নীচু অবস্থানে রয়েছে। কবি মুকুন্দরামের চন্ডীমঙ্গল কাব্যের ভিত্তিতে জে.এন দাশগুপ্ত ষোড়শ শতকের গ্রামবাংলার বিভিন্ন পেশাজীবী গোষ্ঠীর উঁচু-নীচু অবস্থান নিরূপণ করতে গিয়ে জেলেদেরকে অন্ত্যজ জনগোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এক্ষেত্রে এ.কে.এন করিম-এর অভিমত হচ্ছে, যেহেতু বাংলায় শিকার এবং মাছ ধরা অত্যন্ত প্রাচীন পেশা সেহেতু এদেশে আগমন করে দখলদারিত্ব কায়েমকারী বহিরাগতরা এ সকল পেশাকে অত্যন্ত নীচু জ্ঞান করত। আসলে পুরাকাল থেকেই হিন্দু জাতিভেদ প্রথানুসারে মৎস্যজীবিগণ অন্ত্যজ শ্রেণীভুক্ত। হান্টার এবং রিজলে তাঁদের গবেষণামূলক প্রতিবেদনে বাংলার হিন্দু জেলে সম্প্রদায়কে সামাজিক মর্যাদার দিক থেকে অত্যন্ত নীচু স্তরের বলে উল্লেখ করেছেন। অন্যদিকে, মুসলমানদের ক্ষেত্রে উঁচু-নীচু ভেদাভেদের বিষয়টি হিন্দুদের মতো প্রকট না হলেও মৎস্যজীবী মুসলমানগণ অন্যান্য পেশাজীবী মুসলমানদের দৃষ্টিতে নীচু এবং নিকারি ইত্যাকার মুসলমান মৎস্যজীবীদেরকে এতই নীচ অবস্থানে দেখানো হয়েছে যে, কোনো উচ্চ শ্রেণীর মুসলমান নিঃসংকোচে তাদের সাথে মেলামেশা করা থেকেও বিরত থাকত। অবশ্য ইদানীং দেশে রপ্তানিমুখী মৎস্য অর্থনীতি প্রবর্তনের ফলে মুসলমান মৎস্যজীবীদের প্রতি প্রচলিত হেয় দৃষ্টি ক্রমান্বয়েই দূরীভূত হচ্ছে।

বাংলাদেশের মৎস্যজীবী সম্পদায়ের সহজ-সরল জীবনধারার বিভিন্ন ক্ষেত্রে ক্রমেই পরিবর্তন সূচিত হচ্ছে। ধীরে ধীরে মানুষ বাড়ছে অথচ মৎস্য আহরণের উৎসভূমিগুলি সংকুচিত হয়ে আসছে। ফলে জীবিকা নির্বাহের ক্রমবর্ধমান জটিলতা আগের অর্থোপার্জন পদ্ধতি থেকে তাদের বিচ্ছিন্ন করছে। আধুনিক নাগরিক সভ্যতা ও গণমাধ্যমের আগ্রাসী প্রভাব সৃষ্টি করছে নতুন নতুন ভোগ্যপণ্যের ব্যবহার ও সামাজিক সুবিধাদি অর্জনের আকাঙ্ক্ষা। তাছাড়া, রপ্তানিমুখী মৎস্য অর্থনীতির প্রসার জেলেদের মধ্যে সূচিত করছে উৎপাদন বৃদ্ধির এক নীতিহীন প্রতিযোগিতার, যা তাদের সনাতন নৈতিক মূল্যবোধগুলিকে দুর্বল করে দিচ্ছে। এভাবে প্রচলিত জীবনপদ্ধতির অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েনে মূল্যবোধগুলি ক্রমেই ভেঙে পড়ছে, সৃষ্টি হচ্ছে নতুন উপলব্ধি ও জীবন নির্বাহের তাগিদ। বস্ত্তত আধুনিক সভ্যতার সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিভিন্নমুখী চাপের কারণে জেলে জীবনের সুদীর্ঘ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও মূল্যবোধের যে আবেগময় আকর্ষণ তা হ্রাস পাচ্ছে। তারা ক্রমাগতভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে জাতীয় প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা এবং বাজার অর্থনীতির ওপর। [মো. আনোয়ার হোসেন]