জালালুদ্দীন ফতেহ শাহ

জালালুদ্দীন ফতেহ শাহ  ৮৮৬ হিজরি (১৪৮১ খ্রি) থেকে ৮৯২ হিজরি (১৪৮৭ খ্রি) পর্যন্ত বাংলার সুলতান ছিলেন। সিংহাসনে আরোহণ করে তিনি জালালুদ্দীন আবুল মুজাফফর ফতেহ শাহ উপাধি ধারণ করেন। তিনি ছিলেন সুলতান নাসিরুদ্দীন মাহমুদ শাহ এর পুত্র এবং সুলতান রুকনুদ্দীন বারবক শাহ এর ভাই।

ফতেহ শাহ কোনো সামরিক অভিযান করেছেন এমন উল্লেখ কোথাও পাওয়া যায় না। কিন্তু  মুদ্রা ও  শিলালিপি প্রমাণে অনুমান করা যায় যে, তিনি এক বিস্তীর্ণ রাজ্য শাসন করেন। এ রাজ্য পূর্বে সিলেট এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে দামোদর নদ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।

ফারসি ভাষায় ইতিহাস লেখকগণ ফতেহ শাহকে বিজ্ঞ ও বিচক্ষণ সুলতান বলে বর্ণনা করেন। তিনি তাঁর প্রজাদের সম্পর্কে উদার নীতি অনুসরণ করেন এবং পদমর্যাদা ও অবস্থা অনুসারে তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দেন। তাঁর সময়ে জনগণ সুখী ও সমৃদ্ধ ছিল। জালালুদ্দীন ফতেহ শাহ একজন উঁচুদরের নির্মাতা ছিলেন। তিনি বেশ কয়েকটি মসজিদ নির্মাণ করেন।

তাঁর রাজত্বকালের শেষের দিকে হাবশী ক্রীতদাসগণ খুবই শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং বাংলার রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ সময়ে তারা দরবারের গুরুত্বপূর্ণ অধিকাংশ পদগুলি দখল করে নেয়। তাঁরা সুলতানের প্রাসাদ-রক্ষী বাহিনীতেও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। ফতেহ শাহ হাবশীদের ক্রমবর্ধমান শক্তির বিপদ উপলব্ধি করে তাদের প্রভাব হ্রাস করার লক্ষ্যে কতিপয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তারা প্রাসাদ-রক্ষীদের নায়ক শাহজাদার নেতৃত্বে সুলতানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র পাকিয়ে তোলে এবং ৮৯২ হিজরিতে (১৪৮৭ খ্রি) সুলতান তাদের হাতে নিহত হন। ফতেহ শাহের হত্যার পর ইলিয়াসশাহী বংশের শাসনের অবসান হয়।  [এ.বি.এম শামসুদ্দীন আহমদ]