জাতীয় রাজস্ব বোর্ড

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সরকারের সামগ্রিক রাজস্ব ব্যবস্থাপনার কাজে নিয়োজিত অর্থ মন্ত্রণালয়াধীন একটি সংস্থা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড অর্জিত রাজস্ব দেশের বাজেট বাস্তবায়নে অভ্যন্তরীণ সম্পদের অন্যতম উৎস এবং দেশ ও অর্থনীতির স্বয়ম্ভরতা অর্জনের অন্যতম নিয়ামক। রাজস্ব আহরণ উপলক্ষ্যে গৃহীত ব্যবস্থাদি যা সরকারের রাজস্ব নীতি বা ফিসক্যাল পলিসির পর্যায়ভুক্ত, তার একটা কার্যকারণগত প্রভাব পড়ে দেশের শিল্পায়ন, ব্যবসাবাণিজ্য ও বিনিয়োগ পরিবেশে। রাজস্ব বোর্ডের ভূমিকা, এখতিয়ার ও প্রধান কার্যাবলীর মধ্যে রয়েছে (১) প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর আরোপ, পরীক্ষণ, পরিবীক্ষণ ও আহরণ; (২) প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর আহরণ সম্পর্কিত আইন, বিধি-বিধান প্রণয়ন ও প্রয়োগে ব্যাখ্যা প্রদান এবং বিশ্লেষণ; (৩) জ্ঞানভিত্তিক, ন্যায়নীতি নির্ভর এবং গ্রাহক বান্ধব পরিবেশে আমদানি ও রপ্তানি শুল্ক, <মূল্য সংযোজন কর>, সম্পূরক শুল্ক, আবগারী ও আয়কর আহরণে নিয়োজিত দপ্তরসমূহের কার্যক্রম পরিবীক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ; (৪) কর নীতি ও আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ায়, রাজস্ব বাজেট প্রস্তুতকরণে, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশসমূহের সঙ্গে সাধারণ সহযোগিতা চুক্তি, অনুদান ও ঋণ সংক্রান্ত চুক্তি এবং কর সংক্রান্ত চুক্তি সম্পাদনে সহায়তা প্রদান; (৫) প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করের ক্ষেত্রে অব্যাহতি ও রেয়াত এর আওতা ও শর্ত নির্ধারণ; (৬) স্বেচ্ছা প্রতিপালনে উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে করদাতা এবং রাজস্ব আহরণের পরিধি বৃদ্ধি ও সঠিক কর নিরূপনের লক্ষ্যে তথ্য সংগ্রহ ও গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনা; (৭) কর ফাঁকি রোধ, চোরাচালান প্রতিরোধ, আমদানি-রপ্তানি নীতি বাস্তবায়ন, দেশীয় শিল্পের সংরক্ষণ ও বিকাশ এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্যে সরকারি নীতি প্রণয়ন।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ভবন, আগারগাঁও, ঢাকা

বাংলাদেশের রাজস্ব ব্যবস্থায় রাজস্বের দুটি উৎস রয়েছে: ক) কর রাজস্ব, যা আবার এনবিআর কর ও নন-এনবিআর কর, এবং খ) কর-বহির্ভুত রাজস্ব। প্রধান উৎসটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) দ্বারা পরিচালিত হয়। এনবিআর নয় এমন খাত থেকে এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের আইন ও কর্মের অধীনেও রাজস্ব আয় হয়। এনবিআর করের মধ্যে রয়েছে শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট), পরিপূরক শুল্ক (এসডি), ব্যক্তিগত আয়কর (পিআইটি) এবং কর্পোরেট আয়কর (সিআইটি)। ব্যক্তিগত এবং কর্পোরেট আয়কর, প্রত্যক্ষ করের একক বৃহত্তম উৎস, আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ (XXXVI of 1984) দ্বারা পরিচালিত হয়।

প্রত্যক্ষ উৎস থেকে আর্থিক আয় ছাড়াও বাংলাদেশ আমদানি ও আবগারি শুল্ক (বহিঃশুল্ক) এর মাধ্যমে পরোক্ষ উৎস থেকে তার রাজস্বের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আহরিত হয়ে থাকে। বহিঃশুল্ক সাধারণত নিম্নলিখিত পণ্যের উপর প্রদেয় হয়: ক) আমদানি ও রপ্তানি পণ্য; খ) যে কোনো দেশ থেকে কোনো শুল্ক স্টেশনে আনা পণ্য এবং সেখানে শুল্ক পরিশোধ না করে, ট্রান্সশিপ বা সেখান থেকে অন্য কোনো শুল্ক স্টেশনে নিয়ে যাওয়া এবং আমদানি করা; এবং গ) এক শুল্ক স্টেশন থেকে অন্য শুল্ক স্টেশনে আনা পণ্য। শুল্ক এবং আবগারি শুল্ক সম্পর্কিত প্রধান আইন হল: কেন্দ্রীয় আবগারি ও লবণ আইন, ১৯৪৪; কেন্দ্রীয় আবগারি ও লবণ বিধি, ১৯৪৪; সংরক্ষণ শুলক আইন, ১৯৫০; কাস্টমস বা বহিঃশুল্ক আইন, ১৯৬৯/২০০০।

১৯৮০-এর দশকের শেষ পর্যন্ত বহিঃশুল্ক ছিল কর রাজস্বের সবচেয়ে বড় খাত। পরবর্তীকালে বিশ্ববাজারে চাহিদা ও উদার বানিজ্যনীতির কারণে এ খাতে আয় ব্যাপকভাবে হ্রাস পেতে শুরু করে। এছাড়াও ট্রেডিং থেকে স্থানীয় উৎপাদনে অর্থনীতির স্থানান্তরের কারণে তখন রাজস্ব আহরনৈর জন্য অন্যান্য বিকল্পের কথা চিন্তা করা প্রয়োজন হয়ে পড়ে। সেই প্রেক্ষিতে, ১৯৮৬ সালে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশে ভ্যাট চালু করার পরামর্শ দেয়। Sales Tax Ordinance, 1982 এবং Business Turnover Tax Ordinance, 1982 বাস্তবায়নে জটিলতা ও অপারগতা বাংলাদেশে মূসক প্রবর্তনকে উদবুদ্ধ করে। এ দুটি অধ্যাদেশের পরিবর্তে বৃহত্তর রাজস্ব আয় এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি উদ্দীপিত করার লক্ষ্যে, ভ্যাট বিল ১৯৯১ জাতীয় সংসদে ১লা জুন ১৯৯১-এ প্রস্তাব করা হয় এবং এক মাস পরে বিলটি পাস করে ভ্যাট আইন ১৯৯১ প্রবর্তিত হয়। ভ্যাট আইন, ১৯৯১-এ ৭০টিরও বেশি ধারা আছে যা ভ্যাট সংক্রান্ত বিষয়ে (রেজিস্ট্রেশন থেকে শুরু করে অসম্মতিতে জরিমানা আরোপ পর্যন্ত) সামগ্রিক নির্দেশনা দেয়। পরিস্থিতি সাপেক্ষে আইনের আওতায় ভ্যাট কর্তৃপক্ষ যে তিনটি করের বিষয়ে ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে তাও নির্দেশ করে।

বিভিন্ন সময় বাংলাদেশে কর আইনের কিছু নীতিগত সংষ্কারধর্মী পর্যালোচনা হয়েছে কিন্তু এগুলো খুব বেশি কার্যকর হয়নি। আয়কর আইনটি আয়কর অধ্যাদেশ হিসেবে ১৯৮৪ সালে সামরিক শাসনের অধীনে প্রবর্তিত হয়েছিল। ১৯৮৪ সালের অধ্যাদেশ অনুসারে আয়ের সাত ধরণের আয়ের উপর কর আরোপ করা হয়: বেতন, জামানতের সুদ, বাড়ি বা সম্পত্তি থেকে আয়, কৃষি আয়, ব্যবসা বা পেশা থেকে আয়, মূলধন লাভ এবং অন্যান্য উৎস থেকে আয় (আয়কর ম্যানুয়াল পার্ট-১, ২০০৯)।

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে কর ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য উল্লেখযোগ্য সরলীকরণ করা হয়েছে। কর মূল্যায়নের জটিলতা কমানো হয়েছে আরও করদাতাদের সম্পৃক্ত চেষ্টা চালানো হয়েছে। কর আদায়ের স্ট্যান্ডার্ড ও সিস্টেমের সাথে সামঞ্জস্য রেখে অটোমেশন প্রবর্তিত হয়েছে। এনবিআর থেকে করদাতাদের সম্মান ও তাদের অবদানের স্বীকৃতি দেওয়ার অনুশীলন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। আইনগত সংস্কারের ক্ষেত্রে, ২০১২ সালের নতুন মূল্য সংযোজন কর এবং সম্পুরক শুল্ক আইন প্রণয়ন করা হয় যা প্রায় সাত বছর পর জুলাই,২০১৯ এ কার্যকর হয়। সরকারের ওয়েবসাইটে একটি খসড়া করবিধি প্রকাশ করা হয় এবং এর উপর ভিত্তি করে সংসদে আইন প্রণয়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। পরবর্তী বছরগুলিতে বাজেটে আমদানি ও সম্পূরক শুল্কের হার ব্যাপক হ্রাসের পরিকল্পনা রয়েছে যা অবশেষে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) সহ রাজস্ব সংগ্রহের বোঝা ব্যক্তিগত এবং কর্পোরেট করের দিকে নিয়ে যাবে।

আয়ের পুনর্বণ্টন, মূল্য স্থিতিশীলতা এবং ক্ষতিকারক দ্রব্যের ব্যবহারকে নিরুৎসাহিত করার মতো কিছু অর্থনৈতিক ও সামাজিক উদ্দেশ্য পূরণ করার লক্ষ্যে রাজস্ব এবং উন্নয়ন ব্যয় প্রয়োজন। যাইহোক, বাংলাদেশে রাজস্ব কাঠামো জটিল এবং কেন্দ্রীভুত, এবং এতে বেশ কয়েকটি সংস্থা, বিভাগ এবং মন্ত্রণালয় জড়িত। সংগৃহিত সকল রাজস্ব একই ঝুড়িতে (বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট নম্বর ১) এসে জমা হয়, যা পরবর্তীতে বার্ষিক বাজেট বরাদ্দ, প্রকল্প, অনুদান ইত্যাদির মাধ্যমে বিতরণ করা হয়।

একটি ন্যায়সঙ্গত করব্যবস্থা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মৌলিক ধারণাগুলির মধ্যে একটি হল ভিত্তিকে ব্যাপকতরকরণ যার অর্থ হল করের পরিমাণ বা অর্থনীতির সেক্টরকে যতটা সম্ভব বিস্তৃত করা যাতে ব্যক্তিগত করের বোঝা কমানো যায়। পণ্য বা পরিষেবার উপর আরোপিত পরোক্ষ কর (যেমন ভ্যাট) ধনী ও দরিদ্রকে সমানভাবে প্রভাবিত করে, প্রত্যক্ষ কর একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর উপর বোঝা সৃষ্টি করতে পারে। পণ্য ও সেবার চূড়ান্ত ভোক্তা থেকে রাজস্ব আদায় করতেই পরোক্ষ কর আরোপ করা হয়। এটি পুনরায় সমাজেই আর্থিক খাতেই ফিরে আসে। এ কারণে, পরোক্ষ করকে প্রত্যাবর্তনশীল হিসেবে দেখা যেতে পারে কারণ এটি ধনীদের তুলনায় দরিদ্রদের উপর অধিক বোঝা (সম্পদের তুলনায়) চাপিয়ে দেয়। প্রত্যক্ষ করের বিপরীতে, করদাতা এবং করবহনকারী একই ব্যক্তি নন। অতএব, একজন ব্যক্তির উপর করের বোঝা কমাতে, প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ উভয় উৎসের ন্যায়সঙ্গত ভারসাম্যের সঙ্গে কর ব্যবস্থাকে বৈচিত্র্যময় ও বিস্তৃত হতে হবে।

সরকারি আয়ের প্রধান (শতকরা ৮০ ভাগের বেশি) উৎস হলো কর রাজস্ব বাবদ সংগৃহীত অর্থ। অবশিষ্ট রাজস্ব সংগৃহীত হয় কর-বহির্ভূত বিভিন্ন খাতের রাজস্ব আদায় (ফি, মাসুল ইত্যাদি) থেকে। রাজস্ব সংগ্রহের হার একটি দেশের উনয়নের স্তর বা অবস্থান নির্ধারণের অন্যতম স্বীকৃত নির্ণায়ক । যে দেশের অর্থনীতি যত শক্তিশালী সেখানকার রাজস্ব সংগ্রহের হারও তত বেশি। বাংলাদেশে মোট ‘রাজস্ব-দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) অনুপাত’ থেকে দেখা যায় যে, রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত ক্রমাগত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে তবে বৃদ্ধির হার স্বল্প এবং গতি ধীর।

বাংলাদেশ কর জিডিপি রেশিও (বিলিয়ন টাকায়)

অর্থবছর এনবিআর (কর) নন এনবিআর (কর) মোট কর রাজস্ব জিডিপি কর জিডিপি অনুপাত (%)
১৯৭২-৭৩ ১.৬ ০.১ ১.৭ ৫০ ৩.৪
১৯৭৭-৭৮ ১০.০ ০.৩ ১০.৩ ১৪৫ ৭.১০
১৯৮২-৮৩ ২০.২ ১.৩ ২১.৬ ২৯৪ ৭.৩৪
১৯৮৭-৮৮ ৩৯.৫ ৩.৮ ৪৩.৭ ৫৯৭ ৭.৩১
১৯৯২-৯৩ ৮৬.৪ ৪.৬ ৯১.০ ১২৫৪ ৭.২৬
১৯৯৭-৯৮ ১৩৮.০ ১৫.৯ ১৫৩.৯ ২০০২ ৭.৬৯
২০০২-০৩ ২৩৭.৫ ১২.০ ২৪৯.৫ ৩০০৫ ৮.৩০
২০০৬-০৭ ৩৭৪.৮ ১৭.৭ ৩৯২.৫ ৪৭২০ ৮.৩২
২০০৭-০৮ ৪৭৪.৬ ২০.৪ ৪৯৫.০ ৫৪৫৮ ৯.০৭
২০০৮-০৯ ৫২৫.৩ ২৫.৩ ৫৫০.৬ ৭০৫১ ৭.৮০
২০১৭-১৮ ২২৫০ ৭২ ২৩২২ ২২৫০৫ ১০.৩১
২০১৮-১৯ ২৮০০ ৯৬ ২৮৯৬ ২৫৪২৫ ১১.৩৯
২০১৯-২০ ৩০০৫ ১২৬ ৩১৩১ ২৭৯৬৪ ১১.১৯

উৎস অর্থ বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক জরিপ।

কেন্দ্রীয় রাজস্ব বোর্ড আইন ১৯২৪ (১৯২৪ সনের ৪ নম্বর আইন) বাতিল করে ১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির আদেশ নং ৭৬ (The National Board of Revenue Order, 1972) বলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীকালে ২০০৯ সালের ১২ নং আইনে রাজস্ব বোর্ডের গঠন প্রক্রিয়ায় সংশোধন আনা হয়। প্রত্যক্ষ করের ৭ জন এবং পরোক্ষ করের ৬ জন এবং রাজস্ববোর্ড প্রশাসন মোট ১৪ জন সদস্য ও ১ জন চেয়ারম্যান সমন্বয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড গঠিত। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব পদাধিকারবলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান। সদস্যগণের পদমর্যাদা পদাধিকার বলে অতিরিক্ত সচিব এর সমান। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অধীনে দপ্তর, অধিদপ্তর/পরিদপ্তরের মোট সংখ্যা ৮২। প্রত্যক্ষ কর সম্পৃক্ত দপ্তরের সংখ্যা ৪৬। তন্মধ্যে প্রত্যক্ষ কর রাজস্ব আহরণ সংক্রাšত জোন সংখ্যা ৩৮। অবশিষ্ট দপ্তরগুলির মধ্যে ৫টি আপীল কার্যক্রম, ১টি প্রশিক্ষণ একাডেমি, ১টি পরিদর্শন ও ১টি জরিপ কাজে নিয়োজিত রয়েছে। পরোক্ষ কর সম্পৃক্ত দপ্তরের সংখ্যা ৩৬। তন্মধ্যে পরোক্ষ কর রাজস্ব আহরণ সংক্রান্ত দপ্তরের সংখ্যা ৩০। অবশিষ্ট দপ্তরগুলির মধ্যে ১টি আপিল, ১টি গোয়েন্দা ও তদন্ত, ১টি পরিদর্শন, ১টি রেয়াত ও প্রত্যর্পণ, ১টি প্রশিক্ষণ এবং ১টি পণ্য মূল্যায়ন (ভ্যালুয়েশন) দপ্তর রয়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের শুল্ক অনুবিভাগের অধীনস্থ বিভাগসমূহ দেশের সামগ্রিক আমদানি ও রপ্তানি পণ্যের শুল্কায়নসহ যাবতীয় কার্যক্রম বিভিন্ন আইনের বিধান প্রয়োগ, প্রক্রিয়া, পরিবীক্ষণ ও বাস্তবায়ন করে থাকে। শুল্ক আহরণ প্রধান দায়িত্ব হলেও বিভিন্ন আইনের বিধান প্রয়োগসহ বাণিজ্য উদারীকরণ ও সহজীকরণ এসব বিভাগের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। দেশব্যাপি ১১টি কাস্টমস হাউস, ১টি বন্ড কমিশনারেট, ১টি শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর, ১টি শুল্ক মূল্যায়ন ও অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিশনারেট এবং দেশের বিভিন্নস্থানে অবস্থিত মোট ২৮টি কার্যকর স্থল শুল্ক স্টেশনের মাধ্যমে এসব কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। পক্ষান্তরে মূল্য সংযোজন কর অনুবিভাগের অধীন দেশব্যাপী অবস্থিত ২টি অধিদপ্তর এবং ৮টি মূসক কমিশনারেট এর আওতাভুক্ত ৪০টি বিভাগ ও ২১২টি সার্কেল কার্যালয় রয়েছে। একটি আধুনিক, করদাতা বান্ধব, জবাবদিহিমূলক ও গতিশীল রাজস্ব প্রশাসন প্রতিষ্ঠা, দেশীয় উৎস হতে রাজস্ব বৃদ্ধি এবং দেশের শিল্পোন্নয়ন, ব্যবসা ও বাণিজ্য সম্প্রসারণে কার্যকর ভূমিকা রাখাতে মূল্য সংযোজন কর অনুবিভাগের কর্মপরিধি পরিব্যাপ্ত। প্রত্যক্ষ কর অর্থাৎ আয়কর অনুবিভাগের অধীনে দেশব্যাপী ১৮টি অধিক্ষেত্রভুক্ত কর অঞ্চল এবং ৫টি আপীলাত কর অঞ্চল এবং ২টি পরিদপ্তর রয়েছে। ৩৮টি অধিক্ষেত্রভুক্ত কর অঞ্চলের অধীনে মোট ৪০২টি সার্কেল রয়েছে। আয়কর আইন যথাযথ পরিপালন নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে দেশের শিল্প ও বাণিজ্যকে সহায়তা প্রদানসহ আয়ের বৈষম্য নিরসনের মাধ্যমে সামাজিক ভারসাম্য রক্ষার অবদান রাখা আয়কর অনুবিভাগের অন্যতম কর্তব্য।

এ ছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের সরাসরি তত্ত্বাবধানে সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি) গোয়েন্দা কার্যক্রমের মাধ্যমে করদাতাদের তথ্য সংগ্রহ; গোয়েন্দা কার্যক্রমের মাধ্যমে মূল্য সংযোজন কর এবং শুল্ক সংক্রান্ত বিষয়ে ও শুল্ক-কর ফাঁকি রোধে তথ্য সংগ্রহ ও তদন্তের কাজ; প্রাপ্ত তথ্যাদি ও করদাতাদের আয়কর রেকর্ড বিশ্লেষণ; করদাতাদের আয়কর পরিহার, আয়গোপন ও আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী অপরাধসমূহ সনাক্তকরণ; কর পরিহার, আয়গোপন, আয়কর সংক্রান্ত যে কোনো অনিয়ম, কর জালিয়াতি ইত্যাদি বিষয়ে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা, সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ, জরিমানা আদায় ও প্রয়োজন বোধে ফৌজদারি কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকে। জাতীয় রাজস্ব বোর্র্ডের গবেষণা ও পরিসংখ্যান অনুবিভাগ বোর্ডের অধীনস্থ মাঠ পর্যায়ের দপ্তর হতে রাজস্ব আয় সংক্রান্ত তথ্যাদি সংগ্রহপূর্বক বিন্যাস, সমন্বয় ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ সম্পন্ন করে। [মোহাম্মদ আবদুল মজিদ]