ছারপোকা

ছারপোকা (Bedbug)  ক্ষুদ্র, রক্ত শোষণকারী, বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত Hemiptera বর্গের Cimicidae গোত্রের সব প্রজাতির সাধারণ নাম। ছারপোকার প্রকৃত ডানা নেই, ছোট অাঁশের মতো দুটি প্যাড দেহের পৃষ্ঠভাগে প্রথম জোড়া ডানার স্বাক্ষর বহন করে। এদের মুখোপাঙ্গ ছিদ্র এবং চোষণ করার উপযোগী; বর্গের অন্যান্য সদস্যদের মতো এটি মাথার সামনের দিকে অঙ্কীয়ভাগ থেকে শুঁড়ের মতো বের হয়। সব ছারপোকাই ছোট, লম্বায় প্রায় ছয় মিমি, ডিম্বাকার, লালচে-ধূসর বর্ণের। দেহের উপর-নিচ যথেষ্ট চ্যাপটা, ত্বক মোটামুটি শক্ত। ছয়টি পা বেশ ছোট, এক জোড়া পুঞ্জাক্ষি থাকলেও সরল চোখ অনুপস্থিত। ছারপোকা উষ্ণ রক্তের প্রাণীর বহিঃপরজীবী; এরা মানুষ, বাদুড় ও বিভিন্ন পাখির রক্ত শোষণ করে খায়। Cimex lectularius, C. hemipterus এবং C. rotandatus প্রজাতি মানুষকে আক্রমণ করে।

ছারপোকা

বাংলাদেশের অতি পরিচিত ছারপোকা C. lectularius অনেক সময়ে গৃহ, হোটেল, ব্যারাক ও অন্যান্য আবাসস্থানের এক বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এ প্রজাতির বিস্তৃতি পৃথিবীব্যাপী। এরা নিশাচর। দিনে খাট, পালঙ্ক, চেয়ার ও অন্যান্য আবসাবপত্রের ফাঁকে, গদি, বালিশ এবং তোষকের ভাঁজে, এমনকি দেয়ালের ফাটলের মধ্যেও লুকিয়ে থাকে। দেহ অত্যন্ত পাতলা ও চ্যাপটা হওয়ায় সহজেই ফাঁক-ফোকরে এরা ঢুকতে পারে। দেহের অঙ্কীয়ভাগের দুটি গ্রন্থি থেকে এরা দুর্গন্ধযুক্ত তৈলাক্ত দ্রব্য নিঃসরণ করতে পারে। স্ত্রী ছারপোকা সাধারণত ১০০-২৫০টি ডিম দেয়। উষ্ণ আবহাওয়ায় ডিম থেকে বড় হতে সময় লাগে প্রায় দুই মাস। বছরে এদের তিনটি অথবা চারটি প্রজন্ম হতে পারে। পূর্ণাঙ্গ ছারপোকা প্রায় এক বছর বাঁচে, এরা না খেয়েও কয়েক মাস বেঁচে থাকতে পারে। যদিও রোগের বাহক হিসেবে ছারপোকার তেমন ভূমিকা নেই, এদের জ্বালাময় কামড় অতি বিরক্তিকর।  [এস.এম হুমায়ুন কবির]