চৌধুরী, স্যামসন এইচ

স্যামসন এইচ চৌধুরী

চৌধুরী, স্যামসন এইচ (১৯২৫-২০১২)  শিল্পোদ্যোক্তা এবং মানব সম্পদ উন্নয়নে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব। ড. ই এইচ চৌধুরীর পুত্র স্যামসন এইচ চৌধুরী ১৯২৫ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ফরিদপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩০-৪০ সালের মধ্যে তিনি কলকাতার বিষ্ণুপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং সিনিয়র ক্যামব্রিজ ডিগ্রি অর্জন করেন।

স্যামসন এইচ চৌধুরী শুরুতে স্কয়ার ফার্মাসিটিউক্যাল (১৯৫৮) প্রতিষ্ঠা করেন যা ১৯১১ সালে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে পরিণত হয়। তিনি তাঁর স্কয়ার ফার্মাসিটিউক্যালকে ভিত্তি করেই পরবর্তী ব্যবসায়িক কম্যকাণ্ড সম্প্রসারিত করেন। স্যামসন চৌধুরীর অপরাপর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হলো: স্কয়ার টয়লেট্রিজ লি., স্কয়ার টেক্সটাইল লি., স্কয়ার স্পিনিং লি., স্কয়ার নিট ফ্যাব্রিক্স লি., স্কয়ার ফ্যাশন লি., স্কয়ার হসপিটাল লি., স্কয়ার অ্যাগ্রো ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড প্রোসেসিং লি., স্কয়ার ইনফরম্যাটিক্স লি., স্কয়ার হেলথ প্রোডাক্টস লি., স্কয়ার হারবাল অ্যান্ড নিউট্রাসিটিক্যালস লি., স্কয়ার কনজিউমার প্রোডাক্টস লি., ফার্মা প্যাকেজ প্রাইভেট লি., অ্যাসট্রাটস লি., বর্ণালি প্রিন্টার্স লি., অ্যাইজেস সার্ভিসেস লি., স্কয়ার সিকিউরিটিস ম্যানেজমেন্ট লি. প্রভৃতি। স্যামসন চৌধুরী শাহবাজপুর টি এ্যাস্টেটসহ চা শিল্পেও অর্থ বিনিয়োগ করেন।

এসব শিল্প-কারখানাতে তিনি কয়েক হাজার মিলিয়ন অর্থ বিনিয়োগ করেন যা দেশের বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে। স্কয়ার আর্মাসিটিক্যালস লিমিটেড বাংলাদেশের বৃহৎ ফার্মাসিটিউক্যাল কোম্পানিগুলির অন্যতম। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন যেখানে প্রায় ৪০০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করতেন। স্যামসন এইচ চৌধুরী তাঁর বিশেষ কর্মকাণ্ডের জন্য স্বীকৃতি লাভ করেন। ২০০৫ সালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড তাঁকে শ্রেষ্ঠ রাজস্ব প্রদানকারী হিসেবে চিহ্নিত করে। তিনি রাষ্ট্রের ভি আই পি (অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি) খেতাবে ভূষিত হন। উদ্যোক্তা সমাজে স্যামসন চৌধুরী ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের পথিকৃৎ হিসেবে বিবেচিত। তিনি বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশন (সাবেক ফোর্ড ফাউন্ডেশন), মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড, বাংলাদেশ হারবাল প্রোডাক্টস ম্যানুফেকচারিং অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজ, বাংলাদেশ ফার্মাসিটিউক্যাল অ্যাসোসিয়েশন, ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (বাংলাদেশ) এবং মেট্রোপলিটান চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব পালন করেন। দেশের শিল্প সংক্রান্ত ও বাণিজ্যিক উন্নয়নে তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য তিনি ব্যবসায়ী সম্প্রদায় থেকে যেসব সম্মাননা লাভ করেন তম্মধ্যে রয়েছে মার্কেন্টাইল ব্যাংক সম্মাননা (২০০৩), অনন্য ব্যবসায়ী নীতির জন্য ব্যাংকার্স ফোরাম অ্যাওয়ার্ড (২০০৫), ম্যানুফেকচারিং Best Published Accounts and Reports (২০০৬) এর জন্য আইসিএবি ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড। খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী স্যামসন এইচ চৌধুরী ছিলেন উদার মানবতাবাদী। তাঁর বদান্যতা ছিল ধর্ম ও আঞ্চলিকতার ঊর্ধ্বে। শাহবাজপুর টি এস্টেটর মুসলিম চাকুরিজীবীদের অনুরোধে তিনি সুজাউল মাদ্রাসা নামে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর শিল্প-কারখানায় কর্মরত সকল ধর্মের শ্রমিক ও দরিদ্র লোকদের নিকট স্যামসন চৌধুরী ছিলেন একজন উদার, জনহিতৈষী ব্যক্তিত্ব। ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি তাঁর মৃত্যু হয়। [সিরাজুল ইসলাম]