চৌধুরী, খানবাহাদুর আব্দুল মজিদ

চৌধুরী, খানবাহাদুর আব্দুল মজিদ (১৮৬০-১৯১২)  ইসলামী শিক্ষা প্রচলনের অন্যতম নেতা। আবদুল মজিদ চৌধুরী ১৮৬০ সালে রংপুরের মহিপুর জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৭৯ সালে তিনি রংপুর জিলা স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাস করেন এবং ১৮৮১ সালে  কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে গ্রাজুয়েশন লাভ করেন। ১৮৮২ সালে পিতার মৃত্যুর পর তিনি মহিপুর জমিদারি পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তাঁর সমাজচিন্তা ও সমাজসেবায় অবদানের স্বীকৃতিতে ১৮৯৬ সালে সরকার তাঁকে ‘খান বাহাদুর’ উপাধি প্রদান করে এবং অনারারী ম্যাজিস্ট্রেট-এর পদ প্রদান করে। ১৮৯০-১৯১২ সাল পর্যন্ত তিনি জেলা বোর্ডের সদস্য ও বিভিন্ন সাব-কমিটির চেয়ারম্যান ও সদস্যের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৮৯৮ সালে সৈয়দ আমীর আলীর নেতৃত্বে গঠিত ন্যাশনাল মোহামেডান এসোসিয়েশনের রংপুর শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। তাঁর উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনায় বাংলার তৎকালীন লে. গভর্নর জর্জ উডবার্ন (১৮৯৯-১৯০৩) ১৮৯৯ সালের ১১ জুলাই রংপুর মাদ্রাসা পরিদর্শন করেন। তাঁর প্রচেষ্টায় রংপুর জিলার মাদ্রাসাসমূহ জিলা বোর্ড ও মোহসীন ফান্ড থেকে অর্থ বরাদ্দ লাভে সক্ষম হয়।

১৮৯৮ সালে আব্দুল মজিদ রংপুর জিলা বেঙ্গল মোহামেডান এসোসিয়েশনের সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি সরকারের ক্রটিপূর্ণ শিক্ষানীতি এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের শিক্ষায় পশ্চাদপদতার কারণসমূহ তুলে ধরতে চেষ্টা করেন। তিনি প্রাইমারি এবং মিড্ল ইংলিশ স্কুল সিলেবাসের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে মাদ্রাসা শিক্ষার আমূল পরিবর্তনের জন্য এক প্রস্তাব পেশ করেন। তৎকালীন জনশিক্ষা পরিচালক স্যার আলেকজান্ডার প্যাডলার তাঁর দাবি মেনে নেন এবং শিক্ষাব্যবস্থায় সামঞ্জস্য বিধানের পক্ষে মত প্রকাশ করে একটি মাদ্রাসা শিক্ষানীতি প্রণয়নে সাহায্য করেন। ১৯১১ সালে বাধ্যতামূলক প্রাইমারি শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনে তিনি ছিলেন একজন একনিষ্ঠ কর্মী। ১৯১১-১২ সালে মক্তব শিক্ষাব্যবস্থা সরকারি অনুদানের আওতাভুক্ত করা ছিল তাঁর সর্বশেষ কৃতিত্ব। তিনি রংপুর সাহিত্য পরিষদের (বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের শাখা) প্রতিষ্ঠাতা সহসভাপতি ছিলেন। ১৯১২ সালের ১১ নভেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়।  [মুহম্মদ মনিরুজ্জামান]