চা

চা  চিরসবুজ উদ্ভিদ প্রজাতি Camellia sinensis, যার শুকানো পাতা থেকে তৈরি হয় জনপ্রিয় পানীয়। এটি বাংলাদেশে মুখ্যত একটি কৃষিভিত্তিক, রপ্তানিমুখী বহুবর্ষজীবী ফসল। প্রাকৃতিক পরিবেশে চা গাছ ক্ষুদ্র বৃক্ষ আকারে বেড়ে ওঠে, কিন্তু পরপর ছাঁটাই ও অন্যান্য পরিচর্যার (আগা কাটা, কুঁড়ি ভাঙা, সঠিক মাত্রায় পাতা-কুঁড়ি সংগ্রহ) কারণে গাছের সাধারণ আকৃতির পরিবর্তন হয়।

চা বাগান

রবার্ট ব্রুস ১৮৩৪ সালে আসামের উঁচু অঞ্চলে চা গাছের সন্ধান পান যা ভারতে চা শিল্পের ভিত্তি স্থাপন করে। চা উৎপাদনের প্রথম সংগঠিত বাণিজ্যিক প্রয়াস শুরু করে আসাম চা কোম্পানি ১৮৩৯ সালে। উনিশ শতকের প্রথম দিকে উত্তর-পূর্ব ভারতীয় চা চাষের একই সময়ে বাংলাদেশেও চা চাষ চলতে থাকে। ১৮৫৫ সালে সিলেটের চাঁদখানি পাহাড়ে আসামের স্থানীয় চা কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রায় একই সময়কালে খাসিয়া ও জৈন্তা পাহাড়ে বুনো চায়ের সন্ধান পাওয়া যায়। চীন থেকে আমদানিকৃত বীজ, কলকাতার বোটানিক্যাল গার্ডেনের কতিপয় চীনা চা গাছ ও আসামের বীজ ব্যবহার করে ১৮৪০ সালে চট্টগ্রামে চা বাগান তৈরির কাজ শুরু হয়। বর্তমান বাংলাদেশে প্রথম বাণিজ্যিক চা বাগানের প্রতিষ্ঠা ১৮৫৪ সালে সিলেটের মালনিছড়ায়। ১৮৬০ সালে এটি লালচাঁদ ও মার্টিংগা পর্যন্ত  বিস্তৃত হয়।

এ অঞ্চলে চা বাগান স্থাপনের অগ্রদূত ছিল ব্রিটিশরা। ১৯৪৭ সালে বাংলাদেশ (তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান) ১৩৩টি চা বাগানে (৩০,৩৫০ হেক্টর) সর্বমোট বার্ষিক ১.৮৮ কোটি কেজি চা উৎপাদন করে। বর্তমানে দেশে প্রায় ৪৮,০০০ হেক্টরেরও অধিক এলাকা জুড়ে ১৫৮টি চা বাগান রয়েছে এবং এসব বাগান থেকে বার্ষিক ৫১,৬৫০ মে টন চা উৎপাদিত হয়। বাংলাদেশে চায়ের গড় ফলন হেক্টর প্রতি ১,১১৫ কেজি এবং বিশ্বের ৩০টি চা উৎপাদনকারী দেশের মধ্যে উৎপাদনের দিক থেকে বাংলাদেশ ৯ম স্থানে রয়েছে। উৎপন্ন চায়ের অর্ধেক দেশেই ব্যবহূত হয় আর বাকি অর্ধেক রপ্তানি হয় যা থেকে বাংলাদেশ প্রতি বছর প্রায় ২০০ কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। বাংলাদেশের চা আমদানিকারী দেশগুলির মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, চীন, সাইপ্রাস, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিস, ভারত, ইরান, জাপান, জর্ডান, কাজাকস্তান, কেনিয়া, কুয়েত, সৌদি আরব, কিরগিজস্তান, ওমান, পাকিস্তান, পোল্যান্ড, রাশিয়া, সুদান, সুইজারল্যান্ড, তাইওয়ান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র। চা-খাত বাংলাদেশের জিডিপি’র প্রায় ০.৮০% যোগান দিচ্ছে। চা শিল্পে প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার লোকের যা মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ৩.৩%। আরও অনেক বেশি লোক চা-সংশ্লিষ্ট অন্যান্য খাতে পরোক্ষভাবে নিয়োজিত রয়েছে। পঞ্চম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২০০১-২০০২ সালে ৬০,০০০ মে টন যা ১৯৯৬-৯৭ বছরের তুলনায় ৫৪,০০০ মে টন বেশি।

চা গাছের তিনটি ধরন রয়েছে আসাম, চীনা ও ক্যামবোয়েড। সাম্প্রতিক শ্রেণীবিভাগ অনুযায়ী দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার তিনটি ভৌগোলিক অঞ্চল অনুযায়ী চাষকৃত চায়ের তিনটি জাত হলো আসাম, চীনা ও ইন্দোচীনা। প্রথম দুটি চিহ্নিত ভ্যারাইটি assamica ও sinensis আর তৃতীয়টি দক্ষিণাঞ্চলীয় বা ক্যামবোয়েড জাত হিসেবে পরিচিত। এভাবে রয়েছে হালকা পাতা ও গাঢ় পাতার আসাম জাত, তেমনি মণিপুরী-র মতো ভ্যারাইটিগুলি। বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে উৎপন্ন চা গাছ বিমিশ্র। পাতার কোণ, অবস্থান, আকৃতি, রোমশতা ও বর্ণবৈচিত্র্যসহ নানা ধরনের চা গাছ দেখা যায়।

বাংলাদেশের চায়ের অধিকাংশ চারাই সংকর ও বিমিশ্র আর সেগুলির চারিত্রিক ভিন্নতাও রয়েছে। বেশির ভাগ চা অবশ্য গাঢ় রঙের পাতার জাত।

চা পাতা সংগ্রহ [ছবি:এম মনিরুল এইচ খান]

চা একটি শ্রমঘন শিল্প। সত্তর দশকের প্রথমার্ধে ১,২০,০০০ জন নারী-পুরুষ চা শ্রমিকের ওপর ৩,৫০,০০০ জন পোষ্য নির্ভর করত। বাংলাদেশের অন্যান্য শিল্প শ্রমিকদের সাথে এদের বিস্তর পার্থক্য। বর্তমান প্রজন্মের চা বাগান শ্রমিকরা উড়িষ্যা, বিহার, মাদ্রাজ এবং মধ্যপ্রদেশ থেকে আঠারো শতকে প্লান্টারদের নিয়োগকৃত শ্রমিকদের উত্তরাধিকারী। এ শ্রমিকেরা এখন সিলেট ও চট্টগ্রামের চা বাগানে স্থায়িভাবে বসবাস করে আসছে।

বিশ শতকের ষাটের দশকে ভূপ্রকৃতির নিরিখে ১২০ সেমি × ৭৫ সেমি থেকে ১২০ সেমি × ৬০ সেমি দূরত্বসহ প্রতি হেক্টরে ১১,০০০ থেকে ১৪,০০০ গাছ লাগানো এবং ৩ ও ৪ বছর পর পর কাটছাঁটের ব্যবস্থা চালু ছিল। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে অন্যান্য অনেক চা উৎপাদক দেশের মতো দীর্ঘমেয়াদি পরীক্ষণের ফলাফল থেকে ১২০ সেমি × ৭৫ সেমি থেকে ৯০ সেমি × ৬০ সেমি দূরত্বসহ প্রতি হেক্টরে ১৫,৫০০ থেকে ১৮,০০০ চারা রোপন করা হচ্ছে।

চা গাছের পরিচর্যায় ঊর্ধ্বমুখী বৃদ্ধি সীমিত করে সেগুলিকে ঝোপাকৃতি বানাতে কাটছাঁট (pruning) একটি মৌলিক কৌশল। বাংলাদেশে অনুসৃত চায়ের ক্ষেত্রে দু ধরনের কাটছাঁট চক্র হলো ৩-বছুরে চক্র ও ৪-বছুরে চক্র। তিন-বছুরে কাটছাঁট চক্রের ধাপগুলি হচ্ছে হালকা কাটছাঁট, হালকা (ংশরভভ) ও ভারী ছাঁটাই আর ৪-বছুরে চক্র হচ্ছে হালকা কাটছাঁট, ভারী ছাঁটাই, মাঝারি ছাঁটাই ও হালকা ছাঁটাই অথবা হালকা কাটছাঁট, মাঝারি ছাঁটাই, ভারী ছাঁটাই ও মাঝারি ছাঁটাই। পাতা সংগ্রহের আদর্শ সময় ব্যবধান ৭ থেকে ৯ দিন এবং একটি ফসল মৌসুমে সর্বমোট ৩০-৩২ বার পাতা সংগ্রহ করা যায়।

চা চাষে ছায়াপ্রদায়ী বৃক্ষের ব্যবহার অতি গুরুত্বপূর্ণ ও অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ। সর্বোত্তম শারীরবৃত্তীয় কার্যক্রমের জন্য সাধারণত চা গাছের প্রায় ৫০% ব্যাপ্ত সূর্যালোকের প্রয়োজন। তাই চা বাগানে প্রধানত মৃত্তিকার পুষ্টি ব্যবহার ও শস্য পর্যায় কৌশল অনুসরণের জন্য শিমজাতীয় উদ্ভিদ লাগানো হয়। একই সঙ্গে, শিমজাতীয় গাছের শিকড় মাটির আর্দ্রতা সুরক্ষায় সহায়তা যোগায় এবং বায়ুমন্ডল থেকে নাইট্রোজেন গ্রহণ ও সংরক্ষণ করে। বাংলাদেশের চা বাগানে Albizia sinensisA. moluccana অস্থায়িভাবে আর A. odoratssima, A. procera, A. lebbek এবং Derris robusta স্থায়ীভাবে ছায়া দিয়ে থাকে। সূর্যের আলো জলীয় বাষ্প পরিহারের জন্য কোষাবরণী ও কোষপ্রাচীরের ভেদ্যতা বাড়িয়ে প্রস্বেদনের হার বাড়ায়, আর আলো পত্ররন্ধ্র খোলা রাখতে সহায়তা করে। বায়ুর বেগও প্রস্বেদন হারকে প্রভাবিত করতে পারে। মাটি থেকে জলীয় বাষ্প অপসারণে বৃষ্টিপাতের মৌসুমি পার্থক্য, সূর্যালোকে উন্মুক্ত থাকার সময়কাল ও মৃৎবিন্যাস প্রভাব ফেলে। মাটির এসব বৈশিষ্ট্য পানিধারণ ক্ষমতার নির্ধারক।

বাংলাদেশে চা চাষের সফল ও উৎপাদনশীল উন্নয়নে বনও একটি উপযোগী ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশের রয়েছে আবহমান কালের প্রাকৃতিক বন ও রোপিত বনভূমি। এখানকার প্রাকৃতিক বনগুলি গ্রীষ্মমন্ডলীয় আধা-চিরহরিৎ ধরনের। বনাঞ্চলগুলি প্রধানত উচ্চভূমিতে এবং চা বাগানগুলির অধিকাংশই উঁচুনিচু পাহাড় ও উপত্যকায় অবস্থিত। বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে আসা বনাঞ্চলের বিপুল আবর্জনা প্রায়শ চা বাগানে জমা হয় বা আটকে পড়ে সেখানে যথেষ্ট পুষ্টি যোগায়। অধিকন্তু, ঘন ও গভীর বনাঞ্চল (প্রাকৃতিক ও রোপিত) প্রস্বেদনের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণ পানি ত্যাগ করার ফলে সেখানে উঁচু আর্দ্রতা বজায় থাকে। বনাঞ্চল বছরের বেশির ভাগ সময় অত্যধিক বৃষ্টিপাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে যা চা উৎপাদনের জন্য খুবই জরুরি। পাহাড় ও উঁচু উপত্যকার উপর দিয়ে প্রবাহিত প্রবল বাতাস ও ঝড়ঝঞ্ঝা থেকে বনাঞ্চল চা গাছকে রক্ষা করে।

সংগ্রহ করার পর চায়ের পাতা কারখানায় প্রক্রিয়াজাত করা হয়। বাংলাদেশে কালো চা সর্বাধিক জনপ্রিয় ও ব্যাপক ব্যবহূত পানীয়। চা তৈরির মূল কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে চায়ের কুঁড়ি সংগ্রহ, প্রসেসিং, রোলিং, গাঁজন, শুকানো, সেঁকা, মানানুযায়ী পৃথকীকরণ ও প্যাকিং। সংগৃহীত চা পাতা অর্থাৎ দু’টি পাতা একটি কুঁড়ির গুণাগুণের ওপর মানসম্পন্ন চা তৈরী বহুলাংশে নির্ভরশীল। কালো চা  প্রসেসিংয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে নিরুদনের মাধ্যমে তাজা পাতার আর্দ্রতা দূর করে একে শিথিল করা হয়। পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য পাতাকে ভৌত ও রাসায়নিক ভাবে তৈরি করা হয়। চা প্রস্ত্ততের পরবর্তী ধাপ হচ্ছে নিরুদিত পাতাগুলি মোচড়ানো রোলিং (rolling)। রোলিংয়ের উদ্দেশ্য হচ্ছে পাতা মন্ডীকরণ যাতে উৎসেচকগুলি যৌগকের (substrate) সঙ্গে নিবিড়ভাবে মিশে যায়। গাঁজন হলো কতকগুলি ধারাবাহিক রাসায়নিক পরিবর্তনের মাধ্যমে চায়ের পাতার বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদানের জারণ। বাংলাদেশের চা কারখানায় মেঝে-গাঁজন (floor fermentation) ও তাক-গাঁজন (rack fermentation) বহুল প্রচলিত। গাঁজনকৃত পাতার মধ্য দিয়ে গরম বায়ু প্রবাহিত করে সেঁকার কাজ ভৌতভাবে সম্পন্ন হয়। প্রবেশপথে গরম বায়ুর তাপমাত্রা ৮৭° থেকে ৯৩° সে এবং নির্গমপথে ৫৬° সে থাকে। সেঁকা চা হলো অনেকটা পাতার বোঁটা ও অাঁশসহ পাতার বিভিন্ন আকারের টুকরার অসমসত্ত্ব মিশ্রণ। সর্টিং মেশিন বিভিন্ন মাপের ফোকরওয়ালা জালের সঙ্গে যুক্ত যান্ত্রিকভাবে ঘূর্ণায়মাণ চালুনির সাহায্যে এগুলিকে বিভিন্ন আকারের দানা হিসেবে শ্রেণীবিভক্ত করে। অতঃপর চা শ্রেণীবিন্যস্ত ও বিক্রয়ের জন্য প্রস্ত্তত করা হয়।

ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ ও রোগবালাই (Pests and diseases)  কিছু পোকামাকড় ও রোগের জন্য বাংলাদেশে চা উৎপাদন যথেষ্ট বাধাগ্রস্ত হয়। চায়ের উৎপাদন ঘাটতির মূলে আছে বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড়, নিমাটোড, শৈবাল, ছত্রাক ও আগাছা। এ যাবৎ চায়ের ক্ষতিকর ২৫টি পতঙ্গ, ৪টি মাইট, ১২টি নিমাটোড, ১টি শৈবাল প্রজাতি এবং ১০টি ছত্রাকঘটিত রোগ ও ৩৭ মুখ্য আগাছা শনাক্ত করা গেছে। এসব বালাই কোনো  কোনো বছর, কোনো কোনো মৌসুম বা কোনো কোনো বাগানে মহামারী আকারে দেখা দেয়। রোগবালাই পরিস্থিতি প্রায়শ জলবায়ুগত ও বাস্ত্তসংস্থানিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। একাধিক পতঙ্গ বা রোগ ক্রমান্বয়ে বা একত্রে কোনো নির্দিষ্ট মৌসুমে বা সময়ে কোনো চা-ঝাড় বা বাগান আক্রমণ করতে পারে। চায়ের ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ ও রোগের তালিকা যথাক্রমে ১ ও ২নং সারণিতে দেখানো হয়েছে। প্রতিবছর পোকামাকড়, রোগবালাই ও আগাছার জন্য চায়ের মোট ক্ষতির পরিমাণ মোট উৎপাদনের ১০-১৫%।

সারণি ১ বাংলাদেশে চা গাছের ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ।

বর্গ গোত্র প্রজাতি গাছের আক্রান্ত অংশ
Hemiptera Miridae Helopeltis theivora (Tea mosquito bug) Young leaves, shoots and buds
Homoptera Cicadellidae Empoasca flavescens (Green fly) Young leaves, shoots
Aphididae Toxoptera aurantii (Aphid) Young leaves, shoots
Coccidae Carteria dacorelia Stems, shoots, leaves
  Coccus viridis Stems, shoots, leaves
Hemiptera Pentatomidae Poecilocoris latus (Tea seed bug) Flower, seeds, buds
Lepidoptera Psychidae Clania cramerii Leaves, shoots, buds
  Clania sikkima Leaves, shoots, buds
  Clania destructor Leaves, shoots, buds
Geometridae Biston suppressaria Young and mature leaves
Eucosmidae Lespeyresia leucotoma Leaves and bud
Tortricidae Homona coffearia Young and mature leaves
Gracilariidae Gracilaria theivora Young leaves
Tineidae Agriophora rhombata Young and mature leaves
Cossidae Zeuzera coffeae Stem
Cochlidiidae Parasa pastoralis Older leaves
Coleoptera Chrysomelidae Diapromorpha melanopus Leaves and shoots
Scolytidae Xyloborous fornicatus Twig and small branches
Diptera Agromyzidae  Agromyza theae Older leaves
Orthoptera Gryllidae Brachypterypes portentosus Stems, roots young plants
Gryllotalpidae Grylotalpa africana Stems, roots young plants
Isoptera Termitidae Micricerotermes species  Root, stem, stump
  Odontotermes species Root, stem, stump
Thysanoptera Thripidae Scirtothrips dorsalis Unopened and partly opened bud
  Taeniothrips setiventris Unopened and partly opened bud
Acarina Tetranychidae Oligonychus coffeae (Red spider mite) Upper surface of mature leaves
Tenuipalpidae Brevipalpus phoenicis (Scarlet mite) Upper surface of mature leaves
Eriopyidae Acaphylia theae (Pink mite) Both surface of young and mature leaves
  Calcarus carinatus (Purple mite) Both surface of young and mature leaves

বাংলাদেশে চায়ের অন্যতম ক্ষতিকর গুরুত্বপূর্ণ পতঙ্গ Helopeltis (Tea mosquito bug) পাতা, কুঁড়ি ও কচি কান্ডে ছিদ্র করে তা থেকে রস চুষে নিয়ে প্রধানত নতুন ফসল নষ্ট করে। ছিদ্র করার সময় এগুলি গাছে বিষাক্ত লালা ঢুকিয়ে দেয়, এর ফলে ছিদ্রের চারদিকের কোষকলা প্রথমে বাদামি, পরে কালো হয়ে শেষে শুকিয়ে যায়। আক্রান্ত পাতা কুঁকড়ে বিকৃত হয়ে ওঠে। চায়ের আরেকটি মারাত্মক আপদ লাল মাকড় (জবফ ংঢ়রফবৎ সরঃব)। এ মাকড় সাধারণত বয়স্ক পাতার উপরিতল আক্রমণ করে রস চুষে নেয়, এজন্য পাতা তামাটে-বাদামি বা তামাটে হয়ে ওঠে এবং শেষ পর্যন্ত ঝরে পড়ে। চায়ের নার্সারির মাটিতে বাসকারী নিমাটোড কচি চারার জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এগুলি চারার শিকড় আক্রমণ করে, তাতে গাছের বৃদ্ধি কমে এবং পাতার রঙ হলুদ ও গড়ন বিকৃত হয়ে যায়।

সারণি ২ বাংলাদেশে চা গাছের রোগবালাই।

সাধারণ নাম রোগের ঘটক  সংক্রমিত অংশ মাত্রা
Charcoal stump rot Ustulina zonata গুঁড়ি/শিকড় মুখ্য
Ustulina deusta " গৌণ
Thread blight Marasmius pulcher কান্ড/ডাল "
Horse hair blight  Marasmius equicrinis কান্ড/ডাল "
Blister blight Exobasidium vexans পাতা "
Black rot  Corticium invisum
Corticium theae " মুখ্য
Violet root rot Sphaerostilbe repens শিকড় গৌণ
Purple root rot  Helicobasidium শিকড় "
Branch canker Macrophoma theicola কান্ড/শাখা মুখ্য
Brown blight Colletotrichumcamelliae পাতা গৌণ
Grey blight Pestalozzia theae " "
Die back Colletotrichum gloesporoides ডালের আগা "
Red rust  Cephaleuros parasiticus কান্ড/শাখা  মুখ্য
Collar rot Phomopsis species কান্ডের ঊর্ধ্বাংশ  গৌণ

বাংলাদেশে চায়ের শাখা-ক্ষত (Branch canker) রোগের কারণ Macrophoma theicola নামক এক ছত্রাক। এতে আক্রান্ত গাছের বাকল ফেটে যায়, বাকলে কালো গর্ত দেখা দেয়, পুরানো বাকল ঝরে গিয়ে কাঠ বেরোয়। লাল মরচে (Red rust) চায়ের একমাত্র শৈবালঘটিত রোগ। Cephaleuros parasiticus শৈবালের আক্রমণে এ রোগ হয়। বাংলাদেশে চা চাষের এলাকাগুলিতে এ রোগ ক্রমে ছড়িয়ে পড়ছে। জমির অনুর্বরতা, অপর্যাপ্ত ছায়া, খরা, জলাবদ্ধতা ও বিকল্প পোষকের উপস্থিতিতে এ রোগ দেখা দেয়। কচি চা পাতা ব্লিস্টার ব্লাইট রোগে সহজেই আক্রান্ত হয়। এ রোগের জীবাণু Exobasidium vexans। আক্রান্ত পাতায় সাদা অথবা গোলাপী দাগ সৃষ্টি হয়।  [মইনুদ্দিন আহমেদ এবং এ.এফ.এম বদরুল আলম]

আরও দেখুন চা শিল্প, বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট