চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড

চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড  চলচ্চিত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক জনসাধারণ্যে মুক্তির জন্য ছাড়পত্র প্রদানের নিমিত্তে গঠিত প্রতিষ্ঠান। ফিল্ম সেন্সরশিপ আইন ও নীতিমালা অনুযায়ী বোর্ড দায়িত্ব পালন করে থাকে। সেন্সর বোর্ডের প্রশাসনিক কাজ পরিচালনার জন্য একজন ভাইস চেয়ারম্যান, একজন সচিব, ছয় জন পরিদর্শক এবং অন্যান্য কর্মচারী রয়েছে। একটি চলচ্চিত্র ছাড়পত্র পাওয়ার যোগ্য কি-না তা বিচার বা পরীক্ষার জন্য প্রতিবছর সরকার কর্তৃক সদস্য মনোনীত হয়। সমাজের বিভিন্ন পেশা ও স্তরের লোকদের নিয়ে এ বোর্ড গঠিত হয়ে থাকে। বোর্ডের সদস্য সংখ্যা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হয়। ২০০৯ সালে গঠিত সেন্সর বোর্ডের সদস্য সংখ্যা ছিল ১৫ জন। বোর্ডের চেয়ারম্যান: তথ্যসচিব, ভাইস-চেয়ারম্যান: বাংলাদেশ ফিল্ম সেন্সর বোর্ডের ভাইস-চেয়ারম্যান এবং সদস্যবৃন্দের মধ্যে রয়েছেন: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি-১, আইন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি-১, চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব-১, তথ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব-১, সাংবাদিক-২, চলচ্চিত্র সমালোচক-১, চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির প্রতিনিধি-১, চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব-২, সংগীত ব্যক্তিত্ব-১।

চলচ্চিত্র বাছাইয়ের সময় সদস্যগণ ১৯৭৭ সালে প্রণীত সেন্সরশিপ অব ফিল্ম রুলস-এর ১৩নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত নীতিমালা অনুসরণ-পূর্বক সমাজ ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বা আইন-শৃঙ্খলা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, ধর্মীয় অনুভূতি, অনৈতিক বা অশ্লীলতা, বীভৎসতা, অপরাধ, নকল প্রভৃতি দিক বিবেচনা করে থাকেন। বাংলাদেশে সাধারণত ‘সর্বজনীন’ (ইউনিভার্সাল) চিহ্নিত সার্টিফিকেট দেওয়া হয়ে থাকে। এ ধরনের সার্টিফিকেটপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র সবার দেখার জন্য যোগ্য। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ও রক্ষণশীল মনোভাবের কারণে বাংলাদেশে কোনো চলচ্চিত্রেই প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ‘এ’ কিংবা ‘এক্স’ চিহ্নিত সার্টিফিকেট দেওয়া হয় না। প্রয়োজনে এ ধরনের চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী নিষিদ্ধ করা হয় অথবা ছাড়পত্র দেওয়া হয় না। যেমন ২০০৭-০৮ সালে অশ্লীলতা ও বীভৎসতার কারণে সকল চলচ্চিত্রের ছাড়পত্র দেওয়া হয় নি। এগুলির প্রদর্শনীও বাতিল করা হয়। সেন্সর বোর্ডের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যে কোনো চিত্র নির্মাতা, প্রযোজক ও পরিবেশক এ উদ্দেশ্যে গঠিত কমিটির কাছে আপিল করতে পারেন। সেন্সরশিপ অব ফিল্মস রুলস-১৯৭৭ এর ১৯নং বিধির ২নং উপবিধি অনুযায়ী সরকার ফিল্ম সেন্সর আপিল কমিটি গঠন করে থাকে। কমিটির মেয়াদকাল ও সদস্যসংখ্যা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত। ২০০৯ সালে ফিল্ম সেন্সর আপিল কমিটিতে ছিলেন চেয়ারম্যান: প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, সদস্য-সচিব: তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব এবং সদস্যবর্গ: এমপি, তথ্য সচিব, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, সাংবাদিক,  বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক, প্রধান তথ্য অফিসার, চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান। আপিল কমিটি সংশ্লিষ্ট চলচ্চিত্র পুনঃপরীক্ষা করে অভিমত সম্বলিত প্রতিবেদন সরকারের কাছে পেশ করে। পরবর্তী পর্যায়ে সরকারি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য সেন্সর বোর্ডের নিকট পাঠানো হয়।  [অনুপম হায়াৎ]