গোবর্ধন আচার্য

গোবর্ধন আচার্য (১২শ শতক)  সংস্কৃত কবি। তাঁর পিতা নীলাম্বরও ছিলেন একজন  সংস্কৃত পন্ডিত এবং তিনি ধর্মশাস্ত্রবিষয়ক একখানা গ্রন্থ রচনা করেছেন। কবি  জয়দেব ও গোবর্ধন ছিলেন সমসাময়িক এবং লক্ষ্মণসেনের সভাকবি। গোবর্ধন স্বয়ং কাব্যমধ্যে বলেছেন, জনৈক সেনকুলতিলক রাজার পৃষ্ঠপোষকতায় তাঁর গ্রন্থ রচিত; এ সেনকুলতিলকই  লক্ষ্মণসেন

গোবর্ধনের বিখ্যাত গ্রন্থের নাম আর্যাশপ্তশতী। হালের গাথাশপ্তশতী  অনুসরণে এটি রচিত। আর্যাছন্দে রচিত এ গ্রন্থের নামকরণ অনুযায়ী এতে সাতশ শ্লোক থাকার কথা, কিন্তু বাস্তবে আছে ৭৬৪টি। শ্লোকগুলি শৃঙ্গাররসপ্রধান, পরস্পর নিরপেক্ষ এবং বর্ণানুক্রমে রচিত। কাব্যটি বিভিন্ন বিভাগ বা ব্রজ্যায় বিভক্ত। বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত মানুষের খন্ড খন্ড চিত্র নিয়ে শ্লোকগুলি রচিত।

গোবর্ধনের রচনায় অলঙ্কারশাস্ত্রে নিষ্ঠা ও পরিহাসরসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। এতে তৎকালীন গৌড়বঙ্গের রাজকীয় ও উচ্চবিত্ত শ্রেণির কামকলাবিলাস ও ভুজঙ্গবৃত্তি প্রকটরূপে প্রকাশিত হয়েছে। এতে একদিকে যেমন মানুষের অনাবিল দাম্পত্য প্রেম ও তরুণ প্রেমের উচ্ছ্বাস বর্ণিত হয়েছে, অন্যদিকে তেমনি আবার যৌনজীবনের নানা দিক যেমন, বিধিবহির্ভূত নাগরপ্রেম, যথেচ্ছ যৌনাচার ইত্যাদি চিত্রিত হয়েছে। দারিদ্রে্যর কারণে মানুষের সামাজিক অধঃপতন, আবার তার মধ্যেই কোনো কোনো ক্ষেত্রে যথার্থ ভালবাসার চিত্রও এ কাব্যে পাওয়া যায়। পাঠকসমাজে কাব্যটি খুবই জনপ্রিয় ছিল, যে কারণে একটি  কাব্য রচনা করেই গোবর্ধন বিখ্যাত হয়েছিলেন। হিন্দি কবি বিহারীলালের প্রসিদ্ধ কাবগ্রন্থ সৎসঈ গোবর্ধনের আর্যাশপ্তশতী অনুসরণে রচিত। কবি জয়দেবও গোবর্ধনের উচ্চ প্রশংসা করেছেন। পরবর্তীকালের সূক্তিমুক্তাবলী, শার্ঙ্গধরপদ্ধতি, পদ্যাবলী প্রভৃতি কোষকাব্যে গোবর্ধনের বিভিন্ন শ্লোক উদ্ধৃত হয়েছে।  [কানাইলাল রায়]