গেজেটেড অফিসার

গেজেটেড অফিসার  সাপ্তাহিক সরকারি গেজেটে যেসব সরকারি অফিসারদের নিয়োগ, পদায়ন, বদলি ও চাকরি সংক্রান্ত বিষয়াদি প্রকাশিত হয় তারাই গেজেটেড অফিসাররূপে চিহ্নিত। বাংলাদেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো কোনো নির্দিষ্ট পেশার ক্ষেত্রে পদের সুনির্দিষ্ট ও অনমনীয় ধরন। ভারতে ব্রিটিশ শাসনের প্রথমদিকে দু ধরনের সরকারি আমলা ছিলেন, সনদী কর্মকর্তা ও অসনদী কর্মকর্তা। সনদী কর্মকর্তারা সরকারের উচ্চপদে নিয়োজিত ছিলেন। তারা আনুগত্য ও সততার সঙ্গে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে চাকরি করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হতেন। এ কারণেই এরা ছিলেন সনদী বা চুক্তিবদ্ধ সার্ভিসের সদস্য। অধস্তন পদসমূহে নিয়োগপ্রাপ্ত আমলাদের অপর অংশটি কোনো চুক্তিতে আবদ্ধ হতেন না। তাই এরা ছিলেন অসনদী সিভিল সার্ভিসের সদস্য। ইউরোপীয় ও ভারতীয় উভয় শ্রেণির লোকেরাই এ সার্ভিসের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। অসনদী সরকারি কর্মচারীরা প্রধানত রাজস্ব ও বিচার বিভাগে অধস্তন পদে নিয়োগ লাভ করতেন। সিভিল সার্ভিস কাঠামো প্রবর্তনের প্রাথমিক পর্যায়ে সনদী সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়োগ, পদায়ন ও বদলি সরকার কর্তৃক মুদ্রিত গেজেটে প্রকাশিত হতো। আঠারো শতকের শেষের দিকে প্রথম এ ধরনের গেজেটের নজীর পাওয়া যায়। আমলাতন্ত্রের বিকাশ এবং পরবর্তী সময়ে সিভিল সার্ভিসের ভারতীয়করণের ফলে সনদী ও অসনদী সার্ভিসের মধ্যে পার্থক্য অপসারিত হয়। ‘গেজেটেড অফিসার’ ও ‘নন-গেজেটেড অফিসার’ হিসেবে সিভিল সার্ভিসের সদস্যদের মধ্যে নতুন একটি বিভাজন প্রবর্তিত হয়। আইনি ব্যবস্থা হিসেবে গেজেটেড অফিসারদের নিয়োগ, পদায়ন, বদলি এবং চাকরি সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হতে থাকে এবং এতে করে নন-গেজেটেড অফিসারদের তুলনায় গেজেটেড অফিসারদের ঊর্ধ্বতন পদমর্যাদার প্রকাশ ঘটে।  [এ.এম.এম শওকত আলী]