খুলনা জেলা

খুলনা জেলা (খুলনা বিভাগ)  আয়তন: ৪৩৯৪.৪৫ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২১°৪১' থেকে ২৩°০০' উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°১৪' থেকে ৮৯°৪৫' পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে যশোর ও নড়াইল জেলা, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে বাগেরহাট জেলা, পশ্চিমে সাতক্ষীরা জেলা।

জনসংখ্যা ২৩১৮৫২৭; পুরুষ ১১৭৫৬৮৬, মহিলা ১১৪২৮৪১। মুসলিম ১৭৭৬৭৪৯, হিন্দু ৫২৫৭২৭, বৌদ্ধ ৯৭, খ্রিস্টান ১৫২৩৯ এবং অন্যান্য ৭১৫।

জলাশয় প্রধান নদী: রূপসা (ভৈরব), অর্পণগাছিয়া, শিবসা, পশুর, কয়রা।

প্রশাসন জেলা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৮২ সালে। খুলনা পৌরসভা ঘোষনা করা হয় ১২ ডিসেম্বর ১৮৮৪ সালে এবং মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনে উন্নীত করা হয় ১২ ডিসেম্বর ১৯৮৪ সালে। ৬ আগস্ট ১৯৯০ সালে খুলনাকে সিটি কর্পোরেশন হিসেবে ঘোষনা করা হয়।

জেলা
আয়তন (বর্গ কিমি) উপজেলা পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম
৪৩৯৪.৪৫ ৬৯ ৭৫১ ১১২৩ ৭৭৭৫৮৮ ১৫৪০৯৩৯ ৫২৮ ৬০.১
সিটি কর্পোরেশন
সিটি কর্পোরেশন মেট্রোপলিটন থানা ওয়ার্ড সিটি মহল্লার সংখ্যা
৩১ ২০০
খুলনা মেট্রোপলিটন থানা
মেট্রোপলিটন থানার নাম ও জিও কোড আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন মহল্লা ও মৌজা জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
কোতয়ালী ৫১ ৯.৪৫ ৬৩ ২৫০৬৫১ ২৬৫২৪ ৭২.৮৬
খানজাহান আলী ৪৮ ২৮.৯৫ ১০৮৩১৭ ৩৭৪২ ৭১.৩০
খালিশপুর ৪৫ ১১.৪৭ ১০ ৪১ ২৩৫০১৮ ২০৪৯০ ৭৩.৭২
দৌলতপুর ২১ ১১.৮১ ৩৪ ১১৮৩৮০ ১০০২৪ ৬৬.৮৫
সোনাডাঙ্গা ৮৫ ৮.৪২ ৪২ ১৭২০৭৯ ২০৪৩৭ ৬৮.৯১
জেলার অন্যান্য তথ্য
উপজেলা নাম ও জিও কোড আয়তন (বর্গ কিমি) পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
কয়রা ৫৩ ১৭৭৫.৪০ - ৭২ ১৩৩ ১,৯৩,৯৩১ ১০৯ ৫০.৪
ডুমুরিয়া ৩০ ৪৫৪.২৩ - ১৪ ২০৫ ২৪১ ৩,০৫,৬৭৫ ৬৭৩ ৫২.৬
তেরখাদা ৯৫ ১৮৯.৪৯ - ৩২ ৯৯ ১,১৬,৭০৯ ৬১৫ ৪৮.৫
দাকোপ ১৭ ৯৯১.৫৬ - ২৬ ৯৭ ১,৫২,৩১৬ ১৫৪ ৫৬.০
দিঘলিয়া ৪০ ৭৭.১৬ ২৯ ৪৩ ১,১৫,৫৮৫ ১৪৯৮ ৫৪.৩
পাইকগাছা ৬৪ ৪১১.১৯ ১০ ১৬৬ ২১২ ২,৪৭,৯৮৩ ৬০৩ ৫২.৮
ফুলতলা ৬৯ ৫৬.৮৩ - ১৮ ২৯ ৮৩,৮৮১ ১৪৭৬ ৫৯.০
বটিয়াঘাটা ১২ ২৪৮.৩১ - ১২৭ ১৭২ ১,৭১,৬৯১ ৬৯১ ৫৪.৯
রূপসা ৭৫ ১২০.১৫ - ৬৪ ৭৮ ১,৭৯,৫১৯ ১৪৯৪ ৫৮.২

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

ঐতিহাসিক ঘটনাবলি প্রায় ৬০০ বৎসর পূর্বে পীর খানজাহান ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে এ জেলায় আসেন। তিনিই প্রথম সুন্দরবন এলাকা আবাদ করে প্রথম জনবসতি গড়ে তোলেন এবং বাগেরহাটকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় স্বীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। স্বদেশী আন্দোলন প্রচারে মহাত্মা গান্ধী ১৯২৬ সালে খালিশপুরে এসেছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধ খুলনার গল্লামারী রেডিও স্টেশনে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম যুদ্ধ হয়। জেলার খালিশপুর থানা এবং ডুমুরিয়া, তেরখাদা, ফুলতলা বটিয়াঘাটা ও রূপসা উপজেলাসহ বিভিন্ন স্থানে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে দৌলতপুর, ও শিরোমণি এলাকায় মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সঙ্গে পাকবাহিনীর চার দিন ব্যাপী ভয়ঙ্কর ট্যাঙ্কযুদ্ধ চলে। জেলায় ৩টি স্থানে বধ্যভূমির সন্ধান পাওয়া গেছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে ৫টি স্মৃতিস্তম্ভ এবং খুলনা-যশোর রাস্তার মোড়ে ‘বীর বাঙালী’ নামে একটি ভাস্কর্য স্থাপিত হয়েছে।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৬০.১%; পুরুষ ৬৪.৩%, মহিলা ৫৫.৩%। বিশ্ববিদ্যালয় ৬, মেডিকেল কলেজ ১, হোমিওপ্যাথিক কলেজ ১, কলেজ ২৭, আর্ট কলেজ ১, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ৬, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৫০। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৬৯), খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৯১), খুলনা মেডিকেল কলেজ (১৯৯২), খুলনা হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ, দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটি (১৯৮৯), এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (১৯৯৬), আযম খান কমার্স কলেজ, ব্রজলাল কলেজ, সরকারি পাইওনিয়ার মহিলা কলেজ, সুন্দরবন আদর্শ মহাবিদ্যালয় (১৯৬৯), কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয় (১৯৮৪), জোবেদা খানম কলেজ (১৯৯৬), হাজী মুহাম্মদ মুহসীন কলেজ, খুলনা সিটি কর্পোরেশন কলেজিয়েট স্কুল, খুলনা জেলা স্কুল (১৮৮৫), সেন্ট জোসেফ হাই স্কুল, করোনেশন সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, টুটপাড়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৯৬), কয়রা মদিনাবাদ হাইস্কুল, সুন্দরবন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ভিক্টোরিয়া ইনফ্যান্ট প্রাথমিক বিদ্যালয়, খুলনা আলিয়া মাদ্রাসা।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী বর্তমান দৈনিক পত্রিকা: ডেইলী ট্রিবিউন, দৈনিক জন্মভূমি, দৈনিক পূর্বাঞ্চল, দৈনিক প্রবাহ, দৈনিক অনির্বাণ, দৈনিক জনবার্তা, দৈনিক তথ্য, দৈনিক রাজপথের দাবী, দৈনিক সত্যখবর, দৈনিক হিযবুল্লা, দৈনিক পাঠকের কাগজ, দৈনিক যুগের সাথী, দৈনিক কালান্তর, দৈনিক বিশ্ববার্তা, ডেইলী মেইল। বর্তমান সাময়িকী: পুরুষোত্তমদ্যুতি, শিকড়, সাহিত্য পত্রিকা পদাতিক। সাপ্তাহিক: খুলনা, জনভেরী, পদধ্বনি, রূপসা, ছায়াপথ, গণবাণী। অবলুপ্ত সাময়িকী: আগামী, ইত্যাদি, দেশকাল।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি  ৩৪.৯০%, অকৃষি শ্রমিক ৬.২২%, শিল্প ৩.৫১%, ব্যবসা ১৯.৬০%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৫.১৭%, চাকরি ১৮.২৭%, নির্মাণ ১.৯৯%, ধর্মীয়  সেবা ০.২১%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৭৮% এবং অন্যান্য ৯.৩৫%।

লোকসংস্কৃতি জারি, সারি, কীর্তন, গাজীর গান, হালুই গান, মনসার ভাসান, ভাটি পূজার গান উল্লেখযোগ্য। কাবাডি, গোল্লললাছুট, হাডুডু, ঘোড়দৌড়, কানামাছি, লাঠিখেলা, কুস্তি, ডাংগুটি, নৌকাবাইচ, বাঘবন্দি, জোড়-বিজোড় প্রভৃতি খেলা এ অঞ্চলে এখনও প্রচলিত। বিভিন্ন নাট্যগোষ্ঠীর নাট্যচর্চাও এখানে পরিলক্ষিত হয়।

গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বা দর্শনীয় স্থান সুন্দরবন, খুলনা শিপইয়ার্ড, খুলনা স্টেডিয়াম, খুলনা সার্কিট হাউজ, খুলনা জেলা কোর্ট, হাদিস পার্ক, কেন্দ্রীয় কারাগার, খান জাহান আলী সেতু (রূপসা সেতু), খুলনা হার্ডবোর্ড মিল, খুলনা পেপার মিল, খালিশপুর ওয়ান্ডারল্যান্ড শিশু পার্ক, জাহানাবাদ ক্যান্টনমেন্ট চিড়িয়াখানা প্রভৃতি।  [সন্দীপক মল্লিক]

আরও দেখুন সংশ্লিষ্ট উপজেলা।

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; খুলনা জেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭; খুলনা জেলার উপজেলাসমূহের সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।