খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা

খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা (খাগড়াছড়ি জেলা)  আয়তন: ২৯৭.৯১ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°০০´ থেকে ২৩°২১´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°৫৫´ এবং ৯২°০০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে পানছড়ি উপজেলা, দক্ষিণে মহালছড়ি উপজেলা, পূর্বে দীঘিনালা ও লংগদু উপজেলা এবং পশ্চিমে মাটিরাঙ্গা উপজেলা।

জনসংখ্যা ১১১৮৩৩; পুরুষ ৫৮৩৬৬, মহিলা ৫৩৪৬৭। মুসলিম ৩৬৫৯৯, হিন্দু ২৮৫৯০, বৌদ্ধ ৪৪৫৭৪, খ্রিস্টান ২০৪৯ এবং অন্যান্য ২১। এ উপজেলায় চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় প্রধান নদী: চেঙ্গী।

প্রশাসন রেম্রচাই চৌধুরী ১৮৬০ সালে খাগড়াছড়ি উপজেলা শহরের গোড়াপত্তন করেন। খাগড়াছড়ি থানা গঠিত হয় ১৯৬৮ সালে এবং থানা উপজেলায় রূপান্তরিত হয় ১৯৮৪ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১৩ ২৪৬ ৬৯৪৩৪ ৪২৩৯৯ ৩৭৫ ৫৬.৩ (২০০১) ৪৫.২
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৩.০৪ (২০০১) ৭১ ৪৭২৭৮ ২৯৮১ (২০০১) ৭১.০
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৫০.২৫ (২০০১) ২২১৫৬ ৩৬২ (২০০১) ৪৮.৬
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
কমল ছড়ি ৪৭ ১৪০২০ ৬৯৫৩ ৬৬৯০ ৫৪.১
খাগড়াছড়ি ৬৩ ৭৬৮০ ৪৬৬২ ৪৪৭৫ ৪৮.৮
গোলাবাড়ী ২৫ ২৩০৪ ৫৬৬৭ ৫৩২৪ ৪৯.২
পেরা ছড়া ৭৫ ১০১১৪ ৫৬৫৫ ৫৫১০ ৪৮.১
ভাইবোন ছড়া ১৫ ২৬৮৮০ ৯৮৪৬ ৯৭৭৩ ৩৭.২

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

ঐতিহাসিক ঘটনাবলি ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির পর ১৯৯৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিবাহিনীর সশস্ত্র ক্যাডারের একটি দল খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিক অস্ত্র জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে।

মুক্তিযুদ্ধ উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের সবচেয়ে বড় যুদ্ধটি ছিল খাগড়াছড়ি অপারেশন যা ইট দীঘিনালা ও রামগড় থেকে আসা মিত্রবাহিনীর দু’টি কোম্পানী এবং প্রায় দেড় শত মুক্তিযোদ্ধার একটি যৌথ দল দ্বারা পরিচালিত হয়। এই যুদ্ধে শত্রুদের ৩০-৪০ জন হতাহত হয় এবং তরা যুদ্ধে টিকতে না পেরে জঙ্গলের দিকে পালিয়ে যায়।

বিস্তারিত দেখুন খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ২।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান খাগড়াছড়ি জামে মসজিদ, বায়তুল শরফ জামে মসজিদ, লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দির (১৯৩৯), শিব মন্দির, খাগড়াপুর গীর্জা উল্লেখযোগ্য।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫৭.১%; পুরুষ ৬৩.২%, মহিলা ৫০.৪%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ (১৯৭৪), খাগড়াছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫৭), খাগড়াছড়ি উত্তর খবংপডিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯০৫)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১, ক্লাব ৩৮, নাট্যদল ১, মহিলা সংগঠন ১২, স্টেডিয়াম ১, সিনেমা হল ১, উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট ১।

দর্শনীয় স্থান আলুটিলা, কামভাঙ্গা, বাঙ্গামুরা।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৪২.৪৩%, অকৃষি শ্রমিক ১২.৫১%, ব্যবসা ১১.৯৭%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৩৮%, চাকরি ১৭.৬৪%, নির্মাণ ১.৮০%, ধর্মীয় সেবা ০.২৮%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.২৭% এবং অন্যান্য ১০.৭২%।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, আদা, হলুদ, আলু, বাদাম, কার্পাস, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি কয়েক জাতের ধান।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, জাম, কাঁঠাল, আনারস, পেঁপে, কলা, লিচু।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার হাঁস মুরগি ১২।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৪৫ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৭০ কিমি, কাঁচারাস্তা ১৭৫ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়া ও গরুর গাড়ি, হাতিবাহন।

শিল্প ও কলকারখানা স’মিল, আইস ফ্যাক্টরি।

কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প, স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, কাঠের কাজ, বাঁশের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৩, মেলা ২। খাগড়াছড়ি বাজার এবং শিব মেলা ও বৌদ্ধ মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য   কলা, আনারস, কাঁঠাল, পেঁপে।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৫২.০% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৭৮.৩%, ট্যাপ ১.৭% এবং অন্যান্য ২০.০%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৬১.৯% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩৫.৪% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ২.৭% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতাল ১, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ৫, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৩, মাতৃমঙ্গল ক্লিনিক ১, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ৯।

এনজিও ব্র্যাক, আইডিএফ।  [শুভ্র জ্যোতি চাকমা]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।