খতনা

খতনা (Circumcision)  পুরুষাঙ্গের শিশ্নমুন্ডি ঢেকে রাখা অগ্রত্বক (prepuce) এর অপসারণ। ইহা মুসলমানি নামেও পরিচিত। প্রাচীন মিশরে এর প্রচলন ছিল। হযরত ইব্রাহীম(আঃ) এর সময় থেকে চালু আর হযরত মোহাম্মদ(সাঃ) অনুমোদিত একার্যটি মুসলমান ছেলেদের জন্য  ইসলাম ধর্মে  সুনমাত। ধর্মীয় প্রথা হিসেবে ইহুদি ও অর্থোডক্স খ্রীষ্টানদের মধ্যে আর বিবিধ উপকারিতা বিবেচনায় অন্যান্যদের মধ্যেও বিশেষ করে আমেরিকায় এর ব্যাপক প্রচলন রয়েছে। এছাড়া  অগ্রত্বকের বিভিনম ব্যাধির (phimosis, paraphimosis) চিকিৎসায়ও খতনা করা হয়। পৃথিবীর প্রায় ৩০% পুরুষ খতনা করা আর এদের মধ্যে শতকরা ৬৮ জনই মুসলমান।

অগ্রত্বক পুরুষাঙ্গের শিশ্নমুন্ডিকে আচ্ছাদিত করে রাখে। প্রাপ্তবয়স্কদেরক্ষেত্রে এর নীচে ভিতর দিকের মিউকাস আবরণীতে অবস্থিহত অসংখ্য গ্রন্থি থেকে নির্গত দূর্গন্ধযুক্ত পণিরের ন্যায় 'smegma' নামক বস্ত্ত জমে। খতনা অপরিচ্ছনম এ অবস্থার অবসান ঘটায়। এছাড়া এটা প্রমাণিত যে খতনা করা পুরুষের লিঙ্গের ক্যানসার একেবারে নেই বললেই চলে এবং  এইডসসহ যাবতীয় যৌন রোগে এরা খতনা না করা পুরুষদের চেয়ে কম ভোগে।

ইহুদিরা নবজাতকের অষ্ঠমদিনে, পাশ্চাত্য দেশসমূহে নবজাতকের হাসপাতাল পরিত্যাগের পূর্বে আর মধ্যপ্রাচ্যে সাধারণত ৩-৬ মাস বয়সে ছেলেদের খতনা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে প্রথাগতভাবে বংশপরম্পরায় একাজে নিয়োজিত 'হাজাম ' (খলিফা নামেও পরিচিত) দ্বারা নিজবাড়ীতে সাধারণত ৪-১০ বছর বয়সে ছেলেদের খতনা করা হয় যদিও বিগত তিন চার দশকে বিশেষকরে শহরাঞ্চলে শল্যচিকিৎসক দ্বারা ব্যাথা ও জীবানুমুক্ত পরিবেশে হাসপাতালে খতনা করার প্রচলন বেড়েই চলেছে। এ উপলক্ষ্যে মিষ্ঠিমুখ এমনকি ভোজেরও আয়োজন হয়ে থাকে। লক্ষণীয় যে লুঙ্গি পরিধানে অনভ্যস্ত শহরাঞ্চলের ছেলেরাও অন্তত ওই কয়েক দিন সুবিধাহেতু লুঙ্গি পরিধান করে থাকে।

শুধুমাত্র ক্লাইটরিস অপসারণ এবং এর সহিত প্রাচীন মিশরীয় ফেরাউন রাজাদের চালু লেবিয়া মেজরাদ্বয় এর সংযোজনকৃত মেয়েদের খতনার প্রচলন আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকাসহ পৃথিবীর বিভিনম দেশে রয়েছে।  বাংলাদেশে এর প্রচলন নেই। ধর্মীয় ও সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশে খতনা ছাড়া কোনো মুসলমান পুরুষ অচিন্তনীয়। অনুরুপভাবে বাংলাদেশে কোনো মহিলার খতনার ব্যাপারটি সাধারণভাবে শুধু অজ্ঞাত নহে ব্যাপারটি অবিশবাস্যও বটে।  [এম.কে.আই কাইয়ুম চৌধুরী]