কৃষিপঞ্জিকা

কৃষিপঞ্জিকা (Agricultural Calendar)  জমি প্রস্ত্ততকরণ, সার প্রয়োগ, বীজবপন/চারারোপণ, আগাছা নিয়ন্ত্রণ, সেচ ও নিষ্কাশন, রোগ ও পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ, ফসল সংগ্রহ ইত্যাদি ভিত্তিতে বার্ষিক উৎপাদন কার্যক্রম।

একটি কৃষিপঞ্জিকা শস্যের জীবনচক্র ও সেগুলির চাষাবাদ ব্যবস্থাপনা জানতে, শস্যবিন্যাসে (cropping pattern) কার্যকর ও লাভজনক বিভিন্ন শস্য সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণে, শস্যপর্যায়সূচি (crop ratation) তৈরীতে এবং বিভিন্ন ফসলচাষ প্রকল্প (cropping scheme) গ্রহণে সহায়তা যোগায়। এ ছাড়া যথাসময়ে বীজ, সার, যন্ত্রপাতি ও কীটনাশক সংগ্রহে, ব্যয় ও মুনাফা সম্পর্কে ধারণা লাভে, খামার পরিচালনায়, শ্রমদক্ষতা বৃদ্ধিতে এবং সর্বোচ্চ ফসল উৎপাদন, ভূমির ব্যবহার ও আর্থিক সুবিধা লাভের জন্য সার্বিক পরিকল্পনা গ্রহণে সহায়ক হয়।

একটি কৃষিপঞ্জিকা সারণিবদ্ধ, লেখচিত্র বা চিত্রের আকারে তৈরী হতে পারে। সারণিবদ্ধ কৃষিপঞ্জিকাতে সাধারণ চাষাবাদ কৌশল এবং ফলনসহ শস্যসমূহের তথ্য দেওয়া থাকে। প্রত্যেক শস্যের জন্য মাসভিত্তিক চাষাবাদ পরিচর্যাও তালিকাবদ্ধ হয়। এ পঞ্জিকার সাহায্যে খামারের কাজকর্ম সম্পাদনে খামার শ্রমিকদের ফলপ্রসূভাবে নিয়োগ করা যায়। লেখচিত্র ধরনের কৃষিপঞ্জিকাতে শস্যচক্রের তথ্যাদি উপস্থাপিত হয়। এ ধরনের কৃষিপঞ্জিকাতে বিভিন্ন ফসলের বীজবপন ও চারারোপণের সময়, বৃদ্ধি-পর্যায় ও ফসল সংগ্রহের সময়সহ চাষাবাদের বিস্তারিত তথ্যাদি উল্লেখ থাকে। এ পঞ্জিকার সাহায্যে দক্ষতার সঙ্গে বিভিন্ন মাসভিত্তিক খামার কার্যক্রমের সমন্বয় সম্পন্ন করা যায়। লেখচিত্রের উপস্থাপনা আনুভূমিক, উল্লম্ব বা বৃত্তাকার হতে পারে (চিত্র)।

চিত্র ধরনের কৃষিপঞ্জিকাতে বিভিন্ন শস্য সম্পর্কিত তথ্য ও সেগুলির বিস্তারিত চাষাবাদ কৌশলের বিবরণ দেওয়া থাকে। এ ধরনের পঞ্জিকার মাধ্যমে নিরক্ষর কৃষকেরা নানাবিধ শস্যের বিভিন্ন উৎপাদন কৌশল সহজে বুঝতে পারেন। এ পঞ্জিকার একমাত্র সমস্যা এটি যথেষ্ট ব্যয়বহুল এবং উপস্থাপনে বেশি জায়গা লাগে। ঐতিহ্যিকভাবে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের কৃষকদের একটি নিজস্ব পঞ্জিকা রয়েছে যা তারা বহু বছরের অভিজ্ঞতা থেকে উদ্ভাবন করেছেন। কৃষিবিজ্ঞানীরা আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য, বিদ্যমান শস্যবিন্যাস ও মাঠপর্যায়ের পরীক্ষা বিশ্লেষণ করে পঞ্জিকা তৈরি করেন, যা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় বা কেন্দ্রের মাধ্যমে কৃষকদের কাছে পৌঁছায়। [এম শহীদুল ইসলাম]

আরও দেখুন কৃষি; ফসল