কুলাউড়া উপজেলা

কুলাউড়া উপজেলা (মৌলভীবাজার জেলা)  আয়তন: ৫৪৫.৭৩ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°১৯´ থেকে ২৪°৩৯´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°৫৪´ থেকে ৯২°০৭´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ফেঞ্চুগঞ্জ ও বড়লেখা উপজেলা, দক্ষিণে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, পূর্বে জুড়ী উপজেলা, পশ্চিমে কমলগঞ্জ ও রাজনগর উপজেলা।

জনসংখ্যা ৩৬০১৯৫; পুরুষ ১৭৫৮৩২, মহিলা ১৮৪৩৬৩। মুসলিম ২৮৩৮৬৮, হিন্দু ৭০০০৫, খ্রিস্টান ৫৯৮৮, বৌদ্ধ ৭৩ এবং অন্যান্য ২৬১। এ উপজেলায় মনিপুরী, খাসিয়া প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় প্রধান নদী: মনু।

প্রশাসন কুলাউড়া থানা গঠিত হয় ১৯২২ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৯২ সালের ১০ জানুয়ারি। কুলাউড়া পৌরসভা গঠিত হয় ১৯৯৬ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১৩ ১২৮ ৪৪৭ ২৭৪৯১ ৩৩২৭০৪ ৬৬০ ৬৫.৩৫ (২০০১) ৫০.৭
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১০.৫০ (২০০১) ২৬ ২৬১৫০ ১৯৯৪ (২০০১) ৬৫.৫
পৌরসভার বাইরে উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৩.৮২ (২০০১) ১৩৪১ ২৬৮ (২০০১) ৬২.৭
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
কর্মধা ৫৯ ২৪৪৮০ ১৮১৯২ ১৯১৬৭ ৪৮.৮
কাদিরপুর ৫৩ ৬২৬৩ ১০৭০২ ১০৯৪৮ ৫৭.৮
কুলাউড়া ৬৫ ৫৮২৪ ৮২১৩ ৮৮২৬ ৫১.৮
জয়চণ্ডি ৪১ ১০৭২১ ১৫২৬১ ১৫৭৩৬ ৪৮.৫
টিলাগাঁও ৯৫ ১০১৯৯ ১৫৬৬১ ১৬৩২৬ ৩৭.৭
পৃথিম পাশা ৭১ ৬১১৬ ১৫৩২২ ১৬০১৯ ৬১.৬
বরমচাল ১১ ৭০১৩ ৯৪৯৮ ৯৬৯৩ ৫৬.৩
ব্রাহ্মণ বাজার ১৭ ৬৯৯২ ১৪৯৭৪ ১৫৪২৮ ৫১.৩
ভকশীমইল ১১ ১২৪১৮ ১১৮৫১ ১৩০৪১ ৪৯.৯
ভাটেরা ১৩ ৮১২২ ৭৪৫২ ৮১৩৯ ৫৬.৯
রাউৎগাঁও ৭৭ ৪৮২২ ৯৯৩৭ ১০৬৭০ ৪৬.১
শরীফপুর ৮৯ ৭৯৭১ ১১৩৮৮ ১২৩৪৬ ৪৫.৭
হাজীপুর ৩৫ ৭১৯৬ ১৪৩২৬ ১৪৯২৯ ৫৩.৩

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নির্দশনাদি ও প্রত্নসম্পদ  পৃথিম পাশার নবাব বাড়ি (অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমভাগ), ভাটেরার তাম্রফলক, রঙ্গিরকূল বিদ্যাশ্রম, গগনটিলা, চাঁনগ্রাম দিঘি।

ঐতিহাসিক ঘটনা ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের সময় চট্রগ্রামের ট্রেজারী লুট করে প্রায় ৩০০ সিপাহী পৃথিম পাশার জমিদার গউসআলী খাঁর নিকট আশ্রয় গ্রহণ করে। ১৯২১ সালে ভারতব্যাপী অসহযোগ আন্দোলনের সময় এ উপজেলার রঙ্গীরকূলে পূর্ণেন্দু কিশোর সেনগুপ্তের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছিল বিদ্যাশ্রম। ১৯৩৯ সালে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে যোগ দেয়ার অপরাধে নবীনচন্দ্র স্কুল থেকে বহুসংখ্যক ছাত্র বহিষ্কার হয়। একই সময়ে কুলাউড়া শহর থেকে দুই কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে কালাপানি হাওরে ইংরেজ মিত্র বাহিনীর ঘাঁটি স্থাপন করা হয়েছিল।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনী কুলাউড়া হাসপাতাল ও নবীনচন্দ্র উচ্চবিদ্যালয়ে ক্যাম্প স্থাপন করে। এসময় পাকবাহিনী কুলাউড়ার বিভিন্ন এলাকার প্রায় শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা ও নিরীহ লোককে হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে কুলাউড়ার মুরইছড়ায় অবস্থিত পাকবাহিনীর ক্যাম্প এবং টিলাবাজারের মুক্তিবাহিনী ক্যাম্পের মধ্যে প্রায়ই গুলি বিনিময় হতো। মুক্তিযোদ্ধারা উপজেলার মনু-চালতাপুর সড়কের পাইপাড়া অংশ, রাজাপুর পাকসেনা ক্যাম্প, কর্মধা ইউনিয়ন প্রভৃতি স্থানে অপারেশন পরিচালনা করে। উপজেলার চালতগাঁও-এ ১টি গণকবর ও চিতল মুচির বাড়ি এলাকায় ১টি বধ্যভূমির সন্ধান পাওয়া গেছে।

বিস্তারিত দেখুন কুলাউড়া উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ২।

উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হযরত শাহ কামালের (র:) মাযার।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫১.৯%; পুরুষ ৫২.৫%, মহিলা ৫১.৩%। কলেজ ৯, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩৯, প্রাথমিক বিদ্যালয় ২১৮, কমিউনিটি বিদ্যালয় ১৬, মাদ্রাসা ৪৩। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: কুলাউড়া ডিগ্রি কলেজ (১৯৬৯), ইয়াকুব তাজুল মহিলা কলেজ (১৯৯৫), লংলা আধুনিক মহাবিদ্যালয় (১৯৯৮), ইউসুফ গনি আদর্শ কলেজ, নবীন চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৯), নয়াবাজার কেসি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৯), রাউৎগাঁও উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৮), কুলাউড়া গার্লস হাই স্কুল।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী সাপ্তাহিক: মানব ঠিকানা (১৯৯৭), কুলাউড়ার ডাক (১৯৯৯); অবলুপ্ত: শ্রীহট্ট ভ্রমণ-পরিদর্শন (১৯৩০), সাপ্তাহিক নকিব (১৯৩৭), সাপ্তাহিক ফরিয়াদ (১৯৮৭), মাসিক আল আমীন (১৩৫৯ বাংলা)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি, খেলার মাঠ।

দর্শনীয় স্থান এ উপজেলায় ৩৩ টি চা বাগান এবং মুরাইছড়ায় (কর্মধা) ১৫০০ একর বনভূমিতে নির্মিত দেশের প্রথম ইকোপার্ক রয়েছে। এছাড়া টিলা সদৃশ ভূমিরূপ, রাবার বাগান উল্লেখযোগ্য।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৪৩.৮৩%, অকৃষি শ্রমিক ১৩.৫৬%, শিল্প ২.০০%, ব্যবসা ৯.৬২%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.৯৪%, চাকরি ৬.৪১%, নির্মাণ ১.০৭%, ধর্মীয় সেবা ০.৩৯%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৪.৮৬% এবং অন্যান্য ১৬.৩২%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪৫.০৩%, ভূমিহীন ৫৪.৯৭%।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, আলু, চা, রাবার, বাঁশ, বেত, পান, সরিষা, তেজপাতা।

বিলুপ্ত ও বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি  ইক্ষু, তিল, তিসি, অড়হর।

প্রধান ফল-ফলাদি কাঁঠাল, আনারস, আম, জাম, লিচু।

মৎস্য, হাঁস-মুরগির খামার  মৎস্য ৮১, হাঁস-মুরগি ৭৯, হ্যাচারি ১।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ২১২ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১৪.৪৪ কিমি, কাঁচারাস্তা ৭৬৮ কিমি; নৌপথ ২০ কিমি; রেলপথ ৪৫ কিমি, রেলস্টেশন ৭।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়া ও গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা চালকল, চা কারখানা, বরফকল, করাত কল, এ্যালুমিনিয়াম ফ্যাক্টরি, হার্ডবোর্ড ফ্যাক্টরি, হিমাগার উল্লেখযোগ্য ।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, তাঁতশিল্প, শীতল পাটিশিল্প, বাঁশের কাজ, বেতের কাজ, ওয়েল্ডিং উল্লেখযোগ্য ।

হাটবাজার, মেলা  হাটবাজার ৫১। ব্রাহ্মণ বাজার, কামিনীগঞ্জ বাজার, ফলুতলা বাজার, রবির বাজার, ঘাটের বাজার, উত্তর বাজার, দক্ষিণ বাজার, চৌধুরী বাজার এবং লালবাগের বারুণী মেলা, দুর্গাপূজার মেলা, পৌষ সংক্রান্তির মেলা, রঙ্গিরকূল আশ্রমকেন্দ্রিক মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  চা, রবার, পান, বাঁশ ও বেতের আসবাবপত্র।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৫৩.৯% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

খনিজ সম্পদ  এ উপজেলায় ইউরেনিয়াম, কাঁচবালি, তেল (বরমচাল) ও গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৭১.১%, ট্যাপ ৩.৮% এবং অন্যান্য ২৫.১%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা উপজেলার ৫১.৩% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৪২.০% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৬.৭% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, হাসপাতাল ৬, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১৬, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র ৯, পল্লী স্বাস্থ্যকেন্দ্র ৫, মা ও শিশু স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৫, দাতব্য চিকিৎসালয় ৭, কমিউনিটি ক্লিনিক ১৫, ডায়াবেটিস সেন্টার ১, পক্ষাঘাত পুনর্বাসন কেন্দ্র ১, পশু চিকিৎসা কেন্দ্র ১।

উল্লেখযোগ্য এনজিও ব্র্যাক, কারিতাস, আশা, হীড বাংলাদেশ, মিশনারিজ অব চ্যারিটি, স্বনির্ভর বাংলাদেশ। [ছমির উদ্দিন আহমেদ]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; কুলাউড়া উপজেলা মাঠ পর্যায়ের প্রতিবেদন ২০০৭।