কুয়াকাটা

কুয়াকাটা, পটুয়াখালী

কুয়াকাটা নৈসর্গিক শোভামন্ডিত পর্যটন কেন্দ্র। বঙ্গোপসাগরের তটে অবস্থিত কুয়াকাটা থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যান্ত অবলোকন করা যায়। বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া থানার লতাচাপলি ইউনিয়নে কুয়াকাটার অবস্থান। পূর্বে গজমতির সংরক্ষিত বনাঞ্চল, পশ্চিমে কুয়াকাটার বনভূমি, উত্তরে কলাপাড়া জনপদ ও দক্ষিণে বিশাল বঙ্গোপসাগর। কুয়াকাটার স্থানীয় নাম সাগর কন্যা।

কুয়াকাটা বিভিন্ন পথে বিভিন্ন মাধ্যমে যাওয়া যায়। রাজধানী ঢাকা থেকে বিমানে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা যাওয়া যায়। বিলাসবহুল লঞ্চ বা স্টিমারযোগেও কুয়াকাটা যাওয়া যায়। আবার বাসযোগে সরাসরি কুয়াকাটা যাওয়া যায়।

কুয়াকাটার নামকরণ সম্পর্কে জানা যায় যে, ১৭৮৪ সালে বর্মিরাজা রাখাইনদের মাতৃভূমি আরাকান দখল করলে হাজার হাজার রাখাইন তাদের মাতৃভূমি আরাকান ত্যাগ করে। তারা বড় বড় নৌকায় অজানা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে। বঙ্গোপসাগরের তীরের রাঙাবালি দ্বীপে এসে তারা অবতরণ করে। গড়ে তোলে বসতি। সাগরের লোনা পানি ব্যবহার এবং খাওয়ার অনুপযোগী বলে বালুর মধ্যে তারা কূপ বা কুয়া খনন করে বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করত। কুয়া খনন করে এখানে সুপেয় পানি পাওয়ায় তারা এর নাম দিয়েছিল কুয়াকাটা।

কুয়াকাটা সাগর-সৈকতের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৮ কিলোমিটার আর প্রস্থে প্রায় ৩ কিলোমিটার। সৈকতের পাশেই রয়েছে বিশাল নারকেল বাগান এবং গঙ্গামতির সংরক্ষিত বনাঞ্চল। পশ্চিমপ্রান্তে রয়েছে বিশাল এলাকা জুড়ে পাত্রার সংরক্ষিত বনাঞ্চল। দক্ষিণে সাগরের জলরাশি। শীতকালে সৈকতের পূর্বান্তে গড়ে ওঠে অস্থায়ী জেলেপাড়া আর শুঁটকি মাছের কারখানা। এখানে অনেক সেগুন গাছের বাগান এবং পিকনিক স্পট রয়েছে। আলীপুর এ অঞ্চলের বৃহৎ মৎস্য বন্দর। শীতকালে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির আগমন ঘটে। এখানে অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এবং আদবাসিদের বসতি রয়েছে যেমন, কেরানিপাড়া, মিস্ত্রীপাড়া, সীমা বৌদ্ধ মন্দির এবং আমখোলাপাড়া যা পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। কুয়াকাটাতে রাখাইন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে বাস্তব ধারণা পাওয়া যায়।

কুয়াকাটা হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের নিকট একটি তীর্থ স্থান। তারা রাস পূর্ণিমা ও মাঘী পূর্ণিমাতে কুয়াকাটার পবিত্র সৈকতে স্নানসহ নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদির আয়োজন করে। [মোফাজ্জল হোসেন]