কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা

কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা (কিশোরগঞ্জ জেলা)  আয়তন: ১৯৩.৭২ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°২১´ থেকে ২৪°৩২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৪২´ থেকে ৯০°৫২´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে নান্দাইল উপজেলা, দক্ষিণে পাকুন্দিয়া ও কটিয়াদি উপজেলা, পূর্বে করিমগঞ্জ ও তাড়াইল উপজেলা, পশ্চিমে হোসেনপুর ও নান্দাইল উপজেলা।

জনসংখ্যা ৪১৪২০৮; পুরুষ ২০৫০৯৫, মহিলা ২০৯১১৩। মুসলিম ৩৯১৭১২, হিন্দু ২২৩০০, বৌদ্ধ ৪, খ্রিস্টান ৬০ এবং অন্যান্য ১৩২।

জলাশয় প্রধান নদী: নরসুন্দা, সিংগুয়া ও বাথালী। মানষা বিল, দুয়াসুরা বিল ও মঙ্গলহাট খাল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন কিশোরগঞ্জ সদর থানা গঠিত হয় ১৮৬০ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। কিশোরগঞ্জ পৌরসভা গঠিত হয় ১৮৬৯ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১১ ১১১ ২১০ ১০৩৭৯৮ ৩১০৪১০ ২১৩৮ ৭২.৫ ৪০.৬
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১১.৩০ ৫৬ ১০৩৭৯৮ ৯১৮৬ ৭২.৫
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
কোরশা কারিয়াইল ৫১ ৩৫৩৮ ১১৪৮২ ১২৪৭৮ ৩৯.৮
চৌদ্দশত ২৫ ৫৬৭৫ ২০১৪৯ ২০৭২৪ ৪০.৬
ডানপাটালি ৩৪ ২৭৮১ ৭৭৮১ ৮১০৩ ৩৪.২
বাউলাই ১৭ ৪৩২০ ১৮৭৮৭ ১৯২৭৯ ৩১.৬
বিন্নাতি ১৬ ৩১২৯ ১০১৩১ ১০৬৫১ ৪৪.৪
মাহিনান্দ ৬৯ ৫৭৫২ ১১১৮৮ ১১৩৪৬ ৪৩.৫
মাইজখাপান ৭৭ ৩৮৮৭ ১১৯৩০ ১২৭৫০ ৪০.৫
মারিয়া ৮৬ ৪৩০৯ ১৭৪২০ ১৭৮৬৮ ৪৫.৩
যশোদল ৪৩ ৩৭২৬ ১৭২৯০ ১৭৪২২ ৩৯.৭
রশিদাবাদ ৯৪ ৫১৮৭ ১৩৬৬৫ ১৪৩৪২ ৪৩.৮
লতিবাবাদ ৬০ ২৭৭৫ ১২৭৩৮ ১২৮৮৬ ৪৩.৫

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ শহীদি মসজিদ, পাগলা মসজিদ, কবি চন্দ্রাবতীর শিব মন্দির, হয়বতনগর জমিদার বাড়ি।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে পাকবাহিনী এ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ব্যাপক গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। যশোদলের বড়ইতলায় পাকসেনারা ৩৬০ জন নিরীহ লোককে নির্মমভাবে হত্যা করে। কিশোরগঞ্জ শহরের পার্শ্ববর্তী প্যারাভাঙ্গায় মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনী ও রাজাকারদের একটি দলকে প্রতিহত করার জন্য সীমিত শক্তি নিয়েও প্রাণপন লড়াই-এর সম্মুখীন হয়।

কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে ৭টি বধ্যভূমি (যশোদল বরইতলা ও সুগার মিল এবং সিদ্ধেশ্বরী নদীঘাট) ও ১টি শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ (গুরুদয়াল সরকারি কলেজ) রয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ২।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৩৪১, মাযার ৭, মন্দির ১৫, গির্জা ১, আখড়া ১৪। উল্লেখযোগ্য: শহীদি মসজিদ, পাগলা মসজিদ, হয়বতনগর মসজিদ, কাতিয়ারচর নিজামউদ্দিন আউলিয়ার মাযার।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৮.৯%; পুরুষ ৪৯.৬%, মহিলা ৪৮.৩%। কলেজ ৫, হোমিওপ্যাথিক কলেজ ১, টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ১, কারিগরি কলেজ ১; মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৭, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৮০, মাদ্রাসা ৩৭। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল কলেজ (১৯৪৩), সরকারি মহিলা কলেজ (১৯৬৯), কিশোরগঞ্জ ওয়ালী নেওয়াজ খাঁন কলেজ (১৯৮২), আলহাজ্ব আবদুল কুদ্দুস হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল (২০০২), কিশোরগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮১), আজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৬), এস ভি সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় (১৯৪৩), টুটিয়ারচর মাজহারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসা (১৯০৩), আউলিয়া পাড়া ফাজিল মাদ্রাসা (১৯২১), বিরবরুল্লা আদর্শ দাখিল মাদ্রাসা (১৯২৮)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী বর্তমান: সাময়িকী সৃষ্টি (১৯৮৬), দৈনিক আজকের দেশ (১৯৯২/৯৩), দৈনিক শতাব্দীর কণ্ঠ (২০০১) সাপ্তাহিক আলোর মেলা (২০০৩), দৃশ্যপট’ ৭১ (২০০৩), দৈনিক আজকের সারাদিন (২০০৪), আলোকিত কিশোরগঞ্জ (২০০৫), দৈনিক কিশোরগঞ্জ (২০০৬) উল্লেলখযোগ্য। অবলুপ্ত: দৈনিক প্রাত্যাহিক চিত্র (১৯৯৭); সাপ্তাহিক: আর্যগৌরব (১৯০৪), কিশোরগঞ্জ বার্তাবহ (১৯২৪), কিশোরগঞ্জ বার্তা (১৯৪৬), কান্ডারী (১৯৭২), কিশোরগঞ্জ বার্তা (১৯৭৪), জনবার্তা (১৯৮৪), প্রকাশ (১৯৮৫), শুরুক (১৯৮৬), দূরবীন (১৯৮৬), কিশোরগঞ্জ বার্তা (১৯৯১), কিশোরগঞ্জ পরিক্রমা (১৯৯১), মনিহার (১৯৯১), কিশোরগঞ্জ সংবাদ (১৯৯১), কিশোরগঞ্জ প্রবাহ (১৯৯১), কথাবার্তা (১৯৯২); পাক্ষিক: নতুন পত্র (১৯৬২), নতুন দেশ (১৯৮১) নরসুন্দা (১৯৮১); মাসিক: আখতার (উর্দু, ১৯২৬), আল হাসান (১৯৯২), ন্যায়দন্ড (১৯৯৬)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ২৫, লাইব্রেরি ৫, সিনেমা হল ৬, খেলার মাঠ ৩০।

দর্শনীয় স্থান শোলাকিয়া ঈদগাহ।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৪৩.৬৪%, অকৃষি শ্রমিক ৫.৯৩%, শিল্প ১.২২%, ব্যবসা ১৯.৮৮%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৬.৩৬%, চাকরি ৯.৫৩%, নির্মাণ ২.৫২%, ধর্মীয় সেবা ০.২৭%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৬৪% এবং অন্যান্য ১০.০১%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪৭.৭৭%, ভূমিহীন ৫২.২৩%। শহরে ৪৬.৪১% এবং গ্রামে ৪৮.১১% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, ভুট্টা, আলু, বাদাম, ডাল, সরিষা, পান, পিঁয়াজ, বেগুন।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি নীল, কাউন, তিসি, অড়হর, পাট।

প্রধান ফল- ফলাদি আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, পেয়ারা।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার   মৎস্য ৬০, গবাদিপশু ৩৭, হাঁস-মুরগি ৪৩৪, হ্যাচারি ৫।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকা রাস্তা ৩২৪.১৮ কিমি, কাঁচা রাস্তা ৩৯২.৫৭ কিমি; রেলপথ ১৮ কিমি; নৌপথ ৫ কিমি। রেল স্টেশন ৩; বাস টার্মিনাল ৪; হেলিপ্যাড ২।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা টেক্সটাইল মিল, রাইসমিল, প্রিন্টিং প্রেস, অয়েল মিল, স’মিল, বেকারি, আইসফ্যাক্টরি, বিড়িশিল্প, ড্রাইসেল ব্যাটারি কারখানা।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, তাঁতশিল্প, লৌহশিল্প, বাঁশশিল্প, বেতশিল্প, মৃৎশিল্প, বুননশিল্প, লোকশিল্প, কাঠের কাজ।

হাটবাজার, মেলা   হাটবাজার ২২, মেলা ৫। সদর বড়বাজার, নীলগঞ্জ বাজার, পুরান থানা হাট, কাচারী বাজার, সাদুল্লা বাজার, লক্ষ্মীগঞ্জ বাজার, বাউলাই বাজার, গোসাই বাজার ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য   চামড়া ও পাট।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৫২.৯% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৩.৩%, ট্যাপ ৩.৪% এবং অন্যান্য ৩.৩%। এ উপজেলার ৩৭.০৭% অগভীর নলকূপের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৫৬.৫% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩৩.৮% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৯.৭% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতাল ৩, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার পরিকল্পনা ক্লিনিক ১০, মাতৃমঙ্গল কেন্দ্র ১, বক্ষব্যাধি হাসপাতাল ১, ডায়াবেটিক হাসপাতাল ১।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে এ উপজেলার পাকাঘরবাড়ি  ও অন্যান্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয় এবং প্রাণহানি ঘটে। ১৯১৫, ১৯৫৪, ১৯৬৮ ও ১৯৮৮ সালের বন্যায় এ উপজেলার ঘরবাড়ি, গবাদিপশু, ফসল ও অন্যান্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, প্রশিকা। [হাকিম মোঃ ফজলুর রহমান]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।