কাচারি

কাচারি  সতেরো শতকে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলির মাধ্যমে সম্ভবত হিন্দি বা মারাঠি ভাষা থেকে উদ্ভূত হয়ে বাংলায় প্রচলিত হয়। কাচারি বলতে বোঝায় একটি আদালত ভবন, একটি বড় কক্ষ, একটি প্রশাসনিক দফতর, ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার কাজে ব্যবহূত একটি স্থান ইত্যাদি। মাদ্রাজ এবং মহীশূরে অফিস-আদালতকে সচরাচর কাচারি বলা হয়। এমনকি প্রায়শই কর্তৃপক্ষসমূহকে কাচারি বলে অভিহিত করা হতো। যেমন, বাংলায় সাধারণ মানুষ সরকারকে সরকার বাহাদুর নামে সম্বোধন করত।

মুগল আমলের প্রথম দিকের সরকারি রেকর্ডসমূহে কাচারির পরিবর্তে দফতর শব্দটিই অধিক ব্যবহূত হতে দেখা যায়।  মুর্শিদকুলী খান ১৭০৪ সালে তাঁর  দীউয়ানি দফতর ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদে সরিয়ে নেন, তবে কাচারি নয়। আবার ওয়ারেন  হেস্টিংস ১৭৭২ সালে রেভিনিউ কাচারি মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতায় স্থানান্তর করেন, কিন্তু রেভিনিউ দফতর নয়। কলকাতায় কোম্পানির জমিদারি প্রতিষ্ঠার সূচনা থেকেই কোম্পানির গোমস্তাদের কাচারিতেই জমিদারি কর্মকান্ড পরিচালনা করতে দেখা যায়। তারা দফতর ব্যবহার করে নি। এজেন্সি হাউস এবং নীলকররা তাদের কার্যালয়কে দফতরের পরিবর্তে কাচারি বলতেন।

বাংলায় ব্রিটিশদের কর্তৃত্ব যুক্তিসংগতভাবেই দক্ষিণ ভারতের কাচারির সাথে উত্তর ভারতের দফতরকে প্রতিস্থাপন করেছে। ১৭৬৫ সাল থেকে  জমিদারি দফতর এবং সকল রাজস্ব কার্যালয় কাচারি নামে পরিচিতি লাভ করে। জেলা কালেক্টরগণ কাচারিতেই অফিস পরিচালনা করতেন। এ কারণে বিশ শতকের প্রথম দিকের সাহিত্যে সরকারি কাচারি, জেলা কাচারি, জমিদারি কাচারি, মহাজনি কাচারি এবং বানিয়া (বাণিজ্যিক) কাচারি প্রভৃতি নামের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। এভাবে প্রতি জেলায় কাচারি পাড়া ছিল যেখানে প্রভাবশালী ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের লোকজন বসবাস করতেন এবং বাণিজ্যিক কর্মকান্ড পরিচালনা করতেন। বর্তমানে কাচারি শব্দের পরিবর্তে চালু হয়েছে ইংরেজি শব্দ- বিভাগ, অফিস প্রভৃতি। আজকাল আর মানুষ কাচারিতে যায় না, যদিও প্রবীণদের অনেকেই এখনও জেলা কালেক্টরের অফিসকে কাচারি বলে থাকেন।  [সিরাজুল ইসলাম]