কর্তাভজা

কর্তাভজা  আঠারো শতকে  বৈষ্ণববাদ ও  সুফিবাদ থেকে উদ্ভূত একটি ক্ষুদ্র ধর্মীয় সম্প্রদায়। এ মতবাদের মূল গুরু ছিলেন  আউলচাঁদ (আনু. ১৬৯৪-১৭৭০)। তিনি মুসলমান না হিন্দু ছিলেন তা স্পষ্টভাবে জানা যায় না। তাঁর আউল নাম থেকে মনে করা হয় তিনি মুসলমান ছিলেন, কারণ আউল  বাউল মতবাদেরই একটি শাখা। তবে তিনি নিজে এ ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। তাঁর প্রথম জীবন সম্পর্কে কিছুই জানা যায় না। প্রচলিত লোককাহিনী অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের চবিবশ পরগনা জেলার উলা গ্রামে পান ক্ষেতে একটি নবজাত শিশু পাওয়া যায়। ক্ষেতের মালিক মহাদেব বারুই তাঁকে লালন-পালন করেন। বড় হয়ে তিনি গৃহত্যাগ করেন এবং ফকির হিসেবে ঘুরে বেড়ান। এ সময় তাঁকে সবাই আউলচাঁদ হিসেবে জানত। আউল মহাপ্রভুকে বলতেন কর্তা, ঈশ্বর বা খোদা নয়। সঙ্গীত ছিল তাঁর সাধনার প্রধান মাধ্যম। তিনি তাঁর অনুসারীদের বলতেন ঈশ্বর বা খোদাজ্ঞানে কর্তার উপাসনা করতে। তৎকালীন লোকেরা তাই এ সম্প্রদায়কে বলত কর্তাভজা। তাঁর অনুসারীদের অধিকাংশই ছিল হিন্দু এবং তারা তাঁকে চৈতন্যদেবের  অবতার মনে করে পূজা করত।

কালক্রমে কর্তাভজা সম্প্রদায়  কলকাতা, চবিবশ পরগনা, সুন্দরবন ও  সিলেট অঞ্চলে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এ মতবাদের একজন অনুসারী ছিলেন কলকাতার ভূকৈলাসের জয়নারায়ণ ঘোষাল। তিনি ছিলেন একজন বানিয়া, ধনী জমিদার এবং গীতিকার। এ মতের অনুসারীদের মধ্যে আরও ছিলেন বিখ্যাত কবিয়াল আন্দিরাম, কানাই ঘোষ, কৃষ্ণ দাস, নিধিরাম ঘোষ, পাঁচকড়ি (পাঞ্চুরুই দাস) এবং মনোহর দাস। কর্তাভজা সম্প্রদায় ধর্ম বা নর-নারীর পার্থক্য স্বীকার করত না। মতবাদটি আঠারো শতকের শেষে এবং উনিশ শতকের গোড়ার দিকে বেশ প্রভাবশালী ছিল, কিন্তু বিশ শতকের শুরুতে হিন্দু ও মুসলমানদের সংস্কার আন্দোলনের ফলে তা দুর্বল হয়ে যায়।  [সিরাজুল ইসলাম]

আরও দেখুন লোকসম্প্রদায়