কয়লাস্তর মিথেন

কয়লাস্তর মিথেন - সি.বি.এম (Coal Bed Methane - CBM)  কয়লাস্তরে উৎপত্তি লাভকারী বর্ণ ও গন্ধহীন দাহ্য গ্যাস। বাংলাদেশে কয়লাস্তর মিথেনকে দেশের, বিশেষত পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিকল্প জ্বালানি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে পুরু কয়লাস্তর সমৃদ্ধ প্রধান কয়লাক্ষেত্রগুলি আবিষ্কৃত হয়েছে। এ সকল কয়লাক্ষেত্র মিথেন গ্যাস সমৃদ্ধ এবং খনন কূপের সাহায্যে সে গ্যাস উত্তোলিত হলে তা শিল্প, বাণিজ্য ও গৃহস্থালি জ্বালানি হিসেবে ব্যবহূত হতে পারে। এভাবে কয়লাস্তর থেকে গ্যাস আহরণ করা হলে তা কয়লাক্ষেত্র থেকে ভবিষ্যতে কয়লা আহরণ প্রকল্পে বিরূপ প্রভাব ফেলবে না। ও.ডি.এ (ওভারসিজ ডেভলপমেন্ট এইড) সহায়তা কর্মসূচির অধীনে ব্রিটিশ জিওলজিক্যাল সার্ভে ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সি.বি.এম প্রজেক্টের প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই করে। এ সমীক্ষার মাধ্যমে জামালগঞ্জ, খালাশপীর ও বড়পুকুরিয়া কয়লাক্ষেত্রের সম্ভাব্য গ্যাস সঞ্চয়ের পরিমাণ নিরূপণ করা হয়েছে। জামালগঞ্জ কয়লাক্ষেত্রের ১১.৭ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ১০৫ কোটি ৩০ লক্ষ টন কয়লা সঞ্চিত রয়েছে এবং ৬৪০-১১৫৮ মিটার গভীরতায় বিদ্যমান বিটুমিনাস কয়লার সঞ্চয়কে সি.বি.এম উন্নয়নের উৎকৃষ্ট সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বৃহৎ কয়লাক্ষেত্র, পুরু কয়লাস্তর, পর্যাপ্ত গ্যাস সমৃদ্ধ কয়লার ইঙ্গিত এবং কয়লাস্তর আচ্ছাদনকারী খনিজসমূহের নগণ্য ভেদ্যতার বৈশিষ্ট্য জামালগঞ্জ কয়লাক্ষেত্রের সিবিএম আহরণ সম্ভাবনার প্রধান উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। জাতীয় জ্বালানি নীতিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, জামালগঞ্জে অবস্থিত একটি কয়লাস্তরই ০.৫ ট্রিলিয়ন ঘনফুট পরিমান সি.বি.এম গ্যাস ধারণ করে।

বি.এইচ.পি ইউতাহ ইন্টারন্যাশনাল ইনকরপোরেটেড নামের একটি বহুজাতিক কোম্পানি নববই-এর দশকের শুরুতে জামালগঞ্জ কয়লাক্ষেত্র থেকে সি.বি.এম আহরণের জন্য প্রয়োজনীয় অনুসন্ধান ও বাণিজ্যিক উত্তোলনের চুক্তির প্রস্তাব বাংলাদেশ সরকারের কাছে পেশ করে। এ প্রস্তাবে পাঁচটি কারিগরি পর্যায়ের মাধ্যমে মোট ১৪৬টি কূপ সম্ভাব্য ১৫ বছর সময়কালে খননের মাধ্যমে জামালগঞ্জে সি.বি.এম গ্যাস বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব সন্নিবেশিত হয়। এ প্রস্তাবে বছরে ২,৬০০ কোটি (২৬,০০০ মিলিয়ন) ঘনফুট মিথেন গ্যাস আহরণের বাণিজ্যিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে এ প্রস্তাব আলোচিত হলেও বিষয়টি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণার অভাব এবং সরকারের মন্থর প্রতিক্রিয়া বিনিয়োগ প্রস্তাবকারী প্রতিষ্ঠানকে প্রকল্প বাস্তবায়নে নিরুৎসাহিত করে। তবে বাংলাদেশ সরকার এখনও এ প্রকল্পকে ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে।  [বদরুল ইমাম ও মুশফিকুর রহমান]