কমলাপুর ধর্মরাজিক বৌদ্ধবিহার

বৌদ্ধ ধর্মীয় অনুষ্ঠান: কমলাপুর ধর্মরাজিক বৌদ্ধবিহার

কমলাপুর ধর্মরাজিক বৌদ্ধবিহার ঢাকার প্রথম বৌদ্ধবিহার। ১৯৬০ সালে বিশুদ্ধানন্দ মহাথেরোর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এ বিহার বাংলাদেশের বৌদ্ধদের ধর্মচর্চা, প্রগতি ও জাগৃতির অন্যতম পীঠস্থান। প্রায় দু-দশকেরও বেশি সময় ধরে ঢাকায় অবস্থিত দেশি-বিদেশি বৌদ্ধদের ধর্মীয় কর্মকান্ডের একমাত্র কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত এ ধর্মরাজিক বৌদ্ধবিহার।

১৯৬২ সালে প্রথম একজন বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে থাইল্যান্ডের রাজা ভূমিবল সস্ত্রীক এ বিহার পরিদর্শন করেন। তাঁদের আগমন উপলক্ষে বিহারে নির্মাণ করা হয় একটি প্রার্থনা হল, যার নাম ‘অতীশ দীপংকর প্রার্থনা হল’। এরপর থেকে দেশি-বিদেশি নানা ধর্ম ও বর্ণের সুধীবৃন্দের আগমনে এ বিহারের পরিচিতি ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। ফলে এটি একটি আন্তর্জাতিক কেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। এ বিহারে বহু প্রাচীন ও মূল্যবান বুদ্ধমূর্তি রয়েছে। সেগুলির মধ্যে ১৯৮৪ সালে থাইল্যান্ডের ফরা ধর্মাধিরাজ মহামুনি প্রদত্ত ১০ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট কালো রঙের ব্রোঞ্জের বিশাল বুদ্ধমূর্তি এবং জাপানের প্রখ্যাত ধর্মগুরু ন্যাকায়সা প্রদত্ত ২´-৮´´ উচ্চতাবিশিষ্ট সুবর্ণবর্ণের বুদ্ধমূর্তি উল্লেখযোগ্য।

বিহারের প্রতিষ্ঠা বছরই এখানে স্থাপিত হয় ধর্মরাজিক পালি কলেজ। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর একে কেন্দ্র করে  বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ গড়ে তোলে নানা সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। স্বাধীনতার পরে যুদ্ধাহত ও অসহায় পরিবারের শিশুসন্তানদের জন্য গড়ে তোলা হয় ধর্মরাজিক অনাথালয়। পর্যায়ক্রমে ধর্মরাজিক উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৭২), ধর্মরাজিক কারিগরি বিদ্যালয়, ধর্মরাজিক কিন্ডারগার্টেন (১৯৯৩), ধর্মরাজিক ললিতকলা একাডেমী (১৯৯৫), ধর্মরাজিক সাহিত্য আসর, ধর্মরাজিক নিক্কিউনিয়ানো ক্লিনিক (১৯৯৬) ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানও গড়ে ওঠে।

১৯৯৬ সালে এখানে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ধর্মরাজিক আন্তর্জাতিক উপাসনা হল’। আন্তর্জাতিকমানের এ উপাসনা হলটি ২০০০ সালের ২৯ ডিসেম্বর থাইল্যান্ডের প্রখ্যাত সাধক ফরা সোমদেত মহারাজা মঙ্গলচারিয়ার নামে উৎসর্গ করা হয়। এখানে বাংলাদেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের, বিশেষত ঢাকাবাসী বৌদ্ধদের যাবতীয় ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালিত হয়।  [সুকোমল বড়ুয়া]