ওয়াসা, ঢাকা

ওয়াসা, ঢাকা  ১৮৪৭ সালে নবাব  খাজা আব্দুল গণি নির্মিত চাঁদনীঘাট পানি বিশুদ্ধকরণ প্ল্যান্টের মাধ্যমে ঢাকা শহরে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ শুরু হয়। ঊনিশ শতকের পঞ্চাশ-এর দশকে বৃহদাকারে ঢাকা নগরীতে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও স্বাস্থ্যসম্মত পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা শুরু হয়। ১৯২৩ সালে ঢাকা মহানগরীতে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা চালু হয়। ঢাকা শহরের ড্রেনেজ কার্যক্রম ১৯৪৬ সালে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে শুরু হয়। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর সরকার পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের পুনর্ব্যাবস্থা গ্রহণ এবং শহর ও পল্লী অঞ্চলে এই সংক্রান্ত সেবা প্রদানের লক্ষ্যে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (DPHE) সৃষ্টি করে। ১৯৬৩ সালে ঢাকা শহরের পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য একটি আলাদা সংস্থা হিসেবে ঢাকা ওয়াসা সৃষ্টি করা হয়। পরে ঢাকা মহানগরীর পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের দায়িত্ব DPHE থেকে ঢাকা ওয়াসার উপর ন্যস্ত করা হয়। ১৯৮৯ সালের জুন পর্যন্ত ঢাকা ওয়াসার সেবা এলাকা ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার মধ্যেই সীমিত ছিল। ১৯৯০-এর প্রথমদিকে নারায়ণগঞ্জ শহর এলাকার পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশনের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসা গ্রহণ করে। বর্তমানে ঢাকা মহানগরী ও নারায়ণগঞ্জ শহর ঢাকা ওয়াসার সেবা এলাকা হিসেবে পরিচিত। ঢাকা ওয়াসার সমগ্র সেবা এলাকা ১১টি ভৌগোলিক অঞ্চলে বিভক্ত। এর মধ্যে ১০টি অঞ্চল ঢাকা মহানগরীতে এবং ১টি অঞ্চল নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত।

বর্তমানে ঢাকা ওয়াসা দৈনিক ২১০ কোটি লিটার পানির চাহিদার বিপরীতে ১৯৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করছে। এর মধ্যে প্রায় ৮৭ শতাংশ ভূ-গর্ভস্থ পানি এবং ১৩ শতাংশ ভূ-পৃষ্ঠস্থ পানি। ঢাকা ওয়াসা ৫৩৯টি গভীর নলকূপ এবং চারটি পানি শোধনাগারের সাহায্যে পানি সরবরাহ করে থাকে। ঢাকা ওয়াসায় ২৭৪টি ডিজেল চালিত জেনারেটর রয়েছে। গ্রীষ্মকালে পানির চাহিদা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিদ্যুৎ সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। তখন এসব জেনারেটরের সাহায্যে পানি উত্তোলন করে ঢাকা শহরে পানি সরবরাহ করা হয়। এছাড়া ঢাকা ওয়াসা ৩১টি পানির গাড়ী, ৩০টি ট্রলি ও ১১টি ট্রাক্টরের সাহায্যে নগরীতে পানি সংকট দেখা দিলে পানি সরবরাহ করে। বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার ২৮০০০০ গ্রাহক রয়েছে। এর মধ্যে ২৬৮৩৬৪ গ্রাহক মহানগরীতে এবং ১১৬৩৬ গ্রাহক নারায়ণগঞ্জ শহরে। ঢাকা শহরে ১২০৯টি এবং নারায়ণগঞ্জে ৪৩৪টি রাস্তার কল আছে।

ঢাকা ওয়াসার মাননিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা বিভাগের মাধ্যমে ভূ-গর্ভস্থ ও ভূ-পৃষ্ঠস্থ উৎস থেকে প্রাপ্ত পানির গুণগতমান নিয়মিত পরীক্ষা করা হয়। ঢাকা ওয়াসা কর্তৃক সরবরাহকৃত ভূ-গর্ভস্থ পানির গুণগতমান রয়েছে এবং সরবরাহ লাইনে সম্ভাব্য দূষণ রোধকল্পে উৎসস্থলে ক্লোরিনেশনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ভূ-পৃষ্ঠস্থ পানি পরিশোধনের পর সরবরাহ লাইনে প্রবেশ করানোর পূর্বে ভূ-গর্ভস্থ পানির ন্যায় ক্লোরিনেশন করা হয়। প্রতিমাসে গভীর নলকূপের পানির আর্সেনিক এবং টকসিক যেমন ক্রোমিয়াম, ক্যাডামিয়াম, সীসা, দস্তা, পারদ ও এলুমিনিয়ামের মাত্রা পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া এমোনিয়া, নাইট্রেট, ফসফেট, সালফেট, বিওডি এবং সিওডি-র মাত্রা পরীক্ষা করা হয়। পাশাপাশি পানি শোধনাগারে ব্যবহূত নদীর পানির ক্ষেত্রে ৩ মাস অন্তর এই সকল পরীক্ষা করা হয়।

কোনো নির্দিষ্ট সময়ে মোট উৎপাদিত পানির পরিমাণ থেকে যে পরিমাণ পানির বিল করা হয় তা বাদ দিয়ে অবশিষ্ট যে অংশটি থাকে তা হলো সিস্টেম লস। পানির লাইনে লিকেজ ও নষ্ট মিটারসহ অন্যান্য কারণে যে লস হয় তাকে বলে কারিগরি সিস্টেম লস এবং অবৈধ সংযোগ ও দুর্বল বিল পদ্ধতিসহ বিভিন্ন কারণে সৃষ্ট লসকে বলা হয় প্রশাসনিক সিস্টেম লস। সিস্টেম লস ঢাকা ওয়াসার জন্য একটা বড় সমস্যা। রাজস্ব বিল ও আদায় কার্যক্রম চুক্তিভিত্তিক ইজারাদানের কারণে পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার পানি উৎপাদন ও বিল অনুসারে মোট সিস্টেম লস দাঁড়ায় ৩৫ শতাংশ।

প্রায় এক শতক পূর্বে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা চালু করা হয় এবং পর্যায়ক্রমে এর উন্নতি সাধিত হয়। সম্পদের অপ্রতুলতার কারণে মিরপুর, মোহাম্মদপুর (অংশবিশেষ), শ্যামলী, কল্যাণপুর ও উত্তরা এখনো পয়ঃনিষ্কাশনের বাইরে রয়েছে। এই সকল এলাকার পয়ঃনিষ্কাশন উন্নয়নের একটি মহাপরিকল্পনা প্রণীত হচ্ছে। বর্তমানে ঢাকা নগরীতে ১টি পয়ঃশোধনাগার, ২৯টি পয়ঃলিফট স্টেশন, ৮৮১.০২ কিলোমিটার পয়ঃনিষ্কাশন লাইন ও ৬০২৭৭ টি পয়ঃসংযোগ রয়েছে।

১৯৮৯ সালে সরকারি আদেশে ড্রেনেজ কার্যক্রম ঢাকা ওয়াসার উপর ন্যস্ত হয়। ১৯৪৬ সাল থেকে এপর্যন্ত নির্মিত ড্রেনেজ অবকাঠামো হলো ১. স্টর্ম ওয়াটার লাইন (৪৫০ মি ব্যাস থেকে ৩০০০ মিমি) ২৯০ কিলোমিটার, ২. বক্স কালভার্ট ৯ কিলোমিটার, ৩. উম্মুক্ত খাল ৬৫ কিলোমিটার, ৪. স্থায়ী পানি নিষ্কাশন পাম্পিং স্টেশন ২টি, ৫. কল্যাণপুর ২০ ঘনমিটার/সে. ক্ষমতাসম্পন্ন, ৬. ধোলাইখাল ২২ ঘনমিটার/সে. ক্ষমতাসম্পন্ন এবং ৭. পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাধীন এলাকা ১৬০ বর্গ কিলোমিটার। [তাকসিম এ খান]