উদ্ভিদজাত ভেষজ

উদ্ভিদজাত ভেষজ (Herbal Medicine)  বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক রোগ বা অসুস্থতার চিকিৎসা, উপশম ও ব্যবস্থাপনায় এবং মানুষ ও জীবজন্তুর বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ ক্ষতের চিকিৎসায় ব্যবহূত উদ্ভিদ থেকে তৈরি ঔষধ। এগুলি চূর্ণ, পেস্ট, তরল, ক্বাথ, নির্যাস বা স্বাভাবিক উৎপাদ থেকে তৈরি করা হয়। এ ছাড়া এগুলিতে আরও থাকে কিছু নিষ্ক্রিয় বস্ত্ত বা নিরপেক্ষ উপাদান। এ উদ্ভিজ্জ ভেষজে থাকে রোগ নিবারক বা ক্ষত নিরাময়ী কার্যকর উপাদান।

উদ্ভিজ্জ ভেষজ বিভিন্ন বিধিসম্মত মাত্রায় তৈরি ও বিক্রি হয়, যেমন তরল (সালসা, ক্বাথ, নির্যাস, তৈল-মিশ্রণ, কzুলকুচি), কঠিন (টুকরো, চূর্ণ, বড়ি ইত্যাদি), আধা-কঠিন (পেস্ট, মলম, ক্রিম), এবং গ্যাসীয় (বাষ্পীয় শ্বসন দ্রব্য, ধোঁয়া ও সুগন্ধি ধূপ)। এসব ঔষধ দেহের বাইরে বা খাবার জন্য উভয় ধরনেই ব্যবহূত হয়; কিন্তু শিরার মধ্য দিয়ে ভেষজের ইনজেকশন দেওয়া যায় না। এগুলি যথাযথ শোধিত নয় বলেই ইনজেকশন হিসেবে ব্যবহার্য নয়। সাধারণত উদ্ভিজ্জ ঔষধ তৈরিতে স্থানীয় প্রযুক্তি ব্যবহূত হয়। আধুনিক প্রযুক্তি এবং ঔষধ প্রস্ত্ততের যন্ত্রপাতি উদ্ভিজ্জ ভেষজ তৈরীতে এখন ব্যবহূত হচ্ছে।

বাংলাদেশে উদ্ভিজ্জ ঔষধ বিকল্প ঔষধ হিসেবে সরকারিভাবে স্বীকৃত এবং অনেকগুলি প্রতিষ্ঠান যেমন, সাধনা ঔষধালয়, শক্তি ঔষধালয়, হামদর্দ ইত্যাদি বাণিজ্যিকভাবে তৈরি ও বাজারজাত করছে। বাংলাদেশে উদ্ভিজ্জ ভেষজের বাণিজ্যিক উৎপাদন দুটি স্বীকৃত ঐতিহ্যিক পদ্ধতিতে নিষ্পন্ন হয়। ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক। অশোধিত ধরনের কিছু উদ্ভিজ্জ ভেষজ গ্রামাঞ্চলে দেশিয় চিকিৎসায় ব্যবহূত হয়ে থাকে। সাধারণ জনগোষ্ঠী, বিশেষত গ্রামাঞ্চলের মানুষদের মধ্যে সব ধরনের উদ্ভিজ্জ ভেষজেরই গ্রহণযোগ্যতা যথেষ্ট ব্যাপক। কোনো কোনো রোগের ক্ষেত্রে উত্তম ফলপ্রদ হিসেবে এগুলির সুখ্যাতি রয়েছে। উদ্ভিজ্জ ভেষজ চিকিৎসকদের বলা হয় হেকিম (ইউনানি চিকিৎসক), কবিরাজ (আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক) এবং হাতুড়ে। সম্প্রতি বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) উন্নয়নশীল দেশগুলিতে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পর্যায়ে সেবা প্রদানের একটি বিকল্প ধারার চিকিৎসা (Alternative Medicine) হিসেবে উদ্ভিজ্জ ঔষধ ব্যবহারকে স্বীকৃতি দিয়েছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী গোটা পৃথিবীতে প্রায় ১৫০ কোটি লোক বর্তমানে উদ্ভিদ ভেষজ চিকিৎসার সুবিধা গ্রহণ করে।  [আবদুল গনি]