ইউসুফজান, খাজা

ইউসুফজান, খাজা (১৮৫০-১৯২৩)  ঢাকার নওয়াব পরিবারের সদস্য, জন নেতা ও সমাজকর্মী। খাজা মুহম্মদ ইউসুফজান ছিলেন ব্যক্তিগতগুণে ব্রিটিশের দেওয়া নওয়াব উপাধিপ্রাপ্ত।

পারিবারিক প্রথানুযায়ী খাজা ইউসুফজান গৃহশিক্ষকের নিকট আরবি, ফারসি, উর্দু ও ইংরেজি ভাষায় ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। ১৮৮৪ সাল থেকে ১৯২৩ সালে পর্যন্ত ইউসুফজান মনোনীত বা নির্বাচিত উভয় প্রক্রিয়ায় ঢাকা পৌরসভার সদস্য ছিলেন। ১৮৯৭ থেকে ১৯১৬ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন পৌরসভার সভাপতি ও সহসভাপতি (সহসভাপতি ১৯০১ থেকে ১৯০৫ সাল পর্যন্ত)। তিনি ১৮৯৬ থেকে ১৯০৫ পর্যন্ত ঢাকা জেলা বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯২১ থেকে ১৯২৩ সালে তিনি পর্যন্ত জেলা বোর্ডের সভাপতির পদও অলংকৃত করেছেন। তাঁর প্রচেষ্টায় ঢাকায় পানীয়-জলের কল এবং পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয়। ১৯০৭ সাল থেকে বহুদিন যাবৎ খাজা মুহম্মদ ইউসুফ ঢাকা বিভাগের অধীন পৌরসভাসমূহের পক্ষে পূর্ববঙ্গ ব্যবস্থাপক সভার সদস্য ছিলেন। তিনি দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে অবৈতনিক ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

ঢাকার মুসলমানদের সংগঠিত করার জন্য ১৮৮৩ সালে নওয়াব ইউসুফ মোহামেডান অ্যাসোসিয়েশন গঠন করেন। বঙ্গবিভাগ কার্যকর হওয়ার দিনে (১৬ অক্টোবর ১৯০৫) নওয়াব খাজা সলিমুল্লাহএর উদ্যোগে ঢাকায় নর্থব্রুক হলে এতদঞ্চলের মুসলমানদের নিয়ে যে সভা হয়, তাতে খাজা ইউসুফের পূর্বোক্ত সংগঠনটি পুনর্গঠিত হয়ে বাংলার মুসলমানদের প্রথম রাজনৈতিক প্লাটফর্ম ‘মোহামেডান প্রভিনসিয়াল ইউনিয়ন’ গঠিত হয়। খাজা ইউসুফ উক্ত সংগঠনের সেক্রেটারি নির্বাচিত হন। ১৯১০ সালের ১৬ অক্টোবর ঢাকায় অনুষ্ঠিত প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সভায় খাজা ইউসুফ সভাপতিত্ব করেন। বঙ্গবিভাগ রদের কারণে ১৯১১ সালের ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় মুসলমানদের পক্ষ থেকে আয়োজিত ক্ষোভপ্রকাশ সভায় তিনি সভাপতিত্ব করেন। তিনি অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ, বেঙ্গল ল্যান্ড হোল্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন-এর কার্যনির্বাহি কমিটি, ইস্ট ইন্ডিয়া অ্যাসোসিয়েশন-লন্ডন, ঢাকা মিটফোর্ড হাসপাতালের কার্যনির্বাহী কমিটি, জগন্নাথ কলেজের গভর্নিং বডি, ঢাকা মাদ্রাসা কার্যনির্বাহী কমিটি, নর্থব্রুক হল ও লাইব্রেরির কার্যনির্বাহী কমিটি, কাজী নিয়োগের স্থায়ী কমিটি, ঢাকা অরফানেজ এবং সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানা ব্যবস্থাপনা কমিটি, লুনাটিক অ্যাসাইলাম (ঢাকা) এবং আহসানুল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল কমিটির সদস্য ছিলেন। এ ছাড়াও তিনি ঢাকা লেডী ডাফরিন হাসপাতাল ম্যানেজিং কমিটির সেক্রেটারি ও ঢাকা সেন্ট্রাল জেলের ভিজিটর ছিলেন।

জনসেবার স্বীকৃতিস্বরূপ ইউসুফজানকে ব্রিটিশ সরকার ১৯০৩ সালে সার্টিফিকেট অব অনার, ১৯০৪ সালে খানবাহাদুর এবং ১৯১০ সালে নওয়াব উপাধিতে ভূষিত করেন। তাঁর কর্মবহুল জীবনের সম্মানে ঢাকা পৌরসভা ১৯১৩ সালে ঢাকার নয়াবাজার এলাকায় একটি আধুনিক মার্কেট নির্মাণ করে। খাজা ইউসুফজানের মৃত্যু ১৯২৩ সালের ৮ নভেম্বর। বেগম বাজারে নওয়াবদের পারিবারিক গোরস্তানে তিনি সমাহিত রয়েছেন।  [মোহাম্মদ আলমগীর]