আবর্জনা ব্যবস্থাপনা

আবর্জনা ব্যবস্থাপনা (Garbage Management)  বর্জ্যপদার্থ বা গৃহস্থালির জঞ্জাল অপসারণ ব্যবস্থাপনা। সাধারণভাবে আবর্জনা বলতে গৃহস্থালির কঠিন জঞ্জাল বোঝায় যাতে আছে দৈনন্দিন গৃহস্থালি কর্মকান্ডের ফলে উৎপন্ন কয়েক প্রকারের অবাঞ্ছিত বস্ত্ত। হোটেল, রেস্টুরেন্ট, অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি বাণিজ্যিক উৎস থেকেও একই ধরনের আবর্জনা উৎপন্ন হয় যেগুলিকে বাণিজ্যিক বর্জ্য বলে। তৃতীয় প্রকারের বর্জ্য শিল্পক্ষেত্র থেকে উৎপন্ন বর্জ্য, যেগুলির ধরন কারখানার বৈশিষ্ট্যের নিরিখে নিরূপিত হয়। বাংলাদেশে আবর্জনা বলতে প্রধানত শহরাঞ্চলের আবর্জনাই বোঝায়, কেননা গ্রামাঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবস্থা এমন যে, সেখানে দৈনন্দিন গৃহস্থালি কর্মকান্ড থেকে শহরাঞ্চলের মতো আবর্জনা সৃষ্টির অবকাশ খুবই কম।

শহরে গৃহস্থালির ও বাণিজ্যিক উৎস থেকে সৃষ্ট বর্জ্য অপসারণ করে নগর কর্তৃপক্ষ, কিন্তু শিল্পবর্জ্য শিল্প-কারখানার আশেপাশে ফেলা হয় বা নিকটবর্তী জলাশয়ে ঢালা হয়। যদিও পরিবেশের প্রতি কোনো ঝুঁকি সৃষ্টি না করেই শিল্পবর্জ্য অপসারণ করা উচিত, তবু প্রায়শই এ নিয়ম যথাযথভাবে পালিত হয় না বলে কলকারখানার দূষণ বর্তমানে পরিবেশের জন্য একটি বড় ধরনের ঝুঁকি হয়ে উঠেছে।

রাজধানী ঢাকায় উৎপন্ন নগর-বর্জ্যের উপাদানগুলি বাংলাদেশের অন্যান্য শহর-নগরের বর্জ্যের প্রায় অনুরূপ। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে,  ঢাকা শহরের গৃহস্থালি বর্জ্যে থাকে খাদ্যদ্রব্যের উচ্ছিষ্ট প্রায় ৮০%, কাচ ও বিভিন্ন ধাতব পদার্থ ১০%,  কাগজ ও পলিথিন ৭% ও কাপড় ১.৫%। বাণিজ্যিক বর্জ্যের উপাদানগুলিও প্রায় অভিন্ন, এক্ষেত্রে খাদ্যদ্রব্য প্রায় ৮৫%, কারণ এগুলি আসে বড় বড় হোটেল রেস্টুরেন্টসহ ফুটপাথে ও রাস্তাঘাটে বিক্রিত বিচিত্র ধরনের খাদ্য উপাদান থেকে। অন্যদিকে কাচ ও ধাতব বর্জ্যের পরিমাণ অপেক্ষাকৃত কম, প্রায় ৫.৫%।

প্রায় ১৫০ লক্ষ জনসংখ্যা অধ্যুষিত ঢাকা নগরে বর্তমানে দৈনিক প্রায় ২৫০০ মে টন আবর্জনা উৎপন্ন হয়। একইভাবে  চট্টগ্রামখুলনারাজশাহীবরিশাল ও  সিলেট এ পাঁচটি প্রধান শহরেও প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে আবর্জনা জমে। সবগুলি শহরেই লোকালয়ের নিকটবর্তী এলাকায় জমি ভরাটের জন্য আবর্জনা ফেলার ফলে জনস্বাস্থ্য সমস্যা ও পরিবেশে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

নগরীর আবর্জনা থেকে বায়োগ্যাস উৎপাদনের সম্ভাবনা পরীক্ষার জন্য সম্প্রতি ঢাকায় BCSIR গবেষণাগারে গবেষণা চালিয়েছে। গবেষণার ফলাফলের ভিত্তিতে ঢাকার নিকটবর্তী সায়েদাবাদে বায়োগ্যাস উৎপাদনের একটি পাইলট প্রজেক্ট গ্রহণ করা হয়েছে। এ পাইলট প্রজেক্ট থেকে নগরীর গৃহস্থালি ও বাণিজ্যিক আবর্জনা বায়োগ্যাস উৎপাদনের কাজে ব্যবহারের উজ্জ্বল সম্ভাবনার ইঙ্গিত মেলে, তবে সেটা ব্যবসাক্ষেত্রে সাশ্রয়ী হবে কিনা তা সতর্কভাবে যাচাই এবং এ ধরনের প্রকল্প পরিচালনার জন্য একটি কার্যকর কর্মকৌশল নির্ধারণও প্রয়োজন। ব্যাচটাইপ ডাইজেস্টারে আবর্জনা থেকে প্লাস্টিক, কাচ, ধাতু ইত্যাদি উপাদান পৃথকীকরণসহ অধিকতর কার্যকর ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের দ্বারা পচনপ্রক্রিয়া উন্নত করার ব্যবস্থা রাখতে হবে। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিতে এ প্রক্রিয়াটি মূলত হস্তচালিত হওয়া উচিত, কেননা বিদ্যমান পরিস্থিতিতে স্বয়ংক্রিয়তা একাধারে কঠিন ও স্পষ্টতই ব্যয়বহুল হবে। আবর্জনা সংগ্রহের পর বায়োগ্যাস উৎপাদন কারখানায় আবর্জনা থেকে অপচনশীল উপাদানগুলি পৃথকীকরণে খুব সমস্যাপূর্ণ হতে পারে। কিন্তু প্রতিটি বাসায় আবর্জনা থেকে প্লাস্টিক, কাচ, ধাতব বর্জ্য ইত্যাদি অপচনশীল পদার্থ আলাদা করার জন্য সম্পদযোজন ও নগরবাসীর সচেতনতা প্রয়োজন। ধারণা করা হয় যে, ক্ষুদ্র কম্যুনিটি পর্যায়ে এ উদ্যোগে বেসরকারি খাতের সংশ্লিষ্টতা ফলপ্রসূ হতে পারে, তবে সেজন্য সতর্কভাবে লাভ-লোকসান বিশ্লেষণ এবং একটি পরিচালনা কৌশল প্রয়োজন।  [জিয়া উদ্দিন আহমেদ]

আরও দেখুন বিষাক্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্য