আইনি সহায়তা

আইনি সহায়তা  আদালতে মামলার ব্যয় নির্বাহে অসমর্থ কোনো ব্যক্তিকে তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্র কর্তৃক প্রদত্ত সহায়তা। কোনো দরিদ্র বাদীকে দেওয়ানি মামলা রুজু করার জন্য প্রয়োজনীয় কোর্ট ফি প্রদান থেকেও আদালত অব্যাহতি দিতে পারে, যদি আদালতের কার্যবিবরণীতে ওই ব্যক্তিকে কপর্দকহীন বলে উল্লেখ করা হয়। একটি মামলা গঠন ও রুজু করতে এবং মামলায় নিয়োজিত আইনজীবীর ফিস প্রদানে বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় হয়। অবশ্য মামলায় বড় রকমের দাবি না থাকলে কোর্ট ফি প্রদানে মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয় হয় না। ১৯৯৪ সালের ১৮ জানুয়ারি জারীকৃত একটি সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সর্বপ্রথম দরিদ্র মোকদ্দমাকারীকে আইনি সহায়তা দানের উদ্যোগ নেয়া হয়। এ প্রজ্ঞাপন বলে প্রতিটি জেলায় জেলা ও দায়রা জজকে চেয়ারম্যান করে একটি আইনি সহায়তা কমিটি গঠিত হয়। এ কমিটি দরিদ্র মোকদ্দমাকারীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে আইনি সহায়তা দানের যোগ্য মনে করলে আইনজীবীর ফি প্রদানের মাধ্যমে আইনি সহায়তা দিয়ে থাকেন। ১৯৯৭ সালের ১৯ মার্চ জারীকৃত একটি সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকার একটি জাতীয় লিগ্যাল এইড কমিটি গঠন করে এবং জেলা লিগ্যাল এইড কমিটিগুলোকে পুনর্গঠন করা হয়। এ প্রজ্ঞাপনে জাতীয় কমিটিকে জেলা কমিটির কার্যাবলির সমন্বয় ও তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব প্রদান করা হয়।

আইনি সহায়তা প্রদান কার্যক্রম সুসংহত করার লক্ষ্যে ২০০০ সালে প্রণীত হয় লিগ্যাল এইড অ্যাক্ট। এ আইনে একটি জাতীয় আইনি সহায়তা প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ গঠনের ব্যবস্থা রাখা হয়। এ আইনি সহায়তা কর্তৃপক্ষ পরিচালনার দায়িত্ব ন্যস্ত হয় আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীকে চেয়ারম্যান করে গঠিত একটি জাতীয় ব্যবস্থাপনা বোর্ডের ওপর। জাতীয় ব্যবস্থাপনা বোর্ডের কার্যাবলির অন্তর্ভুক্ত রয়েছে জাতীয় আইনি সহায়তা প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের নীতিমালা প্রণয়ন, জেলা কমিটিগুলোর কার্যাবলির তত্ত্বাবধান এবং জেলা কমিটি কর্তৃক বাতিলকৃত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পেশকৃত আপিলের শুনানি গ্রহণ। এ আইনে প্রতিটি জেলায় জেলা ও দায়রা জজকে চেয়ারম্যান করে জেলা কমিটি গঠনের বিধান রয়েছে। জেলা কমিটির দায়িত্ব হচ্ছে দরিদ্র ও অসচ্ছল মোকদ্দমাকারীদের আবেদন পরীক্ষা করে আইনি সহায়তা দানের উপযুক্ত প্রার্থীদের অনুমোদন দান। এ আইনে উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়েও লিগ্যাল এইড কমিটি গঠনের বিধান রয়েছে।

আইনি সহায়তা কার্যক্রমের আওতায় জাতীয় ব্যবস্থাপনা বোর্ড  আইনজীবিদের সমন্বয়ে একটি প্যানেল গঠন করে, যারা সুপ্রীম কোর্টে আইনি সহায়তা কার্যক্রমের আওতাধীন মামলা সমূহের পরামর্শ এবং পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন। সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবিদের মধ্যে যাদের ন্যুনতম সাত বছরের  পেশাগত অভিজ্ঞতা রয়েছে তাদের এই প্যানেলে নিয়োগের ব্যবস্থা রাখা হয়। একইভাবে প্রতিটি জেলা কমিটি থেকে আইনজীবিদের সমন্বয়ে একটি প্যানেল গঠন করা হয়, যারা জেলা আদালতে আইনি সহায়তা কার্যক্রমের আওতাধীন মামলা সমূহের পরামর্শ এবং পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন। জেলা আদালতের আইনজীবিদের মধ্যে যাদের ন্যুনতম পাচঁ বছরের পেশাগত অভিজ্ঞতা রয়েছে তাদের এই প্যানেলে নিয়োগের ব্যবস্থা রাখা হয়।  জাতীয় ব্যবস্থাপনা বোর্ড অথবা  জেলা কমিটি তাদের তৈরী প্যানেল থেকে আইনি সহায়তা কার্যক্রমের আওতায় কোনো মামলার প্রয়োজনে, অনুমোদন প্রাপ্ত দরিদ্র ও অসচ্ছল মোকদ্দমাকারীদের পক্ষে আইনজীবি নিয়োগ  দিয়ে থাকে যারা পরামর্শ এবং মামলা পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন। আইনি সহায়তা কার্যক্রমের আওতায় সরকারের ফান্ডের সীমাবদ্ধতার  পরও সংবাদপত্রের এক রিপোর্ট (প্রথমআলো, ২১ মে ২০০৬ ) থেকে জানা যায় যে, ১৯৯৪ সালে শুরু হবার পর থেকে ২২,০০০ ব্যাক্তিকে ফৌজদারি মামলায় এবং ৮,০০০ ব্যক্তিকে দেওয়ানি মামলায় নিম্ন আদালতে আইনি সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এই সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে দরিদ্র নারী, শিশু, এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। সুপ্রিমকোটের্র ৫০০টি মামলায় আইনি সহায়তা কার্যক্রমের আওতায় সাহায্য প্রদান করা হয়। ২০০১ সালের আইনী সহায়তা বিধিমালার ২ নং বিধি মতে  আইনি সহায়তা প্রাপ্তির জন্য নিম্নলিখিত ব্যক্তিগণ অনুমোদন পেতে পারেন:

কোনো মুক্তিযোদ্ধা, যিনি আয় করতে অক্ষম অথবা আংশিকভাবে অক্ষম অথবা চাকুরীহীন  অথবা যার বার্ষিক আয় ৬০০০ টাকার বেশী নয়; বৃদ্ধ ভাতা গ্রহনকারী কোনো ব্যক্তি; ভিজিডি কার্ডের সুবিধা ভোগকারী কোনো মাতা; অবৈধ পাচারের শিকার কোনো নারী অথবা শিশু; এসিড নিক্ষেপের শিকার কোনো নারী অথবা শিশু; আদর্শ গ্রাম কর্মসূচীর অধীনে বরাদ্দকৃত বাড়ী বা জমির  মালিক এমন ব্যক্তি; দরিদ্র বিধবা, স্বামী পরিত্যাক্তা দরিদ্র নারী; আয় করতে অক্ষম কোনো প্রতিবন্ধী ব্যক্তি; আর্থিক অসচ্ছলতার প্রেক্ষিতে নিজের অধিকার রক্ষা এবং চিহ্নিত করতে অক্ষম ব্যক্তি; নিবৃত্তিমূলক আটক আইনে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি, যিনি আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে নিজের অধিকার রক্ষায় অক্ষম; আদালত কর্তৃক বিবেচিত আর্থিকভাবে অক্ষম বা দরিদ্র ব্যক্তি; জেল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বিবেচিত অথবা সুপারিশকৃত আর্থিকভাবে অক্ষম বা দরিদ্র ব্যক্তি; আর্থিকভাবে অক্ষম বা এমন দরিদ্র ব্যক্তি যিনি কোনো সংস্থা কর্তৃক সময়ে সময়ে আইনি সহায়তার আওতাধীন বলে বিবেচিত হন।  [কাজী এবাদুল হক]