অ্যাজোলা

অ্যাজোলা (Azolla)  এক ধরনের ভাসমান ফার্ন (বিভাগ Pteridophyta, বর্গ Salviniales, গোত্র Azollaceae)। অ্যাজোলা দুটি দলে বিভক্ত: Euazolla (trichome কেবল পাতায়) ও Rhizosperma (trichome পাতা ও কান্ডে)। বাংলাদেশে Azolla pinnata দেখা যায়। এটি উষ্ণমন্ডল ও নাতিশীতোষ্ণমন্ডলের সর্বত্র স্বাদুপানির ডোবা, পুকুর, ধানক্ষেত ইত্যাদি বদ্ধ জলাশয়ের সাধারণ উদ্ভিদ। উদ্ভিদ মূল, কান্ড (rhizome) ও পাতা নিয়ে গঠিত। প্রজাতিটি প্রায় ১.৫ সেমি লম্বা, সাধারণত ত্রিভুজাকার। পাতাগুলি চতুষ্কোণী, কান্ডপৃষ্ঠ থেকে উদগত দুটি সারিতে বিন্যস্ত। প্রতিটি পাতা দ্বিখন্ডিত, পৃষ্ঠলতি পুরু ও সালোকসংশ্লেষী এবং বক্ষলতি পাতলা ও বর্ণহীন অথবা অ্যান্মোসায়ানিন এর জন্য লাল হয়। প্রতিটি পত্রকক্ষ থেকে পার্শ্বশাখা গজায়। কান্ড ও শাখার নিচ থেকে বের হয় লোমসহ কয়েকটি অস্থানিক মূল। প্রতিটি পাতার পৃষ্ঠলতি গর্তযুক্ত আর সেগুলিতে থাকে কিছু মিথোজীবী Anabaena azollae (Cyanobacteria বা নীল-সবুজ শৈবাল), একাধিক গণভুক্ত কিছু Eubacteria প্রধানত Azotobacter-এর প্রজাতি। Anabaena azollae হেটারোসিস্টপ্রসূ এবং Nitrogenase উৎসেচকের সাহায্যে লিগুম ব্যাকটেরিয়ার ন্যায় বাতাসের নাইট্রোজেন সংবন্ধনে সমর্থ।

লাল Azolla pinnata, সবুজ A. pinnata, মিথোজীবী Anabaena azollae, A. pinnata-এর পৃষ্ঠীয় দিক, A. pinnata-এর অঙ্কীয় দিক

অ্যাজোলা অঙ্গজ ও যৌন উভয় ধরনের প্রজননেই সক্ষম। অঙ্গজ প্রজননে কান্ডের গোড়ার বয়স্কতম পার্শ্বশাখাটি খন্ডিত হয়ে তা থেকে নতুন উদ্ভিদ জন্মায়। অনুকূল পরিস্থিতিতে উদ্ভিদ দ্বিগুণ হতে সময় লাগে প্রায় ৩ দিন। মুখ্য রেণুধর এ উদ্ভিদ ক্ষুদ্র লিঙ্গধর পর্যায়ের সঙ্গে প্রত্যাবৃত হয়। এতে দু প্রকার স্পোরোকার্প থাকে ক্ষুদ্রাকার মেগাস্পোরোকার্প (স্ত্রী) ও বৃহৎ মাইক্রোস্পোরোকার্প (পুং) এবং এগুলি উষ্ণমন্ডলে শীতকাল বা বসন্তের শুরুতে পার্শ্বশাখার বয়স্কতম (প্রথম) পাতার কক্ষে জন্মে। আলোককাল ও তাপমাত্রা রেণু উৎপাদন প্রভাবিত করে। মেগাস্পোরোকার্প ও মাইক্রোস্পোরোকার্প সর্বদা সজোড় ও পাশাপাশি থাকে।

সারা বছরই পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যাজোলার চাষ সম্ভব। এজন্য ১০০ সেমি গভীর ও আলোময় একটি পুকুরই যথেষ্ট। প্রতিদিন হেক্টর প্রতি ১০ কেজি ইউরিয়া ও ৫ কেজি মিউরেট অব পটাশের দ্রবণ পানিতে প্রয়োগে হেক্টর প্রতি ১.০-১.৫ টন তাজা অ্যাজোলা ফলানো যায়। পানিতে প্রতিদিন তরল সারের পরিবর্তে পাতায় সার স্প্রে করা অধিকতর ফলপ্রসূ।

অ্যাজেলা নানাভাবে ব্যবহার্য। International Network in Soil Fertility and Fertilizer Evaluation for Rice বাংলাদেশসহ ১০টি দেশের ৩৭টি স্থানে পরীক্ষা চালিয়ে দেখেছে যে ধান রোপার আগে বা পরে ক্ষেতে অ্যাজোলার একটি ফসল (হেক্টর/প্রায় ১৫ টন) ছড়ালে হেক্টর প্রতি ৩০ কেজি ইউরিয়া প্রয়োগের সমান ফল পাওয়া যায়। শুকনো এবং কোম্পোস্ট অ্যাজোলা জৈব সার হিসেবে ব্যবহার্য। অ্যাজোলা মাটিতে অন্যান্য পুষ্টিদ্রব্য যোগায়, মৃৎবিন্যাসের উন্নতি ঘটায়, এবং ধানের সঙ্গে জন্মালে জমি থেকে জলীয় বাষ্পায়ন হ্রাস ও আগাছার উৎপাত কমায়। এতে ২৪.৪-৩১.৪% প্রোটিন, ৪.১-৫.৮% চর্বি, ১১-২১% অাঁশ থাকার দরুন মাছ, হাঁস-মুরগি এবং গবাদি পশুরও উত্তম খাদ্য। শতকরা দু ভাগ অ্যাজোলার গুঁড়া খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে দিলে মুরগির ডিমের উৎপাদন শতকরা চার ভাগ বৃদ্ধি পায়, কুসুমের রং হয় কমলা। এটি বর্জ্যপানি শোধনেও কার্যকর। A. filiculoides ভূগর্ভস্থ পানির আর্সেনিক দূষণের একটি জৈব নির্দেশক। অ্যাজোলা মিথেন উৎপাদনের উপকরণও হতে পারে।  [আবদুল আজিজ]

আরও দেখুন জলজ উদ্ভিদ